ঢাকা ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাজেট বক্তৃতায় যা বললেন অর্থমন্ত্রী

বাজেট বক্তৃতায় যা বললেন অর্থমন্ত্রী

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। মন্ত্রী বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে মুদ্রানীতিতে এরইমধ্যে সংকোচনমূলক নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। নীতি সুদহার (রেপো) উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়িয়ে ৮.৫ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে এবং ব্যাংক সুদের হার সম্পূর্ণরূপে বাজারভিত্তিক করা হয়েছে।’ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনার সমাপনী বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তিনি বলেন, ‘বাজেট আমরা এমন এক সময়ে প্রণয়ন করছি, যখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, চলমান মধ্যপ্রাচ্য সংকটসহ নানা বৈশ্বিক সংকটের কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশও মূল্যস্ফীতিসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে।’ অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘রফতানি উৎসাহী করা এবং প্রবাস আয়ে গতি সঞ্চারের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ডলারের বিনিময় হারের ক্ষেত্রে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়েছে।’ মুদ্রানীতির সংকোচনমূলক উদ্যোগের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে রাজস্ব নীতিতেও সহায়ক নীতিকৌশল অবলম্বনের কথা তুলে ধরেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, ‘বাজেট ঘাটতি হ্রাসকরণ, কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যয় নিরুৎসাহিতকরণ এবং বিভিন্ন খাতে কৃচ্ছ্রসাধনের উদ্যোগ- আমাদের গৃহীত এসব নীতি-কৌশলের ফলে আশা করছি, আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে নেমে আসবে।’ অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে সংকোচনমূলক নীতি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও এ কথা অনস্বীকার্য যে, দীর্ঘমেয়াদে এ পন্থা অবলম্বন করা হলে প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ হয়ে যেতে পারে।’ ‘২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদের প্রয়োজন ধারাবাহিক উচ্চ প্রবৃদ্ধি’ উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন এবং প্রবৃদ্ধির গতি ধরে রাখা- এ দুটি আপাত বিপরীতমুখী লক্ষ্যের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার কঠিন চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে, আমরা এবারের বাজেট প্রণয়ন করেছি।’ মাহমুদ আলী বলেন, ‘গত দেড় দশকে জিডিপি’র গড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬.৭ শতাংশেরও বেশি; জিডিপি’র মানদ-ে ২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৩তম বৃহৎ অর্থনীতি।’ এবারের বাজেটে সম্পদ সঞ্চালনের ক্ষেত্রে নির্বাচনি ইশতেহারে উল্লিখিত অগ্রাধিকারগুলো অর্জনের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার কথাও জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ভৌত ও সামাজিক অবকাঠামো সৃষ্টি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দক্ষতা উন্নয়ন, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, গবেষণা ও উদ্ভাবন উৎসাহিতকরণ, উৎপাদনশীবি ইত্যাদি খাতে প্রস্তাবিত বাজেটে আমরা প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রেখেছি।’ তিনি বলেন, ‘২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মোট বরাদ্দ বৃদ্ধির হার ১১.৬ শতাংশ হলেও শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ এবং স্বাস্থ্য খাতে বাড়ানো হয়েছে ৩৯ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেটে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্য নিয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, স্থানীয় সরকার ও পল্লি উন্নয়ন, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইত্যাদি খাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ প্রদানের চেষ্টা করেছি। পাশাপাশি, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর আমরা যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করেছি।’ অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো- দেশে শিল্পায়ন ও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের জন্য যে কাঙ্ক্ষিত অনুকূল ও সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তার সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা। প্রস্তাবিত বাজেটে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সহায়ক অবকাঠামো উন্নয়নে আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সম্পদ সঞ্চালনের পরিকল্পনা করেছি।’ এসব উদ্যোগের ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি আগামী অর্থবছরে ৬.৭৫ শতাংশে এবং মধ্য মেয়াদে ৭.২৫ শতাংশে পৌঁছাবে বলে আশা করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার এবং স্মার্ট সমাজব্যবস্থা- এ চারটি ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ স্থাপিত হবে, তাতে মাথাপিছু আয় হবে কমপক্ষে ১২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার, ‘চরম দারিদ্র্য’ নেমে আসবে শূন্যের কোঠায় এবং দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকবে ৩ শতাংশেরও কম মানুষ। এ লক্ষ্যে উৎপাদনশীলতা ও আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি দারিদ্র্যের হার কমানোর ওপর আমরা সবসময় বিশেষ নজর দিয়ে আসছি। উন্নয়নের সুফল সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে আমাদের সরকার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন কৌশল অবলম্বন করে আসছে।’

উন্নত বিশ্বে প্রচলিত জনসাধারণের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর খাতে করভার আরোপের ধারণা হতে এবং দেশের পরিবেশ দূষণ হ্রাস করার উদ্যোগ হিসেবে প্রস্তাবিত বজেটের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন তিনি। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘২০২৩-২৪ অর্থবছরে একাধিক গাড়ির ক্ষেত্রে আরোপিত পরিবেশ সারচার্জ আগামী অর্থবছরেও বহাল রাখা হয়েছে।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত