সারা দেশে চলছে কোটাবিরোধী আন্দোলন। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে গতকাল দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও মহাসড়কে ‘বাংলা ব্লকেড’ নামে কর্মসূচি পালন করেছেন কোটাবিরোধী শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। প্রায় ছয় ঘণ্টা অচল ছিল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন মহাসড়ক। এরপরও সরকারের পক্ষ থেকে আশানুরূপ কোনো বার্তা না পাওয়ায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কোটাবিরোধীরা। তবে এতো দিন চার দফা দাবিতে কোটাবিরোধীরা আন্দোলন চালিয়ে আসলেও এবার এক দফা দাবিতে আন্দোলন করার ঘোষণা দেন তারা। ‘সকল গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্য মূলক কোটা বাতিল করে; সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতিকে সংস্কার করতে হবে,’ বলেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী হাসনাত আব্দুল্লাহ। এ সময় আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক নাহিদ ইসলাম বলেন, আমাদের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে শহর থেকে শহরে। আগামী দিনে এটা আরো ছড়িয়ে পড়বে। আমরা সংবিধানের সকল নাগরিকের সমান অধিকার আদায়ে লড়াই করছি। আমাদের আদালত দেখালে আমরা সংবিধান দেখাব। আদালত দেখানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের আদালতের জন্য অপেক্ষা করার কথা বলা হচ্ছে। আমরা ৫০ বছর অপেক্ষা করছি। আর কত? শিক্ষার্থীদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। হয় কোটা দূর করতে হবে নয়তো বা পুরো বাংলাদেশকে শতভাগ কোটার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। কর্মসূচি ঘোষণা করে তিনি বলেন, অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে ছাত্র ধর্মঘট চলবে। একই সাথে সারা দেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি চলবে। আজকে শাহবাগ থেকে বাংলা মটর পর্যন্ত অবরোধ গিয়েছে কালকে ফার্মগেট পর্যন্ত যাবে। এদিকে এদিন সন্ধ্যায় সরকার পক্ষের সাথে বৈঠকে বসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, নাহিদ হাসান ও সারজিস আলম। তবে এই আলোচনায় সরকারের পক্ষ থেকে কারা ছিলেন তা জানাননি এই তিন নেতা। এর আগে গতকাল বিকাল পৌনে ৪টার দিকে টানা সপ্তম দিনের আন্দোলনের পঞ্চম দিনে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে শাহবাগ, ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়, চানখাঁরপুল মোড়, কাঁটাবন মোড় অবরোধ করেন তারা। তাছাড়া ঢাকা কলেজ ও ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীরা নিউমার্কেট ও সায়েন্সল্যাব রোড অবরোধ করায় এই এলাকায় সবকিছু স্থবির হয়ে পড়ে। এদিন বেলা ৩টায় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হল, বিভাগ ও ইনস্টিটিউট থেকে আলাদা আলাদা ব্যানারে করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হন। পরে সেখান থেকে বিশাল মিছিল নিয়ে হলপাড়া-ভিসি চত্বর-টিএসসি হয়ে বেলা পৌনে ৪টায় শাহবাগ, ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে অবস্থান নেন। অমর একুশে হল, শহীদুল্লাহ হল, ফজলুল হক মুসলিম হল ও শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজের শিক্ষার্থীরা চানখাঁরপুল মোড় অবরোধ করেন। তবে অ্যাম্বুলেন্স নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য শিক্ষার্থীরা জায়গা করে দেন। সরেজমিনে শাহবাগ, চানখাঁরপুল মোড়, ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড় ঘুরে দেখা যায়, অবরোধের সময় শিক্ষার্থীদের কিছু অংশ বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে ক্রিকেট ও লুডু খেলে সময় কাটান। কেউ কেউ মেতে ওঠেন স্লোগান, কবিতা আর গানে। আবার কয়েকজন রাজপথে বিভিন্ন স্লোগান লিখে প্রতিবাদ জানান।
এ সময় শিক্ষার্থীরা- ‘একাত্তরের পথ ধরো বাংলা ব্লকেড সফল করো’, ‘ব্লকেড ব্লকেড বাংলা ব্লকেড’, ‘দফা এক দাবি এক কোটা নট কাম ব্যাক’, ‘সংবিধানের মূলকথা সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে কোটা প্রথার কবর দে’, ‘দালালি না রাজপথ রাজপথ রাজপথ’, ‘আঠারোর হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেক বার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘কোটা না মেধা মেধা মেধা’, ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।