বেশ কিছুদিন ধরে দেশে গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে সরকারের বর্তমান ও সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তাদের দুর্নীতির ফিরিস্তি নিয়ে। সরকারও এক্ষেত্রে জিরো টলারেন্সের কথা বলায় দ্রুততার সঙ্গে এসব দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা, সম্পদ বাজেয়াপ্ত করাসহ বেশ কিছু পদক্ষেপও দেখা যাচ্ছে। তবে এই আলোচনায় সবাইকে ছাপিয়ে গেছেন এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমান ও সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। কিন্তু এবার বেসরকারি একটি টেলিভিশনের অনুসন্ধানী খবরের পরে আলোচনায় জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের সাবেক চেয়ারম্যানের গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী। সংবাদটি প্রচারের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয়েছে আবেদ আলীর বিপুল সম্পদের ফিরিস্তি।
শুধু তাই নয়, ধর্মকর্ম পালনে পিছিয়ে না থাকা এই গাড়িচালক জনপ্রতিনিধি হওয়ার চেষ্টাও করেছেন। নিজ এলাকা মাদারীপুরের ডাসারে নিজেকে দানবীর হিসেবে উপস্থাপনেরও চেষ্টা করেছেন আবেদ আলী। ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম যেন বাবাকেও ছাড়িয়ে গেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া কিছু আলোচিত লোকজনের মতো সিয়ামও মানুষের জন্য কাজ করার অনেক ভিডিও পোস্ট করেছেন। তবে বাবার সম্পদ বানানোর নেপথ্যের গল্প সামনে চলে আসায় সিয়ামকেও তোপের মুখে পড়তে হয়েছে।
গত রোববার থেকে মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাপ-ছেলেকে নিয়ে রীতিমতো ঝড় উঠেছে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের ছবি দিয়ে তীব্র সমালোচনা করছেন। দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি করছেন কেউ কেউ। বেসরকারি টেলিভিশনটিতে প্রচারিত খবর থেকে জানা যায়, গত ১২ বছরে বিসিএসসহ নন-ক্যাডার নিয়োগের অন্তত ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটির ১২ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে।
গণমাধ্যমটির প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত রেলওয়ের ৫১৬টি পদের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিসিএসের প্রশ্নফাঁস চক্রে পিএসসির অন্তত ১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত। এর মধ্যে বিভিন্ন ইউনিটের উপ-পরিচালক, সহকারী পরিচালক, চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক, সাবেক সচিবের পিএসও রয়েছেন।
বিসিএসের প্রশ্নফাঁস চক্রের মূলহোতা পিএসসির অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলাম গণমাধ্যমটিকে জানান, ‘পিএসসির উপ-প্রশ্ন ফাঁস হয়। পিএসসির একজন সদস্যের অফিসে সংরক্ষিত ট্রাঙ্ক থেকে আবু জাফর রেলওয়ের প্রশ্ন আমাকে বের করে দিয়েছিলেন।’ তিনি আরো বলেন, আমি এটাও জানি ৪৫তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্নও ফাঁস করা হয়।
বিসিএসের প্রশ্নফাঁসের বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কমিশনের ক্ষমতাবলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠতে পারে। সেটি প্রমাণ হতে হবে। প্রমাণ হলে, কমিশন যদি মনে করে তাহলে প্রশ্নফাঁস হওয়া বিসিএসের কার্যক্রম বাতিলও হতে পারে।’