ঢাকা ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দেশে জঙ্গি হামলার শঙ্কা

আনসার আল ইসলামের সক্রিয় তিন সদস্য গ্রেপ্তার
দেশে জঙ্গি হামলার শঙ্কা

নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলামে’র সক্রিয় তিন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে র‌্যাব-১৫ কক্সবাজার ও র‌্যাব-৭ চট্টগ্রামের যৌথ টিম। গত বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজার সদরের চৌফলদন্ডী হতে তাদের গ্রেফতার ও এ সময় উগ্রবাদী পুস্তিকা, লিফলেট ও বিস্ফোরক তৈরির ম্যানুয়ালও উদ্ধার করা হয়েছে। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলো দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিভিন্ন জেলায় জঙ্গি হামলার নাশকতার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কক্সবাজারে বৈঠক করতে আসা এ তিনজনকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাব ফোর্সেস আইন ও গণমাধ্যম শাখা পরিচালক আরাফাত ইসলাম। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, জামালপুরের ইসলামপুরের আবদুল ওহাবের ছেলে মো. জাকারিয়া মন্ডল, ভোলার বোরহান উদ্দিনের নুরুল আমিনের ছেলে মো. নিয়ামত উল্লাহ ও ফেনীর সোনাগাজীর ইদ্রিস আলীর ছেলে মো. ওজায়ের।

এ সময় উগ্রবাদী ১০টি বই, ২৯টি লিফলেট, একটি ডায়েরি, দুটি মাদ্রাসা পরিচয়পত্র, দুটি এনআইডি, একটি এন্ড্রয়েড ও একটি বাটন মোবাইল এবং ৪ হাজার ৫৯০ টাকা উদ্ধার করা হয়। গতকাল শুক্রবার দুপুরে র‌্যাব-১৫ কক্সবাজার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব ফোর্সেস আইন ও গণমাধ্যম শাখা পরিচালক আরাফাত ইসলাম বলেন, র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১৫ এবং র‌্যাব-৭ এর যৌথ আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কক্সবাজারের চৌফলদন্ডি এলাকায় অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলামে’র সক্রিয় তিন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার করা হয় উগ্রবাদী পুস্তিকা, লিফলেট ও বিস্ফোরক তৈরির ম্যানুয়াল।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়, তারা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলামে’র সক্রিয় সদস্য। তারা আফগানিস্থানে তালেবানের উত্থানে উদ্বুদ্ধ হয়ে আল কায়েদা মতাদর্শের জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলামে’ যোগদান করে। র‌্যাবসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত অভিযানের ফলে আনসার আল ইসলামর কার্যক্রম প্রায় স্তিমিত হয়ে পড়ে। ফলে সংগঠনের নতুন সদস্য সংগ্রহসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করতে ব্যহত হচ্ছে বিধায় তাদের কার্যক্রমকে চলমান রাখতে আনসার আল ইসলাম মতাদর্শী ‘আস-শাহাদাত’ নামে নতুন একটি জঙ্গি গ্রুপ তৈরি করে নতুন সদস্য সংগ্রহসহ দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। এই গ্রুপটি পার্শ্ববর্তী একটি দেশ হতে পরিচালিত হচ্ছে এবং এই সংগঠনের সদস্য সংখ্যা আনুমানিক ৮৫-১০০ জন। এই গ্রুপটির উদ্ভাবক হলেন পার্শ্ববর্তী দেশের নাগরিক হাবিবুল্লাহ এবং কথিত আমির সালাহউদ্দিন। তিনি আরো জানান, এছাড়াও তারা বাংলাদেশকে এই সংগঠনের একটি শাখা বলে দাবী করে। এই গ্রুপটির বাংলাদেশের আঞ্চলিক শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত আমির ছিলেন র‌্যাব কর্তৃক পূর্বে গ্রেফতারকৃত ইসমাইল হোসেন। এই গ্রুপের অন্যান্য সদস্যরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছে। তারা বিভিন্ন সময় অনলাইনে বিভিন্ন উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্য দেখে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনের সদস্যদের মাধ্যমে উক্ত সংগঠনে যোগদান দেয়। পরবর্তীতে তারা আনসার আল ইসলামের নাম ব্যবহার না করে ‘আস-শাহাদাত’ গ্রুপের নামে সদস্য সংগ্রহ ও দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশে ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠা করা। এই লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের উপর নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অপব্যাখ্যার মাধ্যমে ভুল বুঝিয়ে সংগঠনের সদস্যদের ও নতুন সদস্য সংগ্রহ করে তাদের বিভিন্ন অপব্যাখা ও মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে দেশের বিচার ও শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে বিতৃষ্ণা তৈরি করে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করার জন্য সদস্যদের উগ্রবাদী করে তুলত। এ উদ্দেশ্যে সংগঠনের সদস্যদের তারা বিভিন্ন উগ্রবাদি পুস্তিকা, মুসলমানদের উপর নির্যাতন ও উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্যের ভিডিও বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ, টেলিগ্রাম ও বিপ গ্রুপের মাধ্যমে সরবরাহ করতো। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তারা ধর্মীয় স্থাপনা, বাসা বা বিভিন্ন স্থানে সদস্যদের নিয়ে গোপন সভা পরিচালনা করে। গ্রেফতারকৃতরা তাদের তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে নতুন গোপনীয় এ্যাপসের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করত এবং সংগঠনের সকল প্রকার নির্দেশনা এই এ্যাপসের মাধ্যমে প্রদান করা হতো বলে জানায়।

