গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তার বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে ফের আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে দলটি। শিগগিরই এ বিষয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানা গেছে। এদিকে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত সোমবার দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নেয়া সিদ্ধান্ত জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি।
সভার সিদ্ধান্ত জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, সভায় অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়া নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করা হয় এবং তার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেই লক্ষ্যে অতিদ্রুত কর্মসূচি প্রণয়ন করা হবে। আমরা হয়তো আগামীকালই (আজ বুধবার) কর্মসূচি প্রণয়ন করব। তিনি বলেন, সভা মনে করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দিতে হীন চক্রান্ত করছে এই সরকার। শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে দেশনেত্রীকে বন্দী করে রাখা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং সংবিধান বিরোধী। বিএনপি মহাসচিব বলেন, স্থায়ী কমিটির সভায় খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। তার রোগমুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া প্রার্থনা করা হয়।
খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থা জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে (গতকাল মঙ্গলবার) সকালের আপডেট হচ্ছে, তার শারীরিক অবস্থা এখন স্থিতিশীল। গতকাল (গত সোমবার) তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে। আসলে ম্যাডাম সিসিউইতে মানিয়ে নিতে পারছেন না। সে কারণে সিসিইউর সব সুবিধা রেখে তাকে কেবিনে নেয়া হয়েছে। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, চিকিৎসকরা তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুপারিশ করেছেন। দলের পক্ষ থেকে তাকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে পাঠানোর দাবি জানানো হয়েছে। এমনকি পরিবারের পক্ষ থেকে দুই বার তার বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকার তাদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার লক্ষ্যে খালেদা জিয়া হত্যার উদ্দেশ্যে উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করেছে। এসময় অনতিবিলম্বে খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান মির্জা ফখরুল।
উল্লেখ্য, বেগম খালেদা জিয়ার বয়স এখন প্রায় ৮০ ছুঁইছুঁই। তিনি দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি জটিলতা, চোখের সমস্যা ও হৃদরোগে ভুগছেন। এছাড়া তার মেরুদণ্ড, ঘাড়, হাত, হাঁটুর সমস্যাসহ আরো কিছু শারীরিক জটিলতা আছে। এছাড়া তিনি পরিপাকতন্ত্রে রক্তক্ষরণ ও লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। গত শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় গুলশানের বাসা ফিরোজায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। দ্রুতই তাকে সিসিইউতে ভর্তি করে চিকিৎসা শুরু করে মেডিকেল বোর্ড। তারপর তাকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। গত রোববার সন্ধ্যায় খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্রে পেসমেকার বসানো হয়। এর আগে দীর্ঘ ৫ মাস এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পর গত ১১ জানুয়ারি গুলশানের বাসায় ফিরেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
সূত্র মতে, খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান। দেশে করোনা মহামারি শুরুর পর পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তাকে নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার। তখন থেকে তিনি গুলশানের ফিরোজা বাসায় অবস্থান করছেন। এরপর থেকে তার দণ্ডাদেশ স্থগিতের মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে।