ঈদের পর বাড়ছেই নিত্যপণ্যের দাম
প্রকাশ : ২৮ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
কোরবানির ঈদের ছুটি শেষে এরই মধ্যে সপ্তাহখানেক সময় পার হয়েছে। স্বাভাবিক হয়ে উঠছে কাঁচাবাজার। এরপরও সবজি থেকে শুরু করে নিত্যপণ্য বেশি দামে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। অধিকাংশ সবজির দাম বেড়েছে। ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে বেগুন ও পেঁয়াজের দাম সেঞ্চুরি হয়ে গেছে। তবে ভালোমতোই বেড়েছে কাঁচা মরিচ, শসা, ধনেপাতা, টমেটোর দাম। গরু ও মুরগির মাংস বিক্রি হচ্ছে অন্য সময়ের চেয়ে কিছুটা বেশি দামে। হঠাৎ করে অতিরিক্ত দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে বিক্রেতাদের দাবি, বাজারে সরবরাহ কম থাকায় হু হু করে কাঁচা মরিচের দাম বাড়ছে। ক্রেতাদের অভিযোগ, সিন্ডিকেট করে কাঁচা মরিচের দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
লাগামছাড়া সবজির দাম বাজারে সবজির সরবরাহ কম। অথচ ঈদে টানা মাংস খেয়ে হাঁফিয়ে ওঠা মানুষ এ সপ্তাহে সবজি কিনছেন বেশি। ফলে সবজির বাজারও চড়া। সপ্তাহের ব্যবধানে অধিকাংশ সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা করে বেড়ে গেছে। ৬০ থেকে ৮০ টাকার বেগুন ৮০ থেকে ১০০ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না। ২২০ থেকে ২৩০ টাকা কেজির কাঁচা মরিচ ৩০০ ছাড়িয়ে গেছে। ৪০ থেকে ৫০ টাকার পটল, ঝিঙে ও ধুন্দুল ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা। ৪০ থেকে ৫০ টাকার করলা এখন ৭০ থেকে ৮০ টাকা। ঈদে ব্যাপক চাহিদা থাকায় ৬০ থেকে ৮০ টাকার শসা ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, ২০ থেকে ৩০ টাকার লেবুর হালি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। এভাবে অধিকাংশ সবজি বেশি দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে। পেঁপে ৫০ টাকা, টমেটোর কেজি ১২০ টাকা। ঢ্যাঁড়শ ৪০ থেকে ৫০, মিষ্টিকুমড়া ৩০ থেকে ৪০, শজনে ডাঁটা ৮০ থেকে ১২০ টাকা কেজি। লাউ ও চালকুমড়ার পিস ৬০ থেকে ৭০ টাকা, লালশাক, পাট ও কচুশাকের আঁটি ১৫ থেকে ২০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে বলে খুচরা বিক্রেতারা জানান। আগামী সপ্তাহ থেকে শসা ও লেবুর দাম কমে আসতে পারে বলে ধারণা বিক্রেতাদের।
বাজারে অতিরিক্ত দামের কারণ জানতে চাইলে কাওরান বাজারের একজন ব্যবসায়ী বলেন, একে ঈদের সময় থেকে এখন পর্যন্ত রাস্তায় যানজট, ট্রাকে করে পরিবহন করার ভাড়া অনেক বেশি, সে কারণে ঢাকায় কাঁচা মরিচ তুলনামূলক কম আসছে। এছাড়া মৌসুমের শেষ, খেতে একেবারে শেষ সময় চলছে মরিচের। অনেক খেতের মরিচ শেষ হয়ে গেছে, নতুন করে লাগানো গাছে এখনো মরিচ আসতে শুরু করেনি। এসব কারণে পাইকারি বাজারেই কাঁচামরিচের সরবরাহ অনেক কমে গেছে। পাশাপাশি যে সময় নতুন করে মরিচ লাগানোর সময় ছিল, সে সময়ে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে কৃষক সঠিক সময়ে কাঁচা মরিচ লাগাতে পারেনি। সে সময় যদি কাঁচা মরিচের গাছ লাগানো যেত তাহলে হয়তো খেতের নতুন মরিচ এতদিন বাজারে চলে আসত। এখন বাজারে নতুন মরিচ আসতে আরো বেশ কিছুদিন সময় লাগবে। যতদিন পর্যন্ত নতুন মরিচ না আসছে, ততদিন পর্যন্ত সরবরাহ কম থাকায় কাঁচামরিচের দাম এমন বাড়তিই থাকবে।
একজন বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, ‘কয়েক দিন টানা মাংসা খাওয়া হয়েছে। এখন সবজি কেনা দরকার। কিন্তু সব সবজির দামই বাড়তি। আবার সবজির চেহারাও ভালো মনে হচ্ছে না। কয়েকটা দোকান ঘুরলাম এখনো কিছুই কিনিনি।’
অন্যদিকে, আলুর দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে। গত সপ্তাহে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে। ভালো মানের আলুর দাম কেউ কেউ ৭৫ টাকা কেজিও হাঁকছেন। বিক্রেতারা বলছেন, আলুর দাম সামনে আরো বাড়তে পারে।
আদা ও রসুনের দামও ঈদের আগে হু হু করে বেড়েছিল। বর্তমানে তা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ঈদের আগে আদার দাম কেজিপ্রতি ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকা উঠলেও তা কমে এখন ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রসুনের দামও কেজিতে কিছুটা কমেছে। ঈদের আগে রসুন বিক্রি হচ্ছিল ২৫০ টাকায়, যা বর্তমানে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর দেশি পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। বর্তমানে পেঁয়াজের কেজি ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। ঈদের আগে মুরগির দাম কিছুটা কমলেও তা বাড়তে শুরু করেছে। ঈদের আগে ও পরে ব্রয়লার মুরগির ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে তা কিনতে হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকায়। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে। বাজারে দেশি মুরগি খুবই কম, দামও চড়া। দেশি মুরগির কেজি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা।
কারওয়ান বাজারের একজন মুরগি বিক্রেতা বলেন, দাম এখন তুলনামূলক কম। আগামী সপ্তাহ থেকে মুরগির চাহিদা বাড়বে, দামও বাড়বে।’ কোরবানির ঈদের পর গরুর মাংসের চাহিদা কম। তবে দামে হেরফের নেই। ৮০০ টাকা কেজি দরেই গরুর মাংস বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। দর থেকে দাম করলে ৫ থেকে ১০ টাকা কম রাখছেন। মালিবাগ বাজারে মাংস বিক্রেতা বলেন, ‘বিক্রি খুব কম। দামও যদি কমায় তাহলে লোকসানে পড়ে যাবো। আগে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচটি গরু জবাই দিতাম। ঈদের পর আজই প্রথম গরু জবাই দিয়েছি। মাত্র একটা গরু কেটে বিক্রি করছি। ক্রেতাদের চাহিদা যদি বাড়ে আরো জবাই দেব।’
মুরগি ও মাংসের বাজারে কেনাবেচা কম হলেও মাছের বাজারে ক্রেতাদের ভিড় অনেক। ঈদের পর মাছের চাহিদা বেড়েছে। ফলে দামও কিছুটা বেশি। বাজারে এক থেকে দেড় কেজি ওজনের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজি। এর চেয়ে বড় রুই কিনতে হলে ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকা গুনতে হবে ক্রেতাকে। ইলিশের দাম বাড়তিই রয়েছে। ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম কেজিপ্রতি ১ হাজার ৪০০ টাকা হাঁকছেন বিক্রেতারা। এক কেজি বা তার বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ টাকা দরে। কাতল মাছের কেজি ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা, পাঙ্গাস ২০০ টাকা, পাবদা ৪০০ টাকা, চিংড়ি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বোয়াল ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।