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা গ্রেপ্তারকৃতদের বরাতে আরো জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ও নেতৃস্থানীয় অনেক সদস্য গ্রেফতার হয়। যেহেতু কিছু সংখ্যক সদস্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয়েছে, তাই এই সংগঠনটিকে তারা পুনরুজ্জীবিত করতে নতুন রিক্রুটিং করছে। উঠতি বয়সী কিশোরদের অপব্যাখা দিয়ে সহজে ব্রেন ওয়াশের মাধ্যমে ভুলপথে নেয়া যায় বিধায় কোমলমতি কিশোরদের তারা প্রথমে টার্গেট করতো। তাই এই সংগঠনের বেশিরভাগ সদস্যই ১৯-২০ বছর বয়সী তরুণ এবং মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষক। সাধারণ লেখাপড়ায় শিক্ষিত উগ্র মনোভাবাপন্ন লোকজনকে আকৃষ্ট করার জন্য দেশ বিরোধিতাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতো। এ সংগঠনে মাদ্রাসা শিক্ষক সদস্যগণ অত্যন্ত সু-কৌশলে মাদ্রাসাপড়ুয়া কোমলমতি ছাত্রদের এ বিষয়ে অনুপ্রাণিত করে আসছে। এ জন্য তারা সংগঠনের সদস্যদের গোপনে শারীরিক প্রশিক্ষণ প্রদান করতো বলে জানায়।

তারা আরো জানায়, বিভিন্ন দেশের সমমনা ব্যক্তিদের সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখতো এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন উগ্রবাদী গ্রুপে তাদের বিচরণ ছিল। ঈদের ছুটিতে মাদ্রাসার বন্ধ থাকায় গ্রেফতারকৃতরা সকলে ছুটিতে বাড়িতে যায়। ছুটি শেষে পুনরায় মাদ্রাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে মাদ্রাসায় না গিয়ে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সংগঠনের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি, চাঁদা আদায়, দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা এবং বিভিন্ন নীতি নির্ধারণী গোপন বৈঠকের উদ্দেশ্যে জঙ্গি সংগঠনটির বাংলাদেশের পরবর্তী সম্ভাব্য আমিরের আহ্বানে সাড়া দিয়ে গ্রেফতারকৃতরা কক্সবাজারে একত্রিত হয়েছিল। আর গোপন বৈঠক চলাকালীন সময়ে র‌্যাব কর্তৃক গ্রেফতার হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত