কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিশেষ অভিযান চালিয়ে একটি জি থ্রি রাইফেল ও পাঁচ রাউন্ড তাজা গুলিসহ আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) গান গ্রুপ কমান্ডার মো. জাকারিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১৫।
র্যাবের দাবি, জি থ্রি রাইফেল নামের বিদেশি এই ভারী আগ্নেয়াস্ত্রটি মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যবহৃত এবং মিয়ানমার থেকে অস্ত্রটি সন্ত্রাসীরা বাংলাদেশে এনেছে। গতকাল সকালে র্যাব-১৫ এর কক্সবাজার কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন র্যাবের অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচএম সাজ্জাদ হোসেন। গ্রেপ্তার মো. জাকারিয়া উখিয়ার বালুখালীর ১০ নম্বর ক্যাম্পের মৃত আলী জোহরের ছেলে। র্যাব ১৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচএম সাজ্জাদ হোসেন জানান, সম্প্রতি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশনের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব গোয়েন্দা সূত্রে তথ্য ছিল ১০ নম্বর ক্যাম্পে সন্ত্রাসীগোষ্ঠী আরসার কতিপয় সদস্য নাশকতার জন্য পার্শ্ববর্তী দেশে হতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্র নিয়ে এসেছে। এ সূত্র ধরে গতকাল ভোরে ১০ নম্বর ক্যাম্পে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে জাকারিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব অধিনায়ক বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জাকারিয়া স্বীকার করেছে সে সন্ত্রাসী সংগঠন আরসার গান গ্রুপ কমান্ডার হিসেবে বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কিলিং মিশনে অংশগ্রহণ করত। মিশনে ব্যবহৃত অস্ত্র পালংখালী ইউনিয়নের ঘাটি বিলে লুকিয়ে রেখেছে। ওই স্থানে অভিযান চালিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশের (মিয়ানমার) আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ব্যবহৃত একটি জি থ্রি রাইফেল ও ৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র উল্লেখ করে লে. কর্নেল এইচএম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, জাকারিয়া ২০১৭ সালে সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে এসে ১০ নম্বর ক্যাম্পে স্বপরিবারে বসবাস শুরু করে। মিয়ানমারে অবস্থানকালে আরসার শীর্ষ কমান্ডার আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনির সাথে সু-সম্পর্ক গড়ে উঠে এবং আরসায় যোগদান করে। বাংলাদেশে প্রবেশের প্রথম দিকে সে আরসার নেট দল (সংবাদদাতা) এবং পরবর্তীতে গান গ্রুপের সক্রিয় সদস্য হিসেবে কাজ করে। এরপর ২০২৩ সালের শেষের দিকে সে ১০ নম্বর ক্যাম্পের ব্লক-এফ/১৭ এর ব্লক কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ পায়। এ সময় তার নেতৃত্বে আরসার অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপহরণ, অস্ত্র, মাদক, চাঁদাবাজি ও সাধারণ রোহিঙ্গাদের নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপরাধ কার্য পরিচালনা হতো। ২০২২ সালে গোয়েন্দা সংস্থা ও র্যাবের মাদকবিরোধী যৌথ অভিযানের সময় আরসা সন্ত্রাসীদের হামলায় গোয়েন্দা সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিহত হওয়ার পর ক্যাম্প এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি করলে সে মিয়ানমারের পালিয়ে যায়। কিছু দিন পর আবারও বাংলাদেশে এসে আরসার গান গ্রুপ কমান্ডার হিসেবে বিভিন্ন কিলিং মিশন ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে। সে অস্ত্র চালনায় দক্ষ হওয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সংগঠিত বিভিন্ন নাশকতা, মারামারি, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরী, অপহরণ, অস্ত্র, মাদক, চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে কিলিং মিশনে অংশগ্রহণ করতো বলে জানায়। জাকারিয়ার বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় বিভিন্ন অপরাধে একাধিক মামলা রয়েছে। সে দুইবার কারাভোগও করেছে। জাকারিয়ার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা করে উখিয়া থানার সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।