ভারতের নীতিনির্ধারকরা বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের জনগণকে তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখে বলে অভিযোগ তুলেছে বিএনপি। দলটির মুখপাত্র, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, অভিন্ন নদীর পানি, সীমান্ত হত্যা, বাণিজ্যিক ভারসাম্যসহ নানা সমস্যার সমাধানে আগ্রহী নয় তারা। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত বিষয়গুলোকে পাশ কাটিয়ে বাংলাদেশের বুকচিড়ে রেললাইন স্থাপন দেশের স্বাধীনতা ও জনগণের স্বাধীনতাকে অবজ্ঞা করার শামিল। গতকাল বুধবার রাজধানীর নয়া পল্টনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘ইউরোপে তো কোনো বর্ডার নেই, তারা কি বিক্রি হয়ে গেছে’ শীর্ষক বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে রিজভী বলেন, ‘ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলো তো কাছাকাছি অর্থনীতি, সংস্কৃতি এবং একই বর্ণের দেশ। কিন্তু তুরস্ককে নেওয়া হয়নি কেন? ইউরোপের শেনজেনের অন্তর্ভুক্ত দেশ— যাদের অভিন্ন মুদ্রা, ভিসা ছাড়াই গমনাগমন, বিচার ব্যবস্থাসহ এবং চাকরি-বাকরির ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। কিন্তু বেশকিছু পূর্ব ইউরোপের দেশ এর অন্তর্ভুক্ত নয়।’ ‘বিভিন্ন ইনডেক্সগুলো একই রকম নয়। তাই জনগণের প্রতিবাদ সত্ত্বেও ভারতকে রেল করিডোর সুবিধা প্রদানের চুক্তি বাংলাদেশের ভুখণ্ড দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে অস্ত্রশস্ত্র, সৈন্য প্রেরণ করতে সক্ষম হবে। এর ফলে বাংলাদেশের নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পতিত হবে। বাংলাদেশের জনগণ জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এই চুক্তি কোনো দিনই মেনে নেবে না।’ বলেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘আফ্রিকা থেকে বর্ণবাদ বিদায় নিলেও ভারতের রাজনীতি এবং সামাজিক পরিসরে বর্ণবাদ বহাল রয়েছে। যদিও ভারতের সংবিধান সেক্যুলার। জার্মানিতে হিটলারের নাৎসীবাদ গড়ে উঠেছিল আর্য-রক্তের মহিমাকীর্তণে। ভারতে এখন বর্ণবাদের করালগ্রাসে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ক্ষতবিক্ষত। বিগত নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা সরাসরি মুসলমান, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধদের বিরুদ্ধে বক্তব্য রেখেছেন। বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক দলই সাম্প্রদায়িক বক্তব্য রাখে না।’ ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে স্বাক্ষরিত সমঝোতাণ্ডস্মারক প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ‘এখন সেই (ভারত) দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ‘ডামি’ সরকারের প্রধানমন্ত্রী নানা চুক্তি ও সমাঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছেন। বাংলাদেশের জনগণ এহেন দুই সরকারের সমাঝোতার উদ্যোগ অসম এবং বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী বলে মনে করে। এতে বাংলাদেশের মানুষ তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। ট্রানজিট ও এশিয়ান হাইওয়ের নামে শেখ হাসিনা মূলত ভারতকে করিডোর দিচ্ছেন। যা চিরদিনের জন্য বাংলাদেশের মানুষকে ভারতের ক্রীতদাস বানানোর গভীর অভিসন্ধি।’ তিনি উল্লেখ করেন, ১৯৯৬ সালে ভারতের একটি মাসিক প্রকাশনার রিসার্চ অ্যানালিস্ট সঙ্গীতা থাপলিয়ান লিখেছিলেন, ‘১৯৯৬ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতা গ্রহণকে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের ট্রানজিট পাওয়ার একটি সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হবে।’ এই রেলওয়ে করিডোর স্থাপনের চুক্তি তারই প্রতিফলন।’
বিএনপিনেতা রিজভী আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ কখনই দিল্লির অধীনতা ও বশ্যতা মানেনি এবং ভবিষ্যতেও মানবে না। যেমন- পিন্ডির বশ্যতা মানেনি। অসংখ্য আত্মাহুতি দিয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতা। তাই এই স্বাধীনতাকে দুর্বল করা যাবে না। বিএনপির শাসনামলে কোনও ট্রানজিট আদায় করা ভারতের পক্ষে সম্ভব হয়নি।’