সুসংবাদ প্রতিদিন

চাষ হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে দামি ‘মিয়াজাকি’ আম

প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার উত্তর বেতকা মামুদাদপুর এলাকায় চাষ হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম মিয়াজাকি। জাপানের বিখ্যাত এই আমের মিষ্টতা সাধারণ আমের চেয়ে প্রায় ১৫ ভাগ বেশি। একটি আম ৩৫০ গ্রাম পর্যন্ত বড় হয়। দক্ষিণ জাপানের কিয়োশু অঞ্চলের মিয়াজাকি নামকস্থানে এ আমের জন্ম। তাই এই আমের নাম মিয়াজাকি। এই আমটি সারা পৃথিবীতে বিখ্যাত হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হলো এই আমের মূল্য। কারণ দামের বিচারে সবচেয়ে মূল্যবান আম হলো এটি। এই জাতের এক পিস আমের দাম প্রায় ২১ হাজার টাকা। তবে কেজি দরে নিলে আরো বেশি দাম দিতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে মিয়াজাকি আম ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা প্রতি কেজি দরে বিক্রি হয়। জাপানের ট্রেড প্রমোশন ব্যুরোর তথ্য বলছে, এই আমে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, বিটা ক্যারোটিন ও ফলিক এসিড আছে। তাই এটি চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার ওই বাগানে ৪টি আমগাছে এ বছর ৩০ কেজি পরিমাণ মিয়াজাকি আম উৎপাদিত হয়েছে বলে ওই বাগান শ্রমিকদের সূত্রে জানা গেছে। তবে রকির বাগানে ৭০০ টাকা কেজি দরে মিলছে এই বিখ্যাত মিয়াজাকি আম। রকির বাগানে এই মিয়াজাকি আম ছাড়াও রয়েছে বিখ্যাত ব্রুনাই কিং জাতের আম। এটি বিখ্যাত এই কারণে যে এক একটা আমের ওজন ৪-৫ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই আম রকির বাগানে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। রকির বাগানে আম ৩ থেকে সাড়ে ৪ কেজি ওজন পর্যন্ত হয়ে থাকে। রকি সর্বোচ্চ একটি আম ১৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছেন। গার্মেন্টস ব্যবসায়ী সাব্বির হোসেন রকি মুন্সীগঞ্জের টংগিবাড়ী উপজেলার দক্ষিণ বেতকা গ্রামের আব্দুল লতিফ শেখের ছেলে। নারায়ণগঞ্জে রয়েছে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বাজারে ফরমালিনযুক্ত ফলের ছড়াছড়ির খবর জানতে পেরে পরিবারের সদস্যদের ফরমালিনমুক্ত ফল খাওয়াতে শখের বশে ২০২০ সালে তার বাড়ির আঙিনা ও পুকুর পারের পরিত্যক্ত জমি ও ভিটায় আমসহ বিভিন্ন ফলের চাষ শুরু করেন। এখন তার আম বাগানে রয়েছে ৭০০টি আম গাছ। যেসব গাছ থেকে এখন বাণিজ্যিকভাবে আম বিক্রি শুরু হয়েছে। এ বছর ৩ লাখ টাকার উপরে আম বিক্রি হবে বলে আশা রকির পরিবারের। রকির বাগানে এখন উৎপাদিত হচ্ছে ২০-২৫ জাতের দেশি-বিদেশি আম। এর মধ্যে মিয়াজাকি কিং চাকাপাত, চিয়াংমাই, আমেরিকান রেড পালমাল, কিউজাই, ব্রুনাই কিং, বারি-৪, বারি-১১, ফোরকেজি, গোরমতি, ব্যানানা, আল ফ্রনচো, ডকমাই, থাই কাঁচামিঠা, কাটিমন উল্লেখযোগ্য। দেশি জাতের আমের মধ্যে হাড়িভাঙ্গা, সুরমা, ফজলি, আশ্বিনী, আম্রপালি, ল্যাংড়া, নাক ফজলি, গুটি অন্যতম। এছাড়া তার বাগানে পাওয়া যাচ্ছে এসব আমের চারাও। সরেজমিন দেখা যায়, সাব্বির হোসেন রকির আম বাগানে গাছে গাছে ঝুলে রয়েছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রকারের আম। সাব্বির হোসেন রকি ব্যবসায়ী কাজে সংযুক্ত আরব আমিরাত (দুবাইয়ে) অবস্থান করছেন বলে জানান তার পরিবার। কিন্তু তার অনুপস্থিতেও থেমে নেই গাছের পরিচর্যা। একদিকে তার আম গাছে চলছে ওষুধ স্প্রে অন্যদিকে চলছে গাছ হতে আম সংগ্রহ। রকি বাড়ির পাশের পরিত্যক্ত ভিটার পাশাপাশি তার বাড়ির পাকা উঠানে গর্ত করেও আম গাছ লাগিয়েছেন। কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে সমন্বিত রোগবালাই দমন ব্যবস্থার মাধ্যমে কীটপতঙ্গ দমন করেছেন। আমগাছগুলো একদিকে তার বাড়ির আঙিনার সৌন্দর্য বাড়িয়েছে, অন্যদিকে বাহারি আম বিশেষ করে লাল রঙের আমের সৌন্দর্য মানুষের চোখ জুড়াচ্ছে। তার বাগানের আম দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছে মানুষ। অনেকে আমবাগান দেখতে এসে কিনেও নিয়ে যাচ্ছেন। রকির আম বাগানের শ্রমিক আসলাম হোসেন বলেন, ৪ বছর আগে আমরা এখানে আমবাগান শুরু করি। এখনও প্রতিনিয়তই আমরা আমের চারা বাগানে বৃদ্ধি করছি। এই পর্যন্ত আমাদের বাগানে বিভিন্ন প্রকারের দেশি-বিদেশি ৭০০ প্রকারের চারা রোপণ করেছি। এগুলা বেশিরভাগই বিদেশি জাতের। বিভিন্ন জাতের আম পাওয়া যায় আমাদের বাগানে। যাতে সারাবছর আমাদের বাগানে আম পাওয়া যায় আমরা সেভাবেই বাগানটাকে সাজিয়েছি। দেখভালের দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ নেয়ামত উল্লাহ বলেন, আমরা সাধারণত বিষমুক্ত আম খাওয়ার জন্য এই আমবাগান শুরু করি। এখন আমরা বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করছি। আমরা আমে তেমন কোনো কিটনাশক স্প্রে করি না। কোনো ফরমালিন দেই না। বিভিন্ন জাতের পোকাণ্ডমাকড় দমনে আমরা সমন্বিত রোগবালাই দমন ব্যাবস্থাপনা ব্যবহার করছি। যাতে আম বিষমুক্ত থাকে। আমরা অর্গানিকভাবে চাষাবাদ করছি। তিনি আরো বলেন, চার বছর আগে আমরা রাজশাহী প্লাস সাভার থেকে উন্নতমানের বিদেশি জাতের আম চারা এনে চাষাবাদ শুরু করি। আমরা ধীরে ধীরে আম বাগানগুলোকে সম্প্রসারণ করছি। এখন আমাদের আম বাগানে ৭০০ আম গাছ রয়েছে এবং এখানে উন্নতমানের আম চারাও পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের বাগানে পৃথিবীর সবচেয়ে দামি মিয়াজাকি জাতের ৪টি আমগাছে এ বছর ৩০ কেজির মতো আম হয়েছে।