ঢাকা ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পাহাড়ের পাদদেশে তিন লক্ষাধিক মানুষের বসবাস

পাহাড়ের পাদদেশে তিন লক্ষাধিক মানুষের বসবাস

কক্সবাজার শহর ও একাধিক উপজেলায় পাহাড় কেটে বা পাদদেশে ঝুঁকিতে বাস করছে প্রায় তিন লক্ষাধিক মানুষ। ২০১৫ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত পাহাড় ধসে কক্সবাজারে ৫২ জনের করুণ মৃত্যু হয়েছে। প্রতি বছর বর্ষার শুরুতে ঝুঁকিতে বাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে মাইকিং করে দায়িত্ব শেষ করে জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা। ফলে বিভিন্ন সময় পাহাড় ধসে অনাকাঙ্ক্ষিত প্রাণহানীর ঘটনা এড়ানো যাচ্ছে না।

সর্বশেষ গত শুক্রবার ভোররাতে পাহাড় ধসে কক্সবাজার শহরের বাদশাহঘোনা এলাকায় স্বামী-স্ত্রীর করুণ মৃত্যু হয়েছে। পাহাড় কাটা বন্ধ করা না গেলে ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের সংখ্যা যেমন বাড়বে তেমনি পাহাড় ধসে মৃত্যুর সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়তে পারে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। জেলা প্রশাসন বলেছে বর্ষায় অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু এড়াতে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদে সরে যেতে বলা হয়েছে। কক্সবাজার জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সূত্র মতে, ২০১৫ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত সময়ে পাহাড় ধসে কক্সবাজারে ৫২ জনের করুণ মৃত্যু হয়েছে। তারমধ্যে ২০১৫ সালে পাঁচজন, ২০১৬ সালে পাঁচজন, ২০১৭ সালে চারজন, ২০১৮ সালে পাঁচজন, ২০১৯ সালে চারজন, ২০২১ সালে ১২ জন, ২০২২ সালে পাঁচজন। চলতি মাসের ১৯ জুন রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং ২১ জুন কক্সবাজার শহরের বাদশাহঘোনা এলাকায় পাহাড় ধসের ঘটনায় ১২ জনের মৃত্যু হয়। তবে, ২০২০ ও ২৩ সালে পাহাড় ধসে কতজন মারা গেছেন এমন কোনো তথ্য জেলা প্রশাসনে সংরক্ষিত নেই। আর চলতি বছরের এ সময় পর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যু রেকর্ড করেছে তারা। সে হিসাবে গত ৯ বছরে ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে। কক্সবাজার বন বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি সময় পর্যন্ত জেলায় ৪৭ হাজার ৯১৪ দখলদারের হাতে ধ্বংস হয়েছে ২৫ হাজার ৭ দশমিক ৬৯ একর বনভূমি। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চকরিয়া, রামু, ঈদগাঁও, উখিয়া, টেকনাফ, পেকুয়া এবং মহেশখালীতেও পাহাড় কেটে ঝুঁকিতে বসবাস বাড়ছে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কক্সবাজার পৌরসভার পাঁচটি ওয়ার্ডে। বর্ষা আসলেই ঢাকঢোল পিটিয়ে উচ্ছেদের হুমকি দেয় প্রশাসন। কিন্তু উচ্ছেদ তো দূরের কথা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও নেয়া হয় না। অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু এড়াতে ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের সরিয়ে নেয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজার জেলা সভাপতি সাংবাদিক এইচএম এরশাদ বলেন, প্রতি বছর জেলায় পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার কাজ শুধু বর্ষা এলেই শুরু হয়। তাও কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থাকে। শুষ্ক মৌসুমে আর কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ে না। ফলে অনেকটা বাধাহীনভাবে পাহাড় নিধন করে টাকার বিনিময়ে বসতির ব্যবস্থা করে দেয় প্রভাবশালীরা। এতে পরিবেশ ধ্বংসের পাশাপাশি অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। তাই পাহাড় কাটা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ ছাড়া এ দায় এড়ানো অসম্ভব। কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ ন ম হেলাল উদ্দিন বলেন, কক্সবাজারের পাহাড় ও ইসিএ সংরক্ষণে উচ্চ আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন হলে প্রতিবছর এত প্রাণহাণির ঘটনা ঘটত না। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা কেউ নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করছে বলে মনে হয় না। তবে, বরাবরের মতোই পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে বলে দাবি করেছে জেল প্রশাসন।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আতাউল গনি ওসমানী বলেন, পাহাড়ের ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের স্থায়ীভাবে সরিয়ে নেয়া একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রসেস। তারপরও ঝুঁকি এড়াতে কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে জেলা প্রশাসন। এ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি জরুরি সভার পর সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের প্রধান করে একটি উপকমিটিও গঠন করা হয়। এরইমধ্যে ঝুঁকপূর্ণ এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানান, নিজেরা সচেতন না হলে ঝুঁকি এড়ানো কঠিন। এ ক্ষেত্রে জনগণের মাঝে সচেতনতা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় পাহাড় কাটা বন্ধ করতে জনগণকে অনুরোধ জানিয়ে বেশি করে গাছ লাগানোর পরামর্শ দেন ডিসি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত