চট্টগ্রাম কাস্টমসসে নিলামে উঠেছে বাইরে থেকে আমদানি করা মৌসুমি ফল। জানা যায়, দেশের মূল্যবান ডলার খরচ করে বন্দরে আনা প্রায় ১০ কোটি টাকার ফল খালাস নেননি আমদানিকারকরা। এতে একদিকে বন্দরের রেফার কনটেইনারের জায়গা অনুৎপাদনশীল হয়ে পড়েছে, অন্যদিকে বিদ্যুৎ বিল জমে আটকে আছে শিপিং এজেন্টের কনটেইনার। বাধ্য হয়ে এসব ফল নিলামে বেচতে তৎপর হয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। গত সোমবার কাস্টম হাউসের নিলাম শাখার হলরুমে শুরু হয়েছে ফল নিলামের কার্যক্রম। এর মধ্যে রয়েছে আপেল, কমলা, মেন্ডারিন (লেবুর মতো ছোট আকারের কমলা) ও খেজুর। নিলাম সফল করতে ব্যাপক মাইকিং করেছে কর্তৃপক্ষ। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত নিলাম চলছে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অতিরিক্ত কমিশনার মুশফিকুর রহমান জানান, নিলাম হচ্ছে কাস্টমসের রুটিন কাজ। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে আমদানি করা ফল যত দ্রুত সম্ভব, নিলামে বেচতে পারলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে কিছুটা কম ক্ষতির সম্মুখীন হবে। যদি এসব ফল কনটেইনারেই পচে যায়, তাহলে পুরোটাই শেষ। এর সঙ্গে বন্দর ও শিপিং এজেন্টের স্বার্থও জড়িত। কাস্টম হাউসের কমিশনারের নির্দেশে পচনশীল পণ্যের নিলাম কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে তিন দিনের এ নিলাম কর্মসূচি। পর্যায়ক্রমে আরো নিলাম করা হবে। ফলমণ্ডির একজন ব্যবসায়ী জানান, আমরা শুনেছি কাস্টম হাউসে ফলের চালান নিলাম হচ্ছে। নানা কারণে পণ্যচালান নিলামে চলে যায়। এর মধ্যে অনিয়মিত বা মৌসুমি ফল আমদানিকারকের চালান যেমন বেশি থাকে, তেমনি আমদানি মূল্যের চেয়ে দেশে যদি ফলের দাম কমে যায়, তাহলেও অনেকে চালান ডেলিভারি নেন না। উচ্চশুল্কে কারণেও অনেক সময় জটিলতা হয়।
তিনি আরো জানান, আম, কাঁঠাল, আনারস, পেয়ারা, কলা, লিচুসহ মধুমাসের কারণে বিদেশি ফলের চাহিদা কমে গেছে। এ কারণেও অনেকে ফলের চালান খালাস না করে থাকতে পারে। কি কি পণ্য নিলামে তোলা হতে পারে এ প্রশ্নে তিনি বলেন, পচনশীল পণ্য নিলামে তোলা হচ্ছে। এসব পণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সময়মতো ছাড় করেনি বন্দর থেকে। নিয়ম অনুযায়ী এসব পণ্য নিলামে বিক্রি না করলে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই নিলামে বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই নিলাম হবে উন্মুক্ত।
সূত্র জানায়, পণ্যের চালান জাহাজ থেকে বন্দরে নামার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শুল্ককর পরিশোধ করে খালাস করতে হয়। এরপর নোটিশ দেওয়া হয় কাস্টমস থেকে। সব মিলে দেড় মাসের মতো সময় পায় আমদানিকারক। এরপর নিলামে যেতে পারে কাস্টমস। আমদানিকারক পণ্য সরবরাহ না নেওয়ায় আপেল-কমলাসহ কয়েক কোটি টাকার মূল্যের আমদানি করা ফলমূল নিলামে তোলা হয়েছে। নিলামে এসব ফল বিক্রি করে দেওয়া হবে আগ্রহী ক্রেতাদের কাছে। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের নিলাম শাখার হলরুমে অনুষ্ঠিত হয় এই নিলাম। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। চলবে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত। এরই মধ্যে নিলাম উপলক্ষ্যে চট্টগ্রাম নগরীর ফলমণ্ডিসহ আশপাশের দুই কিলোমিটার এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টমসের উদ্যোগে পরিচালিত মাইকিংয়ে ক্রেতাদের নিলামে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। বিপুল পণ্য নিলামে তোলা নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের পরিবহন বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, পচনশীল পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করা হয় বিশেষায়িত রিফার কন্টেইনারে করে। জাহাজে করেই এসব রিফার কন্টেইনার আসে চট্টগ্রাম বন্দরে। এসব কন্টেইনার মূলত একেকটি রেফ্রিজারেটর। এসব কন্টেইনার সংখ্যায় খুব বেশি থাকে না। দিনের পর দিন আমদানিকারকরা পচনশীল দ্রব্য ছাড় করে না নিলে কন্টেইনারের ভেতর পণ্য পচে নষ্টের ঝুঁকি তো থাকেই। পাশাপাশি রিফার কন্টেইনারগুলো ভর্তি থাকায় আমদানি করার কাজে যুক্ত করা যায় না। রিফার কন্টেইনারে সার্বক্ষণিকভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ রাখতে হয়। এতে একেকটি রিফার কন্টেইনারে বিদ্যুৎ বিল খাতেও বিপুল অর্থ ব্যয় হয়। তাই নিলামে এসব কন্টেইনার খালি করা ছাড়া উপায় নেই। কাস্টমসের সংশ্লিষ্টরা জানান, পৃথক লটে পণ্য নিলামে তোলা হচ্ছে। গত সোমবার প্রথম দিন প্রকাশ্য নিলামে তোলা হয় ৪১ লাখ ২০ হাজার ৯০৭ টাকা মূল্যের সাড়ে ২৩ টন আপেল, ৪০ লাখ ৯৮ হাজার ৪৯৪ টাকা মূল্যের সাড়ে ২৩ টন কমলা, ৪১ লাখ ২০ হাজার ৯০৭ টাকা মূল্যের সাড়ে ২৩ টন আপেল, ৪০ লাখ ৭৬ হাজার ১৫৪ টাকা মূল্যের সাড়ে ২৩ টন কমলা এবং ৮৫ লাখ ৪১ হাজার ৮৯৬ টাকা সাড়ে ৪৭ টন আপেল। এ ছাড়া দ্বিতীয় দিন গতকাল মঙ্গলবার (৯ জুলাই) নিলামে তোলা হয়েছে ৮০ লাখ ৭৮ হাজার ৫৯০ টাকা মূল্যের সাড়ে ৪৬ টন মেন্ডারিন (লেবুর মতো ছোট আকারের কমলা), ৪১ লাখ ২০ হাজার ৯০৭ টাকা মূল্যের সাড়ে ২৩ টন আপেল, ১ কোটি ৫২ লাখ ২২ হাজার ১৬৫ টাকা মূল্যের সাড়ে ৮৭ টন মেন্ডারিন, ৪১ লাখ ২০ হাজার ৯০৭ টাকা মূল্যের সাড়ে ২৩ টন আপেল এবং ৩৭ লাখ ৯৪ হাজার ২৯২ টাকা মূল্যের প্রায় ২২ টন মেন্ডারিন। এ ছাড়া তৃতীয় দিন আজ (বুধবার) নিলামে তোলা হবে ৭৯ লাখ ৪৭ হাজার ৬৮৭ টাকা মূল্যের সাড়ে ৪৫ টন মেন্ডারিন, ৪৩ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩৪ টাকা মূল্যের প্রায় ২৫ টন কমলা, ৪১ লাখ ২০ হাজার ৯০৭ টাকা মূল্যের সাড়ে ২৩ টন আপেল, ৮৫ লাখ ৪১ হাজার ৮৯৬ টাকা মূল্যের সাড়ে ৪৭ টন আপেল এবং ১ কোটি ৮৪ লাখ ১০ হাজার ৯২৪ টাকা মূল্যের ২৫ টন খেজুর।