প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে আলোচিত পিএসসির সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী ও তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। একই সঙ্গে তাদের ব্যাংক হিসাবের সব তথ্যও চেয়েছে সংস্থাটি। এর আগে প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার বিষয়টি পিএসসