ময়মনসিংহে ২৪০ ভারী যানবাহনের অস্বাভাবিক রেজিস্ট্রেশন

প্রকাশ : ১২ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ময়মনসিংহ ব্যুরো

ময়মনসিংহের নেত্রকোনায় ২৪০টি ভারী যানবাহনের অস্বাভাবিক রেজিস্ট্রেশনের ঘটনায় দায়ের হওয়া তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এতে দায়সারা তদন্তে অভিযোগটি ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি’র (বিআরটিএ) দালালদের তৈরি করা ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে চট্টগ্রাম, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ২৪০টি বিভিন্ন শ্রেণির যানবাহনকে ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন দেন ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা বিআরটিএ সার্কেলের তৎকালীন সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) শহীদুল আযম, যা রহস্যজনক এবং অস্বাভাবিক বলে দাবি সচেতন মহলে। অভিযোগ উঠেছে, প্রয়োজনীয় ইনভয়েজ, বিল অব এন্ট্রি, বিল অব লেডিং, কমার্সিয়াল ইনভয়েজ, এলসিএ, প্যাকিং লিস্ট, আমদানিকারকের টিটিও সেল রিসিটসহ ইত্যাদি কাগজপত্র জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করে এসব যানের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়েছে। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে কয়েক কোটি টাকা। এ ঘটনায় ২০২২ সমালের নভেম্বর মাসে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বাংলাদেশ সড়ক ও পরিবহন কর্তৃপক্ষ। পরে ঘটনার দায়সারা তদন্ত করে ২০২২ সালের ১৩ নভেম্বর একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন সংশ্লিষ্ট উপসচিব হেমায়েত উদ্দিন। কিন্তু ওই প্রতিবেদনে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি বলে দাবি করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তার প্রশ্ন, হঠাৎ করেই কেন শহীদুল আযমের সময় চট্টগ্রাম, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ২৪০টি বিভিন্ন শ্রেণির যানবাহনকে অস্বাভাবিকভাবে রেজিস্ট্রেশন দেয়া হলো এর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রতিবেদনে উঠে আসেনি। মূলত তদন্ত প্রতিবেদনে অস্বাভাবিক এই ঘটনাটিকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে।

বিআরটিএ সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের আগ পর্যন্ত ময়মনসিংহ বিআরটিএ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালকরা অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে নেত্রকোনা কার্যালয়ের দায়িত্ব পালন করতেন। ফলে ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করেন সহকারী পরিচালক শহীদুল আযম।

একটি সূত্র আরো জানান, বিআরটিএ ডিজিটালাইজড হওয়ার পর ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ২০ বছরে নেত্রকোনা কার্যালয় থেকে ভারী যানবাহন ট্রাক নেত্রকোনা-ট-১১ সিরিয়ালের রেজিস্ট্রেশন হয়েছে ১০টি। কিন্তু ২০১৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত দুই বছরে একই সিরিয়ালের যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন হয়েছে ৪৯টি। এছাড়া মিনি ট্রাক নেত্রকোনা-ড-১১ সিরিয়ালের ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ২০ বছরে ৫টি রেজিস্ট্রেশন হলেও ২০১৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত মাত্র দুই বছরে রেজিস্ট্রেশন হয়েছে ৭৮টি যানের। এছাড়াও ২০ বছরে পিকআপ নেত্রকোনা-ন-১১ সিরিয়ালের রেজিস্ট্রেশন হয়েছে ৬টি। কিন্তু শহীদুল আযমের দুই বছরের রেজিস্ট্রেশন পেয়েছে ৮৪টি। মাইক্রোবাসসহ অন্যান্য স্পেশাল পারপাসের নেত্রকোনা-শ-১১ সিরিয়ালের যানবাহন ১৯৯৬ সাল থেকে ২০ বছরে তিনটি রেজিস্ট্রেশন হলেও শহীদুল আযমের দুই বছরে হয়েছে ৯টি। ট্যাংকলরি নেত্রকোনা-ঢ-৪১ সিরিয়ালের যানবাহন ২০ বছরে ৪টি রেজিস্ট্রেশন হলেও ২০১৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত হয়েছে ২১টি। এই হিসাবে ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ২০ বছরে ২৮টি ভারী যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন হলেও ২০১৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত মাত্র দুই বছরে রেজিস্ট্রেশন পেয়েছে ২৪০টি। আর এই সবগুলো গাড়ির মালিক চট্টগ্রাম, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের স্থায়ী বাসিন্দা। অথচ রহস্যজনক কারণে তাদের গাড়িগুলোর রেজিস্ট্রেশন হয়েছে নেত্রকোনায়। তবে তদন্ত প্রতিবেদনে গাড়ীর মালিকদের নেত্রকোনা এলাকার অস্থায়ী বাসিন্দা দেখানো হয়েছে, যা কাল্পনিক এবং মিথ্যাচার বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা। এছাড়া শহীদুল আযম ময়মনসিংহে কর্মরত থাকা অবস্থায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিআরটিএ ময়মনসিংহ অফিসের সরকারি বরাদ্দকৃত বাজেটের টাকা গোপনীয়ভাবে উত্তোলন করে আত্মস^াৎ করেছে। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের হয় বলেও জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। তবে অভিযোগ বিষয়ে জানতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও নেত্রকোনার সাবেক সহকারী পরিচালক শহীদুল আযমের বক্তব্য জানা যায়নি। তবে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নেত্রকোনা কার্যালয়ের বর্তমান সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) বলেন, ঘটনাটি অনেক আগের। এই বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা ভালো বলতে পারবেন। শুনেছি পূর্বের নথিপত্র সংরক্ষিত আছে। এ বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা ও কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট উপসচিব মো: হেমায়েত উদ্দিন বলেন, তদন্তে যা পেয়েছি তা প্রতিবেদনে এসেছে। জাল-জালিয়াতির প্রমাণ তদন্তে পাইনি।