ঢাকা ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

কাপাসিয়ায় কাঁঠালের বাম্পার ফলন

হাসি কৃষকের মুখে
কাপাসিয়ায় কাঁঠালের বাম্পার ফলন

রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ও বিদেশে কাঁঠালের জন্য প্রসিদ্ধ এলাকা হিসেবে পরিচিত গাজীপুরের কাপাসিয়া। সবুজ শ্যামল গাজীপুরের কাপাসিয়ায় অন্যান্য বছরের মতো এবারও আমাদের জাতীয় ফল কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। কাপাসিয়ার কাঁঠাল শুধু বাংলাদেশের চাহিদাই পূরণ করে না বিদেশেও রপ্তানি হয়। এবার কাঁঠালের বিশাল একটি অংশ বিদেশে রপ্তানি হবে বলে ধারণা দিয়েছে ঢাকা থেকে কাপাসিয়া কাঁঠাল কিনতে আসা পাইকাররা। কাপাসিয়ার কাঁঠাল দেখতেই সুন্দর নয়, খেতেও সুমিষ্ট ও সুস্বাদু। বাংলাদেশের কাঁঠাল উৎপাদনের অন্যতম স্থান হচ্ছে গাজীপুরের কাপাসিয়া। বাংলাদেশের কাঁঠালের যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে তার বেশিরভাগ পূরণ করে থাকে কাপাসিয়ার কাঁঠাল। কাঁঠাল চাষে তেমন একটা পরিশ্রম করতে হয় না। উঁচু মাটিতে একবার একটি কাঁঠালের চারা রোপণ করলে ৪ থেকে ৫ বছর থেকে শুরু করে কমপক্ষে ৭০ থেকে ৮০ বছর অনায়াসে ফলন পাওয়া যায়। কাঁঠাল একটি পুষ্টিকর ফল। কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন থাকে। কাপাসিয়ার কাঁঠালে কোনো প্রকার কেমিক্যাল মিশানো হয় না বলে ভিটামিন অক্ষুণ্ণ থাকে। কাঁঠাল গাছের কাঠ আসবাবপত্র তৈরিতে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। কাঁঠাল দিয়ে সুস্বাদু পিঠা তৈরি করা হয়। এ এলাকার কৃষানিরা কাঁঠাল মৌসুমে প্রতি বাড়িতেই কাঁঠাল পিঠা তৈরি করে থাকেন। কাঁঠালের মৌসুম এলেই কাঁঠালের রসের মতো কৃষকের মনে হাসি ফোটে ওঠে। কাঁঠালের মৌসুমে কাপাসিয়ার প্রতি ঘরে ঘরে আনন্দের বন্যা বইতে থাকে। এ সময়টির জন্য উপজেলার কৃষক-কৃষানিরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন। কাপাসিয়ায় এমন কোনো গ্রাম নেই, যেখানে কাঁঠাল বাগান নেই বা কাঁঠাল চাষ হয় না। উপজেলার সবচেয়ে বেশি কাঁঠাল উৎপাদন হয় এমন স্থানগুলো হলো- বারিষাব, খিরাটী, খোদাদিয়া, বরুন, কান্দানিয়া, চাঁদপুর, কামড়া মাশক, ঘাটকুড়ি, রাওনাট, ভূবনেরচালা, জামিরারচর, সূর্য্যনারায়ণপুর, পাবুর, রাউৎকোনা, কাজাহাজী, চাকৈল, বড়জোনা, বড়চালা, দুর্গাপুর, তরগাঁও, নবীপুর, বাঘিয়া, মৈশন, উত্তরখামের, সোনারুয়া, পিরিজপুর, বেগুনহাটি, কড়িহাতা, কাপাসিয়া, সিংহশ্রী, রায়েদ, দরদরিয়া, চৌরাপাড়া, বড়হর, বাগেরহাট, ভুলেশ্বর, বেলাশী, কপালেশ্বর, গিয়াসপুর, বারাব, উজলী, কির্ত্তুনিয়া, গাওরার, ভেরারচালা, সোহাগপুর, টোক, সনমানিয়া, ঘাগটিয়া, নলগাঁও, তিলশুনিয়া, বর্জাপুর, বাঘুয়া, সিংগুয়া, কামারগাঁও, ঘোষেরকান্দি, গোসাইরগাঁও, নরোত্তমপুর, ফুলবাড়ীয়া, দক্ষিণখামের, চরখামের, কুশদী, রায়েদ, নামিলা, আড়ালিয়া, সাফাইশ্রী এলাকায়। কাপাসিয়ার কাঁঠাল দেখতে খুবই সুন্দর ও আকারে ভালো। এরই মধ্যে উপজেলার গ্রামে গ্রামে বিভিন্ন পাইকারের আনাগোনা বেড়ে গেছে। পাইকাররা উপজেলার গ্রামে গ্রামে ঘুরে কৃষকের কাছ থেকে কাঁঠাল ও কাঁঠাল বাগান কিনছেন। প্রকারভেদে একটি কাঁঠাল গাছে ৫০ থেকে দুই শতাধিক কাঁঠাল ধরে। বর্তমানে মাঝারি থেকে প্রকারভেদে একটি কাঁঠালের দাম ৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকার অধিক। কাপাসিয়া উপজেলা রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ৬৫ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে ঐতিহ্যবাহী শীতলক্ষ্যা নদীর দুই তীরে ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে ৩৫৭ বর্গকিলোমিটার জায়গাজুড়ে বিস্তৃত। এলাকার প্রতিটি ইউনিয়নের সব গ্রামের সর্বত্রই রয়েছে ছোট-বড় কাঁঠাল বাগান। কাঁঠাল উৎপাদনের জন্য কাপাসিয়ার মাটি উৎকৃষ্ট। কাপাসিয়ার কাঁঠাল বাগান দেখলে ও কাপাসিয়ার সুমিষ্ট কাঁঠাল খেলে মনে হয় এই মাটিতে যেন সৃষ্টিকর্তার অশেষ নেয়ামত রয়েছে। জমজমাট হয়ে জমে উঠছে কাপাসিয়ার সবগুলো ছোটবড় কাঁঠালবাজার এরই মধ্যে কাপাসিয়া, টোক, বারিষাব, সিংহশ্রী, রায়েদ, তরগাঁও, ঘাগটিয়া, সনমানিয়া, কড়িহাতা, দুর্গাপুর, চাঁদপুর তারাগঞ্জ, রাণীগঞ্জ, গিয়াসপুর, ত্রিমোহনী, আড়াল, খিরাটি, আমরাইদ, রাওনাট, বলখেলা, নারায়ণপুর অন্যতম। কাঁঠাল বাজারের দিকে তাকালে মনে হয় যেন উৎসব শুরু হয়েছে। যে বাংলাদেশের জমিনে কাপাসিয়ার কাঁঠালের স্বাদ উপভোগ করেননি তার জীবনটাই অপূর্ণ। কাপাসিয়ায় ভোর বেলা থেকে শুরু হয় কাঁঠছাল বিক্রি, রাত পর্যন্ত তা বিক্রি চলে। কাঁঠাল বিক্রি করতে আসা, ফজলু ও মোমেন মিয়া জানান, এবারের ভালো কাঁঠালের ফলনে আমরা খুশি, দামও পাচ্ছি ভালো। কিন্তু ভরা মৌসুমে আমরা এ দাম পাই না কারণ এ ফলটি দ্রুত পচনশীল। সরকার যদি ভরা মৌসুমে সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিত, তাহলে সবসময়ই আমরা ন্যায্যমূল্য পেতাম। কাঁঠাল কিনতে আসা পাইকার সাহাব উদ্দিন, আবুল হাসেম, মোহাম্মদ আলী জানান, বাজারে জায়গার অভাবে বেশি কাঁঠাল কিনে রাখতে পারি না। তাই আমরা বেশি কাঁঠাল কিনি না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত