ঢাকা ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২২ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ছাগল কাণ্ড!

সোনাগাজীর শ্বশুরবাড়িতে ডুপ্লেক্স বাড়ি বানান মতিউর

সোনাগাজীর শ্বশুরবাড়িতে ডুপ্লেক্স বাড়ি বানান মতিউর

ঈদুল আজহার আগে ১২ লাখ টাকায় একটি ছাগল কিনতে গিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া মুশফিকুর রহমান (ইফাত) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য ড. মতিউর রহমানেরই ছেলে। এতে কোনো সন্দেহ নেই।

ইফাতের একাধিক নিকটাত্মীয় বিষয়টিকে নিশ্চিত করেছেন। সেই ছেলে ও স্ত্রী শাম্মী আখতার শিভলীর অনুরোধে শ্বশুরবাড়িতে প্রায় ১০ বছর আগে একটি বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স বাড়ি বানিয়ে উপহার দেন মতিউর রহমান। ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের মিয়া বাড়িই মতিউর রহমানের শ্বশুরবাড়ি।

যদিও মতিউর রহমানের দাবি, ইফাত তার ছেলে নয়। এ বিষয়ে পরিবারটির ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার কারণে মতিউর রহমান ছেলেকে অস্বীকার করছেন। কারণ, ১২ লাখের ছাগলকে কেন্দ্র করে ভাইরাল হওয়ার পর ইফাতের দামি ব্র্যান্ডের ঘড়ি, গাড়ি, আলিশান জীবনযাপনের নানা বিবরণ গণমাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে। সরকারি চাকরজীবী বাবার বেতনের টাকা দিয়ে ছেলে কীভাবে এমন ব্যয়বহুল জীবনযাপন করতে পারে, তা নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠতে থাকে। এ অবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দিতে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ছেলের পরিচয় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। মতিউরের বানিয়ে দেয়া বিলাসবহুল বাড়িটি জসিম উদ্দিন নামে স্থানীয় একব্যক্তি দেখা শোনা করেন। তিনি বলেন, দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি এই বাড়িতে থেকে বাড়ি দেখাশোনা করছেন। সর্বশেষ গত দুই মাস আগেও এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমান, স্ত্রী শাম্মী আখতার শিভলী, ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত ও শাশুড়িকে নিয়ে বাড়িতে এসেছিলেন। দুয়েকদিন থাকার পর আবার ঢাকায় ফিরে যান। মতিউর রহমানের শাশুড়ি বর্তমানে ঢাকায় মেয়েদের বাসায় ও বাড়িতে আসা-যাওয়ার ওপর থাকেন। এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি জসিম।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, গত বছর কোরবানির ঈদে মতিউরের ছেলে ইফাত প্রায় কোটি টাকা ব্যয় করে ১৪টি গরু-ছাগল কিনেছিলেন। এর মধ্যে আটটি গরু ও দুটি ছাগল ঢাকায় কোরবানি দিয়েছেন। বাকি চারটি গরু নানার বাড়িতে নিজে এসে জবাই করে আত্মীয়-স্বজন ও গরিবদের মধ্যে বিতরণ করেছেন।

স্থানীয়রা জানায়, মতিউর রহমান ও তার শ্যালক মো. নকিবের নামে ফেনী ও সোনাগাজীতেও বেশ কিছু জমিজমা রয়েছে। যা মতিউরের স্ত্রী শাম্মী আখতারের জেঠাতো ভাই মো. আরিফুর রহমান তাদের কিনে দিয়েছেন। তিনি এই সম্পত্তির দেখাশোনা করেন। মতিউরের স্ত্রী শাম্মী আখতারের জেঠাতো ভাই মো. আরিফুর রহমান বলেন, এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমান তার চাচাতো বোনের স্বামী। মুশফিকুর রহমান ইফাত তাদের একমাত্র সন্তান। শাম্মী আখতারের এক বোন ও এক ভাই রয়েছে। ২৫ বছর আগে মতিউরের সঙ্গে শাম্মী আখতারের বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছর পর শাম্মী আখতারের বাবা অবসর প্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা মিল্লাত মিয়া মারা যান। এরপর শাম্মীর অনুরোধে মতিউর শাশুড়ি, শালিকা লাভলী আক্তার ও শ্যালক মো. নকিবকে ঢাকায় নিয়ে যান। সেখানে লাভলীকে পড়ালেখা শেষে বিয়ে দেন। আর শালক মো. নকিবকে বাসায় রেখে লেখাপড়া করান। সম্প্রতি নবিক চীন থেকে ফ্যাশন ডিজাইনের ওপর লেখাপড়া শেষ করে দেশে ফিরে এসে ব্যবসা ও চাকরি শুরু করেন। বর্তমানে তারা রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় নিজস্ব বাসায় থাকেন। তবে স্থানীয়রা বলছে, শালক নকিব ঢাকাসহ বিদেশে মতিউরের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ আনুষাঙ্গিক কাজকর্ম দেখাশোনা করেন। তিনি বলেন, মতিউর হঠাৎ করে একটি ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ায় তিনি নিজেকে নির্দোষ ও আড়াল করতে স্ত্রী-সন্তানদের অস্বীকার করছেন। তবে এটা অচিরেই সমাধান হয়ে যাবে। অন্যথায় ডিএনএ পরীক্ষা করলে ইফাতের পিতৃ পরিচয় সম্পর্কে পরিস্কার হয়ে যাবে। এছাড়া ফেনী ও সোনাগাজীতে মতিউর ও নকিবের পৈত্তিক ছাড়া আর কোন জমিজমা নেই। তিনি তাদেরকে কোন জমিজমা কিনে দেননি বলেও জানান। সোনাপুর এলাকায় মিয়া বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দৃষ্টি নন্দন ডুপ্লেক্স বাড়িটির দরজা বন্ধ। ঘরে কেউ নেই।

কথা হয় মতিউর রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার শিভলীর জেঠাতো ভাই ও আমিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সোনাগাজী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আজিজুল হক হিরনের সঙ্গে। তিনি বলেন, এনবিআরের সদস্য মতিউর রহমান তার চাচাতো বোনের স্বামী। ইফাত তাদের সন্তান। শাম্মী আখতারের ছোট ভাই ঢাকাতে ব্যবসা করেন। তারা বনেদি পয়সাওয়ালা। বিভিন্ন সময়ে মতিউর স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সোনাগাজীর শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে আসতেন। শ্বশুরবাড়িতে মতিউরের বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ প্রসঙ্গে বলেন, তার চাচা মিল্লাত মিয়া ও তার সন্তানরা শুরু থেকেই ধনী। মিয়া বাড়িতে কেন জামাইকে ঘর করে দিতে হবে?

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত