ঢাকা ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

শখের বশে আঙুর চাষ

বাণিজ্যিক স্বপ্ন
শখের বশে আঙুর চাষ

প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের এক গৃহবধূ আসমা বেগম। বিয়ের পর থেকেই তার স্বামীর কাছে আঙুর গাছের চারা এনে দেওয়ার বায়না ধরেন। স্ত্রীর শখ পূরণ করতে ট্রাকচালক স্বামী অনেক খুঁজে দিনাজপুর থেকে আঙুর গাছের একটি চারা এনে দেন। সেই চারা রোপণের পর গৃহবধূ আসমার পরিচর্যায় এখন আঙুর ফলে ছেঁয়ে গেছে তার বাড়ির পুরো উঠান। সম্প্রতি শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার আলাওলপুর ইউনিয়নের গরিবের চর এলাকার দর্জিকান্দি গ্রামের বাঘ বাড়িতে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়। তার উঠানে চাষ করা আঙুর ফল দিয়ে তিনি তৈরি করছেন আচারসহ অন্যান্য মুখরোচক খাবার। কৃষি বিভাগের সহযোগিতা পেলে বাণিজ্যিকভাবে আঙুর ফল চাষের স্বপ্ন গৃহবধূ আসমার। জানা যায়, দর্জিকান্দি গ্রামের আমির হোসেন বাঘের সঙ্গে আসমা বেগমের বিয়ে হয় প্রায় ১০ বছর আগে। বিয়ের পর আসমা বেগম তার স্বামী আমির হোসেনের কাছে আঙুর ফল গাছের একটি চারা এনে দেওয়ার বায়না করেন। কোথাও আঙুর ফল গাছের চারা না পেয়ে আমির হোসেন স্ত্রীকে অন্য উপহার দিয়েও আসমা বেগমকে খুশি করতে পারেননি। এরপর ৪ বছর আগে আমির হোসেন অনেক খোঁজাখুঁজি করে দিনাজপুর থেকে আঙুর ফল গাছের একটি চারা ও এক বস্তা মাটি এনে দেয় তার স্ত্রীকে। ওই মাটি ব্যবহার করে বাড়ির উঠানের এককোণে আঙুর ফল গাছের চারাটি রোপণ করেন আসমা বেগম। চারাটি সুন্দরভাবে পরিচর্যা করার পরে ২ বছর আগে প্রথম ফলন আসে। বর্তমানে আসমা বেগমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ওই গাছটির ডালপালা ছড়িয়ে বাড়ির পুরো উঠান ছেয়ে গেছে। থোকায় থোকায় ঝুলছে আঙুর ফল। আঙুর গাছের এমন ফলন দেখতে স্থানীয়রা প্রতিদিন ভিড় করছেন আসমা আক্তারের বাড়িতে।

আঙুরচাষি আসমা আক্তার জানান, তিনি কৃষি বিভাগের কোনো সহযোগিতা পাননি। কৃষি বিভাগের সহযোগিতা পেলে বাণিজ্যিকভাবে আঙুর ফল চাষ করবেন তিনি। আসমা বেগমের বাড়িতে আঙুর ফল দেখতে এসেছেন ইমামুল হক। তিনি বলেন, চরের মাটি অনেক উর্বর। মাটির উর্বরতার কারণেই এমন ফলন হয়েছে। ফলটি খেতেও বেশ ভালো। আসমা আপার কাছে গাছের কাটিং চেয়েছি, তিনি আমাকে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কৃষি বিভাগের সঙ্গে পরামর্শ করব, তাদের পরামর্শ পেলে আঙুর ফল চাষ করব। আঙুরচাষি আসমা আক্তার বলেন, বিয়ের পরে স্বামীর কাছে আঙুর ফল গাছের চারা এনে দেওয়ার বায়না করেছিলাম। বিভিন্ন জেলায় খুঁজে বিয়ের কয়েক বছর পর তিনি আমাকে আঙুরের চারাটি এনে দিয়েছিলেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, আমি আঙুর ফল গাছ রোপণ করলে তাতে ভালো ফলন আসবে। আমার বিশ্বাসের জয় হয়েছে। অনেক যত্ন নিয়ে আঙুর গাছের চারাটি বড় করেছি। ফলনও এসেছে বেশ ভালো। ফলগুলো আমি এখনো বিক্রি করিনি। আত্মীয়-স্বজন ও গরিব মানুষকে উপহার দিয়েছি। আঙুর ফলের আচারসহ বিভিন্ন প্রকার মুখরোচক খাবার তৈরি করেছি। আমি বারবার কৃষি বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা আমাকে কোনো সহযোগিতা করেননি। যদি কৃষি বিভাগ আমাকে পরামর্শ দিতো, তাহলে আমি বাণিজ্যিকভাবে আঙুর ফল চাষ করতাম। আসমা বেগমের স্বামী আমির হোসেন বাঘ বলেন, স্ত্রীর শখ পূরণ করতে বিভিন্ন জেলায় খুঁজে আঙুর ফলের চারা এনে দিয়েছিলাম। সেই চারা রোপণ করার পরে বাড়ির উঠানজুড়ে ফলন এসেছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শ পাইনি বলে, আঙুর ফল কিছুটা টক হয়েছে। তবে ফলটি খেতে অনেক সুস্বাধু। কৃষি বিভাগের পরামর্শ পেলে বাণিজ্যিকভাবে আঙুল ফল চাষ করা যেত। আঙুর ফল চাষ নিয়ে গোসাইরহাট উপজেলার কৃষি অফিসার মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, দর্জিকান্দি গ্রামে আসমা বেগম নামে এক গৃহবধূ আঙুর ফল চাষ করেছেন। তার গাছে বেশ ভালো ফলন হয়েছে। এতে বোঝা যায়, গোসাইরহাটের মাটি আঙুর ফল চাষের জন্য বেশ উপযোগী। আসমা বেগমের চাষকৃত আঙুর ফল টক হওয়ার কারণে বাজারে বিক্রি শুরু হয়নি। ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তার বাগানটি পর্যবেক্ষণ করার জন্য।

তিনি সার্বক্ষণিক কারিগরি সহযোগিতা করছেন। পর্যবেক্ষণের পরে যদি আঙুর ফলগুলো মিষ্টি করা যায়, তাহলে অন্যান্য কৃষকরাও আঙুর ফল চাষে উদ্বুদ্ধ হবেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত