দেশের অন্যতম অন্যতম সমুদ্রবন্দর, চট্টগ্রামবন্দরে কনটেইনার-কার্গো হ্যান্ডেলিং বেড়েছে। যদিও আগের তুলনায় জাহাজ আসার সংখ্যা কমে গেছে। দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রামে সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে আগেরবারের চেয়ে ২৮২টি জাহাজ কম এসেছে; তবে বেড়েছে কনটেইনার ওঠানামা ও কার্গো হ্যান্ডলিং। বৈশ্বিক মন্দা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব কাটিয়ে ওঠায় কনটেইনার ও কার্গো (খোলা পণ্য) হ্যান্ডলিং বাড়ার কথা জানিয়েছেন চট্টগ্রামবন্দর সচিব ওমর ফারুক। এ বিষয়ে বন্দর সচিব ওমর ফারুক জানান, জাহাজ আগমনের সংখ্যা কম হওয়া সে অর্থে গুরুত্বপূর্ণ নয়। আগে ছোট বড় মিলিয়ে জাহাজ আসত। কিন্তু এখন বড় জাহাজে করে বেশি সংখ্যক কন্টেনার ও পণ্য আসছে। এটি আমাদের জন্য ইতিবাচক। গত অর্থবছরে কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ কমেছিল কিন্তু এবারে বেড়েছে।
তিনি আরো জানান, বন্দরের আধুনিক হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্ট সংযোজন, অটোমেশন, অভিজ্ঞতা, দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও নতুন নতুন উন্নয়ন প্রকল্প ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কারণে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে। জাহাজ আগমন কোনো বিষয় না। বড় জাহাজ বেশি আসছে এজন্য। কিন্তু, আমাদের কার্গো এবং কনটেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে। এটি অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক। আমরা চাই বড় জাহাজে বেশি পণ্য পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টি করতে। এতে জাহাজ ভাড়া কম পড়বে, আমদানি ও রপ্তানিকারকরা তথা দেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে। এ দিকে বন্দরের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, সদ্য সমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে চট্টগ্রামবন্দরে ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের ৩১ লাখ ৬৮ হাজার ৬৯০ টিইইউএস কনটেইনারের ওঠানো-নামানো হয়েছে, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ১ লাখ ৬১ হাজার ৩৪৬টি বেশি। অর্থাৎ ১ বছরে কন্টেনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ।আর কার্গো হ্যান্ডলিং ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ বেড়েছে। এর আগের ২০২২–২৩ অর্থবছরে আমদানি-রপ্তানি মিলিয়ে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয় ৩০ লাখ ৭ হাজার ৩৪৪ টিইইউএস, যা ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ছিল ৩২ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫৮ টিইইউএস। বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের সঙ্গে বেড়েছে কার্গো হ্যান্ডলিংও। সদ্য বিদায় নেওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১২ কোটি ৩২ লাখ ৪২ হাজার ৭৪৮ টন পণ্য হ্যান্ডলিং হয়েছে, সেখানে এর আগের অর্থবছরে যা ছিল ১১ কোটি ৮২ লাখ ৯৬ হাজার ৭৪৩ টন পণ্য। অর্থাৎ এক বছরে কার্গো হ্যান্ডলিং বেড়েছে ৪৯ লাখ ৪৬ হাজার ৫ মেট্রিক টন; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ। বিদায়ী অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ এসেছে ৩ হাজার ৯৭১টি, গতবারের তুলনায় যা ২৮২টি কম। ২০২২-২৩ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরে বাণিজ্যিক জাহাজ ভেড়ে ৪ হাজার ২৫৩টি। ওই সময়ের হিসাবে জাহাজ আসার হার ৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ কমেছে। ১ জুলাই, গত সোমবার চট্টগ্রামবন্দর কর্তৃপক্ষের সদ্য বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কনটেইনার, কার্গো ও জাহাজ হ্যান্ডলিং নিয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
বন্দর থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছে ৩০ লাখ ৭ হাজার ৩৭৫ টিইইউস (২০ ফুট দৈর্ঘ্যের একক)। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে হ্যান্ডলিং করা হয়েছে ৩১ লাখ ৬৮ হাজার ৬৯০ টিইইউস। এ হিসাবে বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ৩১৫ টিইইউস যা শতকরা হিসাবে আগের বছরের চেয়ে ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া ২০২২-২৩ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর কার্গো হ্যান্ডলিং করেছে ১১ কোটি ৮২ লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ মেট্রিক টন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে হ্যান্ডলিং করেছে ১২ কোটি ৩২ লাখ ৪২ হাজার ৭৪৮ মেট্রিক টন। এ হিসেবে বন্দরে কার্গো হ্যান্ডলিং বেড়েছে ৪৯ লাখ ৪৫ হাজার ১০৫ মেট্রিক টন, যা শতকরা হিসেবে আগের বছরের চেয়ে ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ বেড়েছে। এদিকে গত এক বছরে (২০২৩-২৪ অর্থবছর) বন্দরে জাহাজ হ্যান্ডলিং করা হয়েছে ৩ হাজার ৯৭১টি। এর আগে অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছর বন্দরে জাহাজ হ্যান্ডলিং করা হয়েছিল ৪ হাজার ২৫৩টি। আগের অর্থবছরের চেয়ে এবার বন্দরে মোট ২৮২টি কম জাহাজ হ্যান্ডলিং করা হয়েছে।