বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ বার্ন ইউনিট চট্টগ্রাম

প্রকল্পের চূড়ান্ত নকশা অনুমোদন সম্পন্ন

প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  তামীম রহমান, চট্টগ্রাম

‘বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ বার্ন ইউনিট চট্টগ্রাম’ প্রকল্পের নকশার চূড়ান্ত অনুমোদন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের গোঁয়াছি বাগান এলাকায় ১৫০ বেডের বিশেষায়িত এ হাসপাতাল প্রকল্পের নকশার চূড়ান্ত অনুমোদন চুক্তি স্বাক্ষর সম্পন্ন হয়েছে। সম্প্রতি শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এ চুক্তি স্বাক্ষর সম্পন্ন হয়। বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড এবং স্থাপত্য অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী চীন সরকার কর্তৃক প্রস্তাবিত ভবনের নকশায় কিছু পরিবর্তনপূর্বক চূড়ান্ত অনুমোদন চুক্তি করা হয়। চীন সরকারের অর্থায়নে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট নির্মাণকাজ শুরু হচ্ছে চলতি বছরের জুলাই মাসে। প্রায় ১৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫০ শয্যার এ হাসপাতালটিতে থাকবে অত্যাধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা। মূলত নগরীর চট্টেশ্বরী সড়কে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের প্রধান ছাত্রাবাসের উত্তর পাশের (গোয়াছি বাগান নামে পরিচিত) প্রস্তাবিত স্থানে নির্মাণ হবে এ বার্ন ইউনিট। এতে থাকবে একটি বহির্বিভাগ, একটি আন্তঃবিভাগ, একটি জরুরি বিভাগ, ১০টি আইসিইউ বেড, পুরুষদের জন্য ১০টি এইচডিইউ বেড, নারীদের জন্য ১০টি এইচডিইউ বেড এবং শিশুদের জন্য পাঁচটি এইচডিইউ বেড। চুক্তিজানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দিন জানান, বার্ন ইউনিট প্রকল্পের নকশার চূড়ান্ত অনুমোদনের চুক্তি স্বাক্ষর সম্পন্ন হয়েছে। আগামী জুলাইয়ের শেষের দিকে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হবে। এছাড়া আগস্টের শেষ সপ্তাহে অথবা সেপ্টেম্বরে নির্মাণ কাজ শুরু করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২৩ মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. হারুন উর রশিদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বার্ন ইউনিট প্রকল্পের জন্য ১ হাজার ৬৫ জন জনবলের প্রস্তাবনা পাঠানো হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। এর আগে গত ৯ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় বার্ন ইউনিট প্রকল্পের অনুমোদন দেয় সরকার। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ২৮৪ কোটি ৭৬ লাখ ৫১ হাজার ৫৫৫ টাকা। এর মধ্যে চীন দেবে ১৭৯ কোটি ৮৩ লাখ ১৯ হাজার ৬০০ টাকা এবং সরকার দেবে ১০৪ কোটি ৯৩ লাখ ৩১ হাজার ৯৫৫ টাকা। এছাড়া চীন থেকে আমদানিতে ট্যাক্স ভ্যাট বাবদ ৭০ কোটি টাকাসহ সংযোগ রাস্তা, সীমানা প্রাচীর, বৈদ্যুতিক সংযোগ, দুটি অ্যাম্বুলেন্স ও কেমিক্যাল রিঅ্যাজেন্ট আনার খরচ ধরা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ছয় তলা ভবন, জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ, ল্যাবরেটরি, অপারেশন থিয়েটার, ১০টি আইসিইউ বেড, ১০টি পুরুষ এইচডিইউ বেড, ১০টি মহিলা এইচডিইউ বেড ও ৫টি শিশু এইচডিইউ রয়েছে। এছাড়া ১১৫ বেডের ওয়ার্ডে মহিলাদের জন্য বেড রাখা হয়েছে ৪৫টি।

জানা গেছে, সরকারের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ আলাদা অবকাঠামোতে চট্টগ্রামে বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট গড়ে তোলার আগ্রহ প্রকাশ করে চীন সরকার। এরপর চীনা প্রতিনিধি দল ২০১৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর চমেক হাসপাতাল এলাকায় সম্ভাব্য স্থান পরিদর্শন করেন। এরপরের কয়েক বছরে চীনা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের কয়েক দফা বৈঠক হলেও বার্ন ইউনিটের নির্মাণ কার্যক্রম স্থান নির্বাচন জটিলতায় আটকে ছিল। পরবর্তীতে ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি কেন্দ্র তৈরির জন্য চমেক হাসপাতাল এলাকার গোঁয়াছি বাগান এলাকায় স্থান নির্বাচন করে চমেক হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের জানায় চীন সরকার। এরপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে চট্টগ্রামে এসে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন, ভবনের নকশা অনুযায়ী সবকিছু পরিমাপ ও সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো যাচাই করে চীনা প্রতিনিধিদল। গত ৩০ মার্চ এ বিষয়ে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের পেছনের খালি জমি নির্ধারণ করা হয়। ২০১৮ সালের ২৮ মার্চ বাংলাদেশস্থ চীনা দূতাবাস বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট করার আগ্রহ প্রকাশ করে। প্রায় চার হাজার বর্গফুট জমিতে চারতলা বিশিষ্ট বিশেষায়িত ইউনিটটি নির্মাণের নকশাও তৈরি করা হয়। কিন্তু নির্ধারিত স্থানে প্রয়োজনের তুলনায় কম জমি থাকায় জটিলতা সৃষ্টি হয়।

জটিলতা নিরসনে ২০১৯ সালের ১৫ মার্চ চীনা প্রতিনিধি দলের সাথে বৈঠক করে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সুরাহা না হওয়ায় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন চীনের প্রতিনিধিরা। পরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও একাধিকবার আলোচনা করে প্রকল্পের নকশা পরিবর্তনের বিষয়ে চীন কর্তৃপক্ষকে রাজি করাতে পারেনি। ২০২০ সালের জুলাইয়ে চীন সরকারের পক্ষ থেকে চট্টগ্রামে ‘বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ বার্ন হাসপাতাল’ নির্মাণের বিষয়ে আবারও প্রস্তাব দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত। এর ভিত্তিতে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সম্ভাব্য চারটি স্থানের প্রস্তাবনা দেয়। ২০২২ সালে জুনে সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ বার্ন ইউনিট নির্মাণের বিষয়ে জোরালো আলোচনা হয়। ওই বছরের ১১ জুন চীনা প্রতিনিধি দলের দুই প্রকৌশলী প্রস্তাবিত জমি পরিদর্শন করেন। চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটটি ২৬ শয্যার। চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম বিভাগের ৯টি জেলার প্রায় ৪ কোটি মানুষ নির্ভর করেন এই বার্ন ইউনিটের উপর। চমেক হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, এখানে রোগীর চাপ অনেক বেশি। ২৬ শয্যার ইউনিটে প্রতিদিন ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৬০ ছাড়িয়ে যায়। সরকারিভাবে ২৬ জনের সেবা দেওয়ার জন্য যে জনবল দরকার তাও নাই আমাদের। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের যথেষ্ট সাপোর্ট দেয়। আমরা যখন যা চাই তখন তাই দেন। চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান জানান, চীন ১৮১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে এ প্রকল্পে। আশা করছি, আগামী জুলাইয়ে কাজ শুরু করতে পারব। কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে ২৪ মাস লাগবে শেষ হতে। সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকবে এ বিশেষায়িত বার্ন ইউনিটটিতে। হাসপাতালের সব যন্ত্রপাতি দিবে চীন সরকার। আমরা শুধু হাসপাতালে যাতায়াতের রাস্তা ও নিরাপত্তা দেওয়াল নির্মাণ করবো। তিনি আরও জানান, কিছুদিন আগে চীনের অর্থমন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দল এসেছিলেন।