পৃথিবীতে ১০০ মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা তৈরি করে বিশ্ব রেকর্ড গড়লেন দক্ষিণ কোরিয়ার পরমাণু বিজ্ঞানীরা। এখনো পর্যন্ত কোনো দেশ তাপমাত্রা তৈরির এই রেকর্ড গড়তে পারেনি। কৃত্রিম সূর্যে পারমাণবিক ফিউশন পরীক্ষার সময় এই তাপমাত্রা তৈরি করা হয়। এটি সূর্যের কোর থেকে প্রায় সাত গুণ বড়। দক্ষিণ কোরিয়ার দাবি, ভবিষ্যতের শক্তি প্রযুক্তিতে এই আবিষ্কার একটি মাইলফলক হতে পারে। বর্তমানে চীন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্সের মতো বিশ্বের অনেক দেশই কৃত্রিম সূর্য নিয়ে কাজ করছে। খবর রয়টার্সের। যখন দুটি পরমাণু একত্রিত হয় তখন ঘটে নিউক্লিয়ার ফিউশন। এর ফলে প্রচুর পরিমাণ শক্তির প্রকাশ ঘটে। সূর্যের মতো নক্ষত্রগুলো শুধুমাত্র পারমাণবিক সংমিশ্রণ থেকে শক্তি এবং আলো দুটোই পায়। ফলে পরমাণুগুলো যখন চরম তাপ এবং চাপের মধ্যে থাকে, তখন ঘটে ফিউশন। এই অবস্থায় পৃথিবীতে এই প্রক্রিয়াটি চালানোর জন্য প্রয়োজন পড়ে একটি বিশেষ চেম্বারের। এই নিউক্লিয়ার ফিউশন রিঅ্যাক্টর চালাতে সাফল্য পাওয়ার পর বিজ্ঞানীরা অনেকটা সুবিধা পাবেন বলে জানা গেছে। জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর মতো ফিউশন প্রক্রিয়ায় কোনো দূষণ সৃষ্টি হয় না। তবে পৃথিবীর বুকে এই প্রক্রিয়া আয়ত্ত করা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং বলে জানিয়েছেন পরমাণু বিশেষজ্ঞরা। ফিউশন শক্তি পাওয়ার সবচেয়ে সাধারণ উপায়ে টোকামাক নামে একটি ডোনাট আকারের চুল্লি জড়িত যেখানে হাইড্রোজেন রূপগুলোকে একটি প্লাজমা তৈরি করার জন্য উচ্চ তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করা হয়। উচ্চ তাপমাত্রা এবং উচ্চ ঘনত্বের প্লাজমা হলো পারমাণবিক ফিউশন রিঅ্যাক্টের ভবিষ্যতের চাবিকাঠি, দাবি কোরিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ফিউশন এনার্জির কেএসটিএআর রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক সিউ ইউনের। তবে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রতিক্রিয়া হতে পারে কারণ উচ্চ তাপমাত্রার প্লাজমার অস্থিতিশীল প্রকৃতির কারণে এই উচ্চ তাপমাত্রা বজায় রাখা খুব একটা সহজ নয়। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর এবং ২০২৪ সালের মধ্যে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলাকালীন ৪৮ সেকেন্ডের জন্য ১০০ মিলিয়ন ডিগ্রি তাপমাত্রার সঙ্গে প্লাজমা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছিল কোরিয়ার বিজ্ঞানীরা। এটি ২০২১ সালে নির্ধারিত ৩০ সেকেন্ডকে অতিক্রম করেছে। সিউ ইউন বলেছেন যে, কেএসটিএআর জানিয়েছে তাদের লক্ষ্য হলো, ২০১৬ সালের মধ্যে ৩০০ সেকেন্ডের জন্য ১০০ মিলিয়ন ডিগ্রি প্লাজমা তাপমাত্রা বজায় রাখা, যা ফিউশন অপারেশনগুলোকে স্কেল করতে পারার জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি পয়েন্ট।