রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত
চোরাই গরু বাণিজ্যে দুই ইউপি চেয়ারম্যান
টোলের নামে চাঁদাবাজি
প্রকাশ : ১৪ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
এএইচ সেলিম উল্লাহ, কক্সবাজার
কক্সবাজারের রামু ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মিয়ানমারের চোরাই গরু বানিজ্যে জড়িয়ে পড়েছে দুই ইউপি চেয়ারম্যান। পাশাপাশি ইউনিয়ন ও সীমান্ত লাগোয়া হওয়ায় এই দুই ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে গড়ে উঠেছে একাধিক সিন্ডিকেট। যারা পথে পথে মিয়ানমার থেকে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে দেশে আনা গরু থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা অবৈধ উপায়ে রোজগার করছে। চাঁদাবাজির এই ঘটনা নিয়ে দিন দিন এলাকার পরিস্থিতি ঘোলাটে হচ্ছে। হামলা, মামলা এমনকি খুনের ঘটনাও ঘঠেছে। দীর্ঘ এক বছরের অধিক সময় ধরে মিয়ানমারের গরু বানিজ্য চলে আসলেও কোরবানী ঈদকে সামনে রেখে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চক্রটি। তবে এই বিষয়ে প্রশাসন কার্যত কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এলাকায়। চাঁদাবাজির এমন পরিস্থিতি রোধ করতে রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী বাসিন্দারা।
জানা গেছে, রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া, মৌলভীরকাটা, জামছড়ি, বালুবাসা, হাজিরকাটা এবং পার্শ্ববর্তী নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের চাকঢালা, আশারতলী, ফুলতলী, কম্বনিয়া, জারুলিয়াছড়ি এলাকার বিভিন্ন সড়ক ও পাহাড়ী পথে প্রতিদিন কয়েকশ গরু মিয়ানমার থেকে আনা হয় গর্জনিয়া ও চাকঢালা বাজারে। পাশাপাশি দেশীয় খামারিরাও গরু নিয়ে আসেন এসব বাজারে। কিন্তু বাজারে আনার আগে বিভিন্ন স্পট থেকে ইউনিয়ন পরিষদের টোকেন সংগ্রহ করতে হয় গরু ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের।
সোম ও বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক বাজারের দিন সীমান্ত এলাকা ঘুরে জানা গেছে, চাঁদাবাজ চক্রের সদস্যরা কাউকে খালি টোকেন আবার কাউকে টাকার অংক লিখে টোকেনের মাধ্যমে প্রতিটি গরু থেকে ৩০০ টাকা করে তোলছেন কচ্ছপিয়া ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোহাম্মদ নুর (ওরফে মাহান্নুর)। স্থানীয়দের অভিযোগ, ইউনিয়ন পরিষদের টোলের নামে এই ধরনের সিন্ডিকেট ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে রয়েছে।
সরেজমিনে রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আবুল কালাম জানান, গত সপ্তায় গর্জনিয়া বাজার থেকে গরু/মহিষ ক্রয়-বিক্রয় রশিদের মাধ্যমে ৩টি গরু ক্রয় করেন বাড়িতে লালন পালনের জন্য। এসব গরু নিয়ে বাড়িতে আসার পথে কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু মো: ইসমাইল নোমানের লোকজন মুরারকাছা এলাকায় প্রতিটি গরু থেকে ৩০০টাকা করে চাঁদা আদায় করেন তার কাছ থেকে।
আবুল কালামের মতো এভাবে প্রতিদিন শত শত খামারী ও গরু ব্যবসায়ী থেকে লাখ লাখ টাকার চাঁদা আদায় করছেন কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু মো: ইসমাইল নোমান এবং নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আবছার ইমনের লোকজন। এই ঘটনায় সম্প্রতি রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে প্রতিকার চেয়ে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। অভিযোগের বিষয়ে রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: রাশেদুল ইসলাম বলেন, কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু মো: ইসমাইল নোমানের বিরুদ্ধে গরু চোরা চালানে জড়িত থাকার অভিযোগ পেয়েছি। কিন্তু প্রমাণ পাচ্ছি না। কারো কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকলে আমাদের দিলে ব্যবস্থা নিতে পারবো।
অভিযোগ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে কচ্ছপিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবু মো.ইসমাইল নোমান অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকার কথা জানিয়ে অভিযোগের প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান।
অন্যদিকে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আবছার ইমন বলেন, বহুদিন আমার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তোলা হচ্ছে। কিন্তু কেউ প্রমাণ করতে পারেনি। আমি এসবের সাথে জড়িত নেই, তা কেউ প্রমাণ করতে পারবে না।
এই বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা চোরাচালানবিরোধী টাস্কফোর্সের সদস্য মো. ইয়ামিন হোসেন জানান, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে চোরাকারবারিরা গরু-মহিষ নিয়ে আসছে। বিজিবির সঙ্গে তাদের গোলাগুলিও হচ্ছে। টাস্কফোর্সের মাধ্যমে আমরা এসব বন্ধের চেষ্টা করছি।
উল্লেখ্য, নিয়ম থাকলেও নাইক্ষ্যংছড়ি ও গর্জনিয়া বাজারেরর কোনো পশুর হাটে টাঙানো হয়নি সরকার নির্ধারিত টোলতালিকা। ফলে পশু কিনতে আসা ক্রেতারা পথে পথে অতিরিক্ত খাজনা দিতে বাধ্য হচ্ছেন। আর অতিরিক্ত টোলের নামে চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে প্রায়ই ক্রেতা-বিক্রেতাদের বাকবিতন্ডার ঘটনা ঘটছে।