আমের মৌসুমে হাঁকডাকে সরব থাকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বিভিন্ন আমের বাজারগুলো। শিবগঞ্জের কানসাট, গোমস্তাপুরের রহনপুর ও ভোলাহাট বাজারে বেশি বেচাকেনা হয় আম। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্রেতারা আসেন বাজারগুলোতে আম কিনতে। কিন্তু এসব বাজারে আমের ওজনে চলে ব্যাপক কারসাজি।
হিসাব অনুযায়ী ৪০ কেজিতে ১ মণ গণনা করা হলেও আম চাষিদের জিম্মি করে ৫০ থেকে ৫৫ কেজিতে মণ ধরে আম কেনেন আড়তদাররা। বাধ্য হয়েই চাষিরা প্রতি মণে ১০ থেকে ১৫ কেজি পর্যন্ত আম দিয়ে থাকেন। চাষিরা জানান, আড়তদারদের কাছে একপ্রকার জিম্মি হয়ে পড়েছে আম চাষিরা। প্রতি মণে ১০ থেকে ১৫ কেজি আম বেশি দিতে হচ্ছে। ফলে ক্ষতি মুখ দেখতে হচ্ছে চাষিদের। প্রতি বছর আমের ওজন নিয়ে এ সমস্যা তৈরি হয়। তবুও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এর কোনো টেকসই সমাধন দেয়া হয় না। জেলার চাষি ও কৃষি সংগঠনগুলো কৃষিমন্ত্রীসহ একাধিক জায়গায় বারবার অভিযোগ দিয়েও এই বিষয়ে কোনো সুরাহা পায়নি। একপর্যায়ে আম বিক্রি করতে বাধ্য হন চাষিরা। এ নিয়েও আছে কৃষি সংগঠনগুলোর ক্ষোভ।
শিবগঞ্জের আমচাষি ইমরান হোসেন বলেন, চাষিরা কষ্ট করে আম উৎপাদন করে। কিন্তু তাদের কষ্টের ফসল আড়তদাররা জিম্মি করে প্রতি মণে ১০ থেকে ১২ কেজি পর্যন্ত বেশি নেন। এটা খুবই দুঃখজনক। স্থানীয় প্রশাসনসহ ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা যারা আছেন, তারা যদি এই বিষয়ে নজর দেন, তাহলে আম চাষিরা উপকৃত হবেন।
ওজনের কারসাজির বিষয়ে কানসাট আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক টিপুর কাছে জানতে চাইলে তিনি আলোকিত বাংলাদেশকে জানান, আমরাও এটি নিয়ে চিন্তিত। জেলার বিভিন্ন আমের বাজারগুলোতে ৪৫ কেজি থেকে শুরু করে ৫৮ কেজি হিসেবে মণ ধরা হচ্ছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের আম সম্পর্কিত সভায় আমাদের সমিতির পক্ষ থেকে ৪৮ কেজিতে মণ নির্ধারণের প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু সে প্রস্তাব এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে বিভিন্ন বাজারে আমের ওজন নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ম্যাংগো ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব আহসান হাবিব বলেন, সারাদেশে আমের ওজন একই রাখতে গত বছর সাবেক কৃষিমন্ত্রীকে লিখিত আবেদন জমা দেওয়া হয়। এই বিষয়ে কোনো সিন্ধান্ত না হওয়ায় গত মাসে আবারও বর্তমান কৃষিমন্ত্রীকে একই বিষয়ে লিখিত আবেদন দেওয়া হয়েছে। তিনি এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেও এখনো কোনো সামাধান হয়নি।
তিনি আরো বলেন, চাষিরা প্রতি মণে ৪০ থেকে ৪৫ কেজিতে আম দিতে রাজি আছে। তারা রাজি থাকলেও জেলার বিভিন্ন বাজারগুলো থেকে আড়তদার, বেপারি ও ফড়িয়া সিন্ডিকেট ৪৮ থেকে ৫২ কেজি মণ হিসেবে আম নিচ্ছে। হিসাব করে দেখা গেছে বাড়তি আমে কৃষকের পকেট থেকে গচ্ছা যাচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জেরই প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। ওজনের কারসাজির বিষয়ে জানতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তার সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।