ঢাকা ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কুড়িগ্রামে স্বল্পমেয়াদি বন্যায় কৃষিতে ক্ষতি

কুড়িগ্রামে স্বল্পমেয়াদি বন্যায় কৃষিতে ক্ষতি

চলতি বন্যায় কুড়িগ্রামে ১ হাজার ৩২০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এসব ফসলের মধ্যে রয়েছে পাট, আউশ ধান, চিনা, কাউন, আমনের বীজতলা, বাদামসহ বিভিন্ন প্রকার শাকসবজি। পানি দ্রুত নেমে না গেলে এসব ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে গত শুক্রবার থেকে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় দ্রুত কমছে কুড়িগ্রামের নদনদীর পানি। এতে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। তবে বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ভাঙন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্য মতে, গতকাল শনিবার বিকাল ৩টায় তিস্তা নদীর পানি কমে কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার মাত্র ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া ধরলা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যান্য নদনদীর পানি উল্লেখযোগ্য হারে কমে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে পানি কমলেও নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের এখনো নামেনি পানি। এসব এলাকার বাড়ির পাশ দিয়ে পানি অবস্থান করছে। ফলে এসব এলাকার মানুষ পানি বন্দি রয়েছে। তারা নৌকা এবং ভেলা দিয়ে যোগযোগ করছে। এসব চরাঞ্চলের ফসল এক সপ্তাহ থেকে ডুবে রয়েছে পানিতে। ফলে ফসল নষ্ট হয়ে যাবে বলে মনে করছেন কৃষকরা।

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার বল্লভের খাষ ইউনিয়নের ফান্দের চরের কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, বানের পানিতে তার পাট এবং সবজিসহ আমনের বীজতলা তলিয়ে গেছে। এসব ফসল নষ্ট হয়ে যাবে। বিশেষ করে আমনের বীজতলা নষ্ট হলে আমন চাষ নিয়ে বিপাকে পড়বেন তারা।

একই এলাকার দুলু মিয়া বলেন, তার বাড়ি নিচু এলাকায় হওয়ায় পাঁচ দিন হলো পানি উঠেছে। এ কয়দিন থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে কোনো মতো রাত-দিন কাটাচ্ছেন। এছাড়া বাড়ির আশপাশে লাগানো সব সবজির গাছ মরে গেছে।

রৌমারী উপজেলার রৌমারী সদর, যাদুরচর, দাঁতভাঙা, শৌলমারী ও চরশৌলমারী ইউনিয়নের নিমাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ধানখেত নষ্ট হওয়ায় বিশষ কর বিপদ পড়ছ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকর। পাশাপাশি গো-খাদ্যের তীব্র সংকটও দেখা দিয়েছে। টানা ভারি বর্ষণ ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের কারণে বারবান্দা, বেড়ামারা, পাখিউড়া, বোয়ালমারী, নতুন শৌলমারী, চরবোয়ালমারী, ডাঙ্গুয়াপাড়া, গুছগ্রাম, ইটালুকান্দা, কাউনিয়ারচর, ছাটকড়াইবাড়ী, ধনতলা, চরধনতলা, শান্তিরচর, ভুদুরচর, নামা বারবান্দা, ইজলামারী, ইছাকুড়ি, পাটাধোয়াপাড়া, চর ইজলামারী, খেওয়ার চর, বকবান্দা, আলগারচর, পোলারচরসহ পাঁচটি ইউনিয়নের নিমাঞ্চল প্লাবিত হয়ে প্রায় ১০ হেক্টর পাঁকা ধানখেত তলিয়ে গেছে। বকবান্দা গ্রামের কৃষক আমিনুল ইসলাম বলেন, আমাগো পাকা ধান খেত বৃষ্টির পানিত তলাইয়া (ডুবে) গেছে। ধান কাটার কামলা পাওয়া যায় না। কামলার দাম ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকাতে কাজ করছে না তারা। আমরা গরিব কৃষক এত টাকা পামু কই। সারা বছর এই আবাদ দিয়ে চলে আমাগো।

কুড়িগ্রাম কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, চলতি বন্যায় জেলায় ১ হাজার ৩২০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। বন্যা শেষে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করা হবে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান, জেলার সব নদ-নদীর পানি কমছে। দু- একদিনের মধ্যে পানি কমে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। এছাড়া জেলার পাঁচ থেকে ছয়টি পয়েন্টে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, বন্যাকবলিত মানুষের জন্য ১৪৪ মেট্রিক টন জিআর চাল ও নগদ ১০ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ত্রাণ হিসাবে উপ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এগুলো বন্যা কবলিতদের মাঝে বিতরণ শুরু হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত