রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে শফিকুর রহমান-ফরিদা ইয়াসমিন দম্পতি হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। পুলিশের ধারণা, পূর্বশত্রুতার জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। নিচতলা ও দোতলায় লাশ পাওয়া গেলেও চারতলা পর্যন্ত পায়ের রক্তাক্ত ছাপ দেখা গেছে। পরিবারের অভিযোগ, ফেনীতে জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ জানায়, গতকাল সকালে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ। তারা বাসার নিচতলার পার্কিংয়ে শফিকুরের (৬২) লাশ দেখতে পায়। তার গলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পুলিশ সদস্যরা দোতলায় গিয়ে শোয়ার ঘরে মশারির ভেতর ফরিদার (৫৫) লাশ পান। তার মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
পরিবার ও পুলিশ সূত্র জানায়, শফিকুর রহমান জনতা ব্যাংকের সাবেক গাড়িচালক। শফিকুর-ফরিদা দম্পতি যাত্রাবাড়ী থানার কোনাপাড়া এলাকার পশ্চিম মোমেনবাগের আড়া বাড়ি বটতলায় নতুন একটি চারতলা বাড়ি তৈরি করেছেন। তারা দোতলায় থাকতেন। বাড়ির নিচতলার এক পাশ এবং তিন ও চারতলা ভাড়া দেওয়া। এই দম্পতির একমাত্র ছেলে পুলিশের বিশেষ শাখার (স্পেশাল ব্রাঞ্চ) উপ-পরিদর্শক (এসআই) আল আমিন ওরফে ইমন ও তার স্ত্রী একই বাসায় মা-বাবার সঙ্গে থাকেন। গতকাল বুধবার আল আমিন তার দাদার বাড়ি ফেনী এবং তার স্ত্রী নিজের বাবার বাড়িতে চলে যান। আর শফিকুরের মেয়ের বিয়ে হয়েছে। তিনি ও তার স্বামী মোমেনবাগের কাছেই থাকেন।
হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকায় ফেরেন শফিকুরের ছেলে আল আমিন। শফিকুরের জামাতা আরিফুর রহমান ওরফে বাপ্পী বলেন, তার শ্বশুরের গ্রামের বাড়ি ফেনীর দাগনভূঞার রামচন্দ্রপুরে জমিজমা নিয়ে প্রতিপক্ষের সঙ্গে বিরোধ চলছিল। এর জের ধরে হত্যাকাণ্ড ঘটনো হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
তিনি বলেন, ঘরের আলমারির মালামাল এলোমেলো করা হলেও কিছু খোয়া যায়নি। যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, ভোরে ঘটনাটি ঘটেছে। শফিকুর পানির মোটর ছাড়তে নামার পর পরিচিত খুনিরা গেট খুলিয়ে ভেতরে ঢুকে তাকে প্রথমে হত্যা করেছে। পরে তারা দোতলায় উঠে তার স্ত্রীকে হত্যা করে। বাড়ির ভাড়াটেরা দাবি করেছেন, তারা কেউ বিষয়টি টের পাননি। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ওই বাড়ি ঘিরে উৎসুক মানুষের ভিড়। পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট কলাপসিবল গেট লাগিয়ে আলামত সংগ্রহ করছে এবং বাড়ির ভাড়াটেদের সঙ্গে কথা বলছে। পুলিশ এ সময় কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। প্রতিবেশীরা বলেন, তাদের জানামতে শফিকুরের সঙ্গে কারো কোনো শত্রুতা ছিল না। প্রতিবেশী মো. পারভেজ বলেন, শফিকুর রহমান প্রতিদিন ভোরে নামাজ পড়তে যান। এর আগে তিনি পানির মোটর চালু করেন।
গতকাল সকালে শফিকুরের বাড়ির ভূগর্ভস্থ পানির ট্যাংক উপচে বাইরে পানি গড়াতে থাকলে বাইরের লোকজন চিৎকার করে তা বলতে থাকেন। শফিকুরের বাসার চতুর্থ তলার ভাড়াটে এক নারী নিচের তলায় নেমে পানির মোটরের সুইচ বন্ধ করেন। এ সময় তিনি গাড়ি রাখার পার্কিংয়ের এক পাশে শফিকুরকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। তিনিই আশপাশের লোকজনকে ডেকে আনেন। এরপর ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে তা জানানো হয়। পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, পূর্বশত্রুতার জের ধরে এই জোড়া খুনের ঘটনা ঘটেছে। খুনিরা মৃত্যু নিশ্চিত করতে শফিকুরের গলায় অনেকগুলো কোপ দিয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পেছনে পারিবারিক শত্রুতাও থাকতে পারে। ওই বাড়ি থেকে কিছু খোয়া যায়নি। খুনিরা ঘটনাটি ডাকাতি বলে চালানোর চেষ্টা করেছে। তিনি বলেন, চারতলা পর্যন্ত পায়ের রক্তাক্ত ছাপ দেখা যায়। এমনো হতে পারে, খুনিরা হত্যাকাণ্ডের পর বাড়ির ছাদ দিয়ে পেছনের দিক থেকে নেমে যেতে পারে। পুলিশ কর্মকর্তা ইকবাল হোসাইন আরো বলেন, ঘটনা তদন্তে যাত্রাবাড়ী থানার তিনটি দল গঠন করা হয়েছে। শফিকুরের বাড়িতে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসি) নেই। তবে আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে খুনিদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।