কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৃথক পাহাড় ধস ও দেওয়াল চাপায় দুই বাংলাদেশিসহ ১০ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৮ জন রোহিঙ্গা ও ২ জন বাংলাদেশি। গতকাল ভোরে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। প্রবল বর্ষণে উখিয়ার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধস ও বাড়ির দেওয়াল চাপা পড়ে। এতে রাত সাড়ে ৩টায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১ ওয়েস্ট এর এফ/৫ এর ব্লকে একজন রোহিঙ্গা নারী নিহত হয়। ভোর ৪টায় (ক্যাম্প-১৪, ব্লক-সি/২ সংলগ্ন কাঁটাতারের বাইরে (৫ ফিট দূরে তাহার বাড়ি) একজন বাঙালি নিহত হয়। ভোর সাড়ে ৪টায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প-০৮ এর ইস্ট একজন রোহিঙ্গা শিশু নিহত হয়। ভোর পৌনে ৫টার দিকে ক্যাম্প-০৯ এর ব্লক আই/৪ পাহাড় ধসে ২ জন ও ব্লক আই /০৯ তে একজন রোহিঙ্গা মাটি চাপা পরে নিহত হয়। সকাল ৭টায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১০ এর চলমান বৃষ্টিতে পাহাড় ধসে মাটি চাপা পরে চারজন রোহিঙ্গা নিহত হয়। এতে করে দুইজন বাংলাদেশিসহ ১০ জন নিহত হয়। তৎ মধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৯ এ ৩ জন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প ১০ এ ৪ জন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প ৮ ইস্ট এ একজন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প ১ ওয়েস্ট এ একজন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১৪ এ সংলগ্ন চোরাখোলা এলাকায় একজন বাংলাদেশি মারা যান। উখিয়া থানার চৌকস অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শামীম হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, নিহত ১০ জনের মধ্যে ৪ বছরের এক শিশু, ১২ বছরের এক কিশোর ও কয়েকজন নারী-পুরুষ রয়েছেন। খবর পেয়ে উখিয়া থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। পাহাড় ও ঢালুর আশে পাশে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী মানুষকে নিরাপদ স্থানে চলে আসার আহ্বান জানানোসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নিহতরা হলেন- হোছন আহাম্মদ, পিতা-আলী জোহার (একজন পুরাতন রোহিঙ্গা এবং তিনি বর্তমানে সাতকানিয়া থানাধীন কেরানীর হাট গ্রামের ভোটার), মোসা: আনোয়ারা বেগম, স্বামী-হোসেন আলী, সালমান, পিতা- জামাল, আব্দুল কালাম, পিতা-অজ্ঞাত, মোসা: সলিমা খাতুন স্বামী-আবুল কালাম, আবু মেহের, পিতা-আবুল কালাম,জয়নব বিবি প্রঃ জানু, মোঃ হারেস, পিতা-আনোয়ার, মোসা: পুতনী, পিতা-সুলতান আহমদ এবং মো: আব্দুল করিম, পিতা-শাহ আলম, গ্রাম চোরাখোলা, ওয়ার্ড-৪, ইউনিয়ন-পালংখালী, থানা- উখিয়া মাঠি ও দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত্যুবরণ করেন।
মৃত আবদুল করিম থাইংখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষষ্ঠ শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে। কক্সবাজারের অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (উপ সচিব) মো. শামসুদ্দৌজা নয়ন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এবং তিনি জানান, অতি বর্ষণের কারণে উখিয়ার ৯ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরে তিনজন, ১০ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরে চারজন, ৮ ইস্ট রোহিঙ্গা শিবিরে এক জন, ১ ওয়েস্ট রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একজন এবং ১৪ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরে একজন স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মানুষ মারা গেছেন। নিহতদের ব্যাপারে বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে তাদের প্রয়োজনীয় সাহায্য সহযোগিতা করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে দ্রুত। কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের উপ-সহকারী পরিচালক অতীশ চাকমা জানান, রোহিঙ্গা শিবিরে পাহাড় ধসে নিহতদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহগুলো ময়নাতদন্তের জন্যে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। পালংখালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, অতি ভারি বৃষ্টির কারণে থাইংখালি ১৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাহাড়ধসে কাঁটাতারের বাইরে শাহ আলমের বাড়িতে এসে পড়ে। এ সময় আব্দুল করিম নামে থাইনখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর হোসেন জানান, সকালে খবর আসে বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধস হয়। এ ঘটনায় এক বাংলাদেশি ও ৯ রোহিঙ্গা মাটির নিচে চাপা পড়ে মারা গেছেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এখনও উদ্ধার কাজ চলছে। ৮ আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি) মো. আমির জাফর জানান, গতকাল বুধবার ভোরের দিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৯, রোহিঙ্গা ক্যাম্প ১০, রোহিঙ্গা ক্যাম্প ৮ ইস্ট, রোহিঙ্গা ক্যাম্প ১ ওয়েস্ট ও রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১৪ এ সংলগ্ন চোরাখোলা এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। উখিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরগুলো পাহাড়ে অবস্থিত। তাই অতিবৃষ্টি ও যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে তারা বেশি ঝুঁকিতে থাকে। এদের দুর্যোগ পূর্ববর্তী সরিয়ে নেওয়া হলে জানমাল অনেকটা রক্ষা হবে। উল্লেখ্য, স্থানীয়দের মতে ক্যাম্প কর্তৃপক্ষ প্রবল বর্ষণের আগে যদি যথাযথ সময়ে রোহিঙ্গা নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া বা তাদের কাছে সতর্ক বার্তা প্রেরণ করলে এতো মানুষের প্রাণহানী ও ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হতো না। অন্যান্য বারের তুলনায় এবার ক্যাম্প প্রশাসন, দেশি-বিদেশি এনজিওগুলো আবহাওয়া এবং ভারী বর্ষণের ব্যাপারে চরম উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছেন। দায়িত্ব অবহেলার সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট সকলকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।