সুসংবাদ প্রতিদিন
সাতক্ষীরায় পুকুরে গলদার রেনু চাষে সফলতা
প্রকাশ : ০৯ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
শাহীন গোলদার, সাতক্ষীরা
সাতক্ষীরায় আধা নিবির পদ্ধতিতে পুকুরে গলদার রেনু উৎপাদনে সফলতা পেয়েছে কালিগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি চাষি। ৮০ শতকের একটি পুকুরে ১৭৯টি গলদা চিংড়ির মাদার থেকে প্রায় ২০ লক্ষাধিক রেনু উৎপাদিত হয়েছে। এদিকে উন্নত প্রযুক্তি আর মানসম্মত রেনু উৎপাদন হওয়ায় এই চাষে আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে অন্য চাষিদের। এতে খামারিদের পাশাপাশি চাষিরাও দ্বিগুণ লাভের মুখ দেখতে পাবেন বলে ধারণা করছে মৎস্য অধিদপ্তর। জেলা মৎস্য বিভাগ জানান, গলদা চিংড়ি চাষ হয় তার শতকরা ৯৫ শতাংশ রেনু চোরা চালানোর মাধ্যমে ভারত থেকে আনা হয় অথবা অবৈধভাবে নদী থেকে রেনু সংগ্রহ করা। হ্যাচারিগুলোতে উৎপাদিত রেনু চাহিদার পাঁচ শতাংশ পূরণ করতে পারে না। যে কারণে অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরের মতো বাংলাদেশেও উপকূলীয় অঞ্চলে মাটির পুকুরে গলদা চিংড়ির রেনু উৎপাদনের। মৎস্য বিভাগ বলছে, সাতক্ষীরার উৎপাদিত গলদার রেনু নদী বা বিদেশ থেকে আসা রেনুর তুলনায় দামে কম, মানসম্মত এবং উৎপাদনও বেশি। ফলে স্থানীয়ভাবে এই রেনুর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এই রেনু উৎপাদনে আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা দিচ্ছেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা নওয়াবেঁকী গণমুখী ফাউন্ডেশন। কালিগঞ্জ উপজেলা মৎস্য অফিস জানায়, কালিগঞ্জের ইছামতি, কাকশিয়ালি ও কালিন্দি নদী থেকে মাদার সংগ্রহ করে ১৭৯টি বাছাই করা মাদার তারালি ইউনিয়নের আজিজুর রহমানের মৎস্য খামারের ৮০ শতক জমির একটি পুকুরে ছাড়া হয়। গলদা চিংড়ির মাদারগুলোর ওজন ছিল ৬০ থেকে ৮০ গ্রাম। সেমিইনটেনসিভ বাগদা চিংড়ি চাষের পুকুরের মতো করে বায়োসিকিউরিটি ও পুকুর প্রস্তুতি নিশ্চিত করা হয়েছে। পানির স্যালাইনিটি ১২ থেকে ৮ পিপিটি পর্যন্ত ওঠানামা করানো হয়েছে। সব খরচ মিলিয়ে ব্যয় হয়েছে ২ লাখ টাকা। কালিগঞ্জ উপজেলার নীল কন্ঠপুর গ্রামের মৎস্য চাষি আব্দুর রশিদ জানান, তার মাটির পুকুরে উৎপাদন করা হচ্ছে গলদার রেনু। নিজের ৫০শতক জমিতে গলদার রেনু উৎপাদন শুরু করে।
তিনি আরো বলেন, চলতি মৌসুমে এপ্রিল মাসে বিভিন্ন ঘের থেকে গলদা চিংড়ীর মাদার সংগ্রহ করে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে আধা নিবির পদ্ধতিতে মাটির পুকুরে হ্যাচির মত উৎপাদন করছে গলদার রেনু। এখানকার উৎপাদিত রেনুর দাম নদী ও ভারত থেকে আসা রেনুর তুলনায় কম এবং রেনুর থেকে গলদার উৎপাদনও অনেক বেশি হওয়ায় স্থানীয় ভাবে দিন দিন চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে এই রেনুর। মৎস্য চাষি আব্দুর রশিদ আরো জানান, নতুন এই পদ্ধতিতে রেনুর উৎপাদন হার অনেক বেশি এছাড়া স্থানীয়ভাবে এই রেনুর চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি। ফলে আরো বড় পরিসরে গলদার রেনু চাষের কথা জানায় এই চাষি আব্দুর রশিদ। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা নওয়াবেঁকী গণমুখী ফাউন্ডেশন ভিসিএম তারেক আহমেদ বলেন, নতুন এই প্রযুক্তিতে গলদার রেনু উৎপাদনে আগ্রহী চাষিদের গণমুখী ফাউন্ডেশনের আরএমটিপি প্রকল্পের মাধ্যমে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে বলে জানালেন এই কর্মকর্তা। কালিগঞ্জ উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাজমুল হুদা বলেন, নতুন এই প্রযুক্তিতে গলদার রেনু উৎপাদনের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্র অর্জনের পাশাপাশি অবৈধভাবে নদী থেকে রেনু সংগ্রহ ও বিদেশ থেকে আসা নিম্নমানে রেনুর ব্যবহার কমবে। তিনি আরো জানান, আশপাশের এলাকার চাহিদা মিটিয়ে জেলার বিভিন্ন অঞ্চলেও পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে।