তরুণী দিয়ে অনলাইনে দেহ ব্যবসা শতকোটি টাকা হাতিয়েছে চক্রটি

* ৭ বছরে চক্রটির আয় ১০০ কোটি টাকা * ১০ লাখ ন্যুড ছবি, ২০ হাজার অ্যাডাল্ট ভিডিও আদান প্রদান

প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

চাকরির প্রলোভন দিয়ে তরুণীদের ন্যুড ভিডিও বানাতেন তারা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠতি বয়সি তরুণীদের টার্গেট করে আকর্ষণীয় বেতনে চাকরি, ট্যালেন্ট হান্টিং ও মডেলিংয়ের নামে বিজ্ঞাপন দিয়ে ফাঁদে ফেলত একটি চক্র। এরপর তরুণীদের ব্যক্তিগত ছবি হাতিয়ে নিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে অনলাইনে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করা হতো। শত শত তরুণীকে ফাঁদে ফেলা চক্রের মূলহোতাসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার পুলিশ।

গ্রেপ্তাররা হলেন- চক্রের মূলহোতা ও মেডিকেল শিক্ষার্থী মো. মেহেদী হাসান (২৫) ও তার প্রধান সহযোগী খালাতো ভাই শেখ জাহিদ বিন সুজন (২৬), মো. জাহিদ হাসান কাঁকন (২৮), তানভীর আহমেদ ওরফে দীপ্ত (২৬), সৈয়দ হাসিবুর রহমান (২৭), শাদাত আল মুইজ (২৯), সুস্মিতা আক্তার ওরফে পপি (২৭) ও নায়না ইসলাম (২৪)।

গত মঙ্গলবার রাজধানী, সাতক্ষীরা, চাঁদপুর ও যশোরের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহম্মদ আলী মিয়া। তিনি বলেন, একটি চক্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া নামে ফেসবুক আইডি ও পেজ খুলে ফ্রিল্যান্সিং কাজ, লোভনীয় চাকরি, মডেল বানানো, মেধা অন্বেষণের নামে অল্প বয়সি তরুণীদের কাছ থেকে কৌশলে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও হাতিয়ে নিয়ে তা দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে তাদের দেহব্যবসায় নামানোর এক চক্রের সন্ধান পায় সিআইডি।

যেসব তরুণীদের টার্গেট : চক্রটি মূলত উঠতি বয়সি তরুণীসহ যেসব তরুণী পারিবারিক ভাঙনের শিকার ও আর্থিক সমস্যা রয়েছে তাদের টার্গেট করত। চক্রটি কাজের সুযোগ দেয়ার নামে ইন্টারভিউতে ডাকত। এরপর তাদের বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে সুযোগ দেয়ার কথা বলে আপত্তিকর ছবি নিতো। প্রাথমিকভাবে কাজে আগ্রহী তরুণীদের চাহিদা মতো টাকা ও প্রয়োজন মেটাতো তারা। এরপর ধীরে ধীরে অসামাজিক কাজ করতে বাধ্য করা হতো তরুণীদের।

সিআইডিপ্রধান আরো বলেন, চক্রের মূলহোতা মেহেদী হাসান এবং তার খালাতো ভাই শেখ জাহিদ বিন সুজন মিলে চক্রটি গড়ে তুলেছিল। তারা দুজনেই মেডিকেল শিক্ষার্থী। তারা চিকিৎসা বিদ্যার আড়ালে অল্প বয়সি তরুণীদের ফাঁদে ফেলে যৌন নির্যাতনের পাশাপাশি অ্যাডাল্ট কন্টেন্ট তৈরি ও টেলিগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ এবং ম্যাসেঞ্জারে নানা অসামাজিক কাজ করতে বাধ্য করত।

৭ বছরে চক্রটির আয় ১০০ কোটি টাকা, কিনেছে জমি :

গত ৭ বছরে অসামাজিক কার্যকলাপ করে প্রায় ১০০ কোটি টাকা আয় করেছে চক্রটি। এই টাকা দিয়ে তারা যশোর, সাতক্ষীরা, খুলনা এবং ঢাকায় বিপুল পরিমাণ জমিও কিনেছে। নির্মাণ করেছে আলিশান বাড়ি। চক্রের সদস্যদের আত্মীয়স্বজনের ব্যাংক আ্যকাউন্টেও বিপুল অর্থ জমিয়ে রাখার তথ্য মিলেছে।

যেভাবে কাজ করত চক্রটি : অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী জানান, শুরুতে ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে চাকরির বিজ্ঞাপন, কখনো মডেল তৈরি, কখনোবা ‘ট্যালেন্ট হান্ট’ শীর্ষক প্রতিযোগিতার আয়োজন করত চক্রটি। এতে যারা সাড়া দিত, তাদের নিয়ে টেলিগ্রামে গ্রুপ খুলত।

এরপর তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে বিদেশি বায়ারদের কাছে পাঠানোর কথা বলে মেয়েদের আপত্তিকর ছবি হাতিয়ে নিত চক্রটি। হাতিয়ে নেওয়া সেসব অর্ধনগ্ন ছবি ভাইরাল করে দেয়ার ভয় দেখিয়ে নগ্ন হয়ে ভিডিও কল বা সরসারি অসামাজিক কাজে বাধ্য করত।

ভুক্তভোগী শত শত তরুণী : চক্রটির টেলিগ্রাম গ্রুপে হাজার হাজার সাবস্ক্রাইবার রয়েছে। যারা একটি নির্দিষ্ট অর্থ দিয়ে ওই গ্রুপগুলোতে যুক্ত থাকত। চক্রটি ভিডিওকলের সবকিছু গোপনে ধারণ করে রাখত। এরপর তরুণীদের বাধ্য করা হতো চক্রটি ভুক্তভোগীদের যৌন সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করত। এভাবেই চক্রটির হাতে আধুনিক যৌনদাসীতে পরিণত হয়েছিল শত শত তরুণী। দীর্ঘদিন ধরে অনুসন্ধান করে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার চক্রের মূলহোতা ও তার প্রধান সহযোগীদের শনাক্ত করে।