ঢাকা ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সংসদে সাবের হোসেন চৌধুরী

বন্ধ করা হয়েছে ১ হাজার ১৮০টি ইটভাটা

বন্ধ করা হয়েছে ১ হাজার ১৮০টি ইটভাটা

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী জানিয়েছেন, বর্তমানে সারাদেশে মোট ইটভাটার সংখ্যা ৬ হাজার ৮৭৬টি। এর মধ্যে বেশ কিছু ইটভাটা অবৈধ, যাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান। বিগত ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ইটভাটার বিরুদ্ধে ২ হাজার ৩৩৮টি অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে ৪ হাজার ৪৩৬ টি মামলা দায়ের করে ৯৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও ১১১ কোটি ৫৫ লাখ ৩৩ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে এবং অবৈধ ১ হাজার ১৮০টি ইটভাটা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।গতকাল এমপি ননী গোপাল মণ্ডলের এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী এ তথ্য জানান।

মন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেবার পরপরই পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ১০০ কর্মদিবসের অগ্রাধিকার কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে, যেখানে পরিবেশ দূষণ বোধে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অবৈধ, অনুমোদনহীন ও পরিবেশ দূষণকারী ইটভাটা বন্ধে কার্যক্রম নেয়া হয়েছে। উক্ত অগ্রাধিকার কর্মপরিকল্পনার আওতায় ন্যূনতম ৫০০টি বায়ুদূষণকারী অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনাসহ বায়ুদূষণের অন্যান্য উৎস চিহ্নিত করে যথাযথ কার্যক্রম নেবার নির্দেশনা রয়েছে। কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে পরিবেশ অধিদপ্তর বিগত ২০২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি থেকে দেশব্যাপী ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু করা হয়েছে। এর আওতায় গত ৩০ মে পর্যন্ত সারাদেশে মোট ১৬৮টি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ৫৭৯টি অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে প্রায় ১৫ কোটি ৭ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে এবং ২৪৯টি ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া, পরিবেশ অধিদপ্তরের নিয়মিত মোবাইল কোর্ট ও এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রমে অবৈধ ইটভাটাকে গুরুত্ব দিয়ে অভিযান পরিচালিত হ”েছ।

সাবের হোসেন চৌধুরী আরো বলেন, ইট প্র¯‘ত ও ভাটা ¯’াপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ (সংশোধিত ২০১৯)- এর আলোকে সরকার বায়ুদুষণ রোখ ও কৃষি জমির মাটি ব্যবহার পর্যায়ক্রমে কমানোর উদ্দেশ্যে সড়ক ও মহাসড়ক ব্যতীত সব সরকারি নির্মাণ, মেরামত ও সংস্কারকাজে ইটের বিকল্প হিসেবে পরিবেশবান্ধব ব্লক ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ব্লকের উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ানোর জন্য বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বেষ্ট (বাংলাদেশ এনভাইরামেন্টাল সাসটেনেবলিটি প্রজেক্ট, বিইএসটি) প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে স্বল্প সুদে ঋণের মাধ্যমে প্রণোদনা কার্যক্রম নেয়া হয়েছে।

সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের এক প্রশ্নের জবাবে সাবের হোসেন চৌধুরী জানান, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার বিশদ পরিকল্পনা এবং কৌশল প্রণয়নের মাধ্যমে নিজস্ব এবং আন্তর্জাতিক অর্থায়নে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যা”েছ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করে জলবায়ু সহিষ্ণু জাতি হিসেবে নিজেদের অব¯’ান সুদৃঢ় করার জন্য বাংলাদেশ সরকার ইউএনএফসিসির আওতায় সহযোগিতা পেয়ে থাকে।

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিযোজনমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা ২০২৩-২০৫০ বা ন্যাশানাল এডাপটেশন প্লাণ (এনএপি) আওতায় আটটি সেক্টরের ১১টি ক্লাইমেট স্ট্রেস এরিয়ায় ১১৩টি ইনটারভেনশন ষনাক্ত করা হয়েছে, যা বাস্তবায়নের জন্য ২০২৩-২০৫০ সালের মধ্যে মোট ২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থায়ন প্রয়োজন হবে। এছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে ন্যাশানালিটি ডিটারমাইন্ড কনট্রিবিউশন লক্ষ্যমাত্রা পুরোপুরি বাস্তবায়নের জন্য আমাদের ১৭৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন হবে। আগামীতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কার্যক্রম বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সব সহযোগিতা এনএপি ও এনডিসির ওপর ভিত্তি করেই আসবে।

মন্ত্রী বলেন, এ পর্যন্ত ৫১৭ দশমিক ৩৬ মিলিয়ন ডলার সহায়তা ওঋণ পেয়েছে। এগুলো হলো : গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড থেকে সাতটি প্রকল্পের জন্য ১৬৮ দশমিক ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আর্থিক অনুদান ও ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ সহযোগিতা পেয়েছে। এছাড়া লিয়েস্ট ডেভেলপমেন্ট কান্ট্রিরিজ ফান্ড সাতটি প্রকল্পের জন্য ৩৪ দশমিক ৪১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, এডাপটেশন ফান্ড থেকে একটি প্রকল্পের জন্য ৯ দশমিক ৯৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, গ্লোবাল এনভাইরনমেন্ট ফ্যাসিলিটি

থেকে আটটি প্রকল্পের জন্য ২৪ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ক্লঅইমেট ব্রিজ ফান্ড থেকে ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহের প্রচেষ্টায় প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুসারে সম্প্রতি লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড গঠিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত লস অ্যান্ড ড্যামেজের জন্য আন্তর্জাতিক তহবিল থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য বাংলাদেশ জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যা”েছ।

এম আবদুল লতিফের অপর প্রশ্নের জবাবে সাবের হোসেন চৌধুরী জানান, বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় ‘মাল্টিসেকটারেবল অ্যাকশন প্ল্যান ফর সাসটেইনেবল প্লাস্টিক ম্যানেজমেন্ট ইস বাংলাদেশ প্রণয়ন করা হয়েছে। সেখানে ২০৩০ সাল নাগাদ ৫০ শতাংশ ভার্জিন ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার কমানো, ২০২৬ সালের মধ্যে ৯০ শতাংশ সিঙ্গেল ইউজ প্লঅস্টিক ব্যবহার বন্ধ করা, ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ পূণ চক্রায়ন নিশ্চিত করা, ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ উৎপাদন কমানোর পরিকল্পণা নেয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত