গাজীপুরের শ্রীপুরের বরমী ইউনিয়নের সাতখামাইর পশ্চিম পাড়া গ্রামের তরুণ সবুজের বাগানে রসে ভরা আঙুর ফল ফলেছে। আঙুর চাষ করে সাড়া ফেলে দিয়েছেন তিনি। খেতের মাচায় থোকায় থোকায় ঝুলছে আঙুর ফল। দুই পাশে সারি সারি গাছে ধরেছে আঙুর। মাথার উপর বাঁশের মাচায় ঝুলছে সবুজ আঙুর। তা দেখতে যেমন মানুষ ভিড় করছেন, তেমনই আঙুর চাষের পরামর্শ ও চারা সংগ্রহও করছেন বিভিন্ন এলাকার কৃষক। কৃষক সবুজ জানান, প্রথমবার ১১ মাসের মাথায় গাছে আঙুর ধরেছে এবং ৩০০ থেকে ৪০০ কেজি ফল পাওয়ার আশা করছেন। গাছে প্রচুর ফল হয়েছে। এক গাছে ৩০ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। আঙুর গাছ ৮ ফুট দূরত্বে লাগানো হয়েছে। এ গাছ লাগানোর আগে জমি প্রস্তুত করে প্রতিটি গর্তে ৫ কেজি বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করেছেন। ৩ ফুট গর্ত করে ইটের গুঁড়া, মোটা বালু ও জৈব সার মাটির সঙ্গে মিশ্রণ করে দিয়েছেন। প্রতিটি গাছের গোড়া মাটি দিয়ে উঁচু করেছেন, যাতে পানি না জমে। আঙুর গাছ যাতে দ্রুত লম্বা হতে পারে, তাই বাঁশ দিয়ে মাচা তৈরি করেছেন। ফলে ঝড়-বৃষ্টি এলে গাছ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা কম থাকে। এ অঞ্চলের মাটিতে আঙুর চাষ করতে দেখে এক সময় যারা সবুজকে নিয়ে উপহাস করেছিলেন, এখন তারাই তার গুণগান গাইছেন। আঙুর চাষ নিয়ে ইউটিউবে প্রচুর ভিডিও দেখেন কৃষক সবুজ। এরপর উদ্বুদ্ধ হয়ে ২০২৩ সালে প্রথম বার ঝিনাইদহের মহেশপুরের জগিহুদা গ্রামের আব্দুর রশিদ থেকে প্রতি পিস ৫৫০ টাকায় ভারতীয় সুপার সনিকা জাতের ২৫টি চারা কিনে আনেন। শুরু করেন আঙুর চাষ। শুরুটা ভালো হয়নি। তবে আশা ছাড়েননি। তারপর মেলে কাঙ্ক্ষিত সফলতা। চারা রোপণের ১১ মাসের মধ্যে গাছে ফল আসা শুরু করে। কৃষক সবুজ আঙুর চাষের পাশাপাশি চারা উৎপাদনও করছেন। তার আঙুর বাম্পার ফলন দেখে আশপাশের কৃষকরাও আগ্রহী হয়ে উঠছেন। স্থানীয় বিভিন্ন নার্সারি ও ব্যক্তি তার কাছ থেকে চারা সংগ্রহ করতে আসছেন। তিনি প্রতিটি আঙুর গাছের কলম চারা মাত্র ২০০ টাকায় বিক্রি করছেন। কৃষক সবুজ নিজের আঙুর বাগানকে উপজেলার একমাত্র বাগান দাবি করে বলেন, ‘আশা করি এ বছর ভালো ফল পাব। সাধারণত ৮০ থেকে ৮৫ দিনে ফল খাওয়ার উপযোগী হয়। এখন যে ফল দেখছেন, তা আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে খাওয়া যাবে। সবচেয়ে বড় কষ্টের বিষয় হলো, এ চাষ যখন শুরু করি; তখন আশপাশের মানুষ উপহাস করতে থাকে। অনেকে পাগলও বলতেন।’ তিনি বলেন, ‘দোকানে তো বসতেই পারতাম না। এখন আমার আনন্দ ধরে না। প্রতিদিন আঙুর দেখার জন্য অনেকের সাক্ষাৎ মিলছে। আশা করি, এ বছর অনেক লাভবান হতে পারব। কোনো মানুষের কাছ থেকে সহযোগিতা পাইনি। এখন স্থানীয় কৃষি অফিসসহ সব সময় মানুষ পাশে থাকছে। এ পর্যন্ত প্রায় ২ থেকে ৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তবে এখন আর তেমন বেশি খরচ নেই।’ স্থানীয়রা জানান, আঙুর বাগানে সবুজ সারা দিন পরিশ্রম করেন। খরার রাতে বাগানে ২ ঘণ্টা পানি দিয়েছেন। সবুজ একাই বাগানে কাজ করেন। তার স্ত্রী তাকে মাঝেমধ্যে সহযোগিতা করেন। আঙুর বাগান করে এবার লাভবান বলেও জানান এলাকাবাসী। শ্রীপুর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘গত বছর তিনি ২৫টি চারা দিয়ে আঙুর চাষ শুরু করেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তাকে সার্বিক সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে আসছে। আশা করি, তার হাত ধরেই এই অঞ্চলে আঙুরের বাণিজ্যিক চাষ শুরু হবে।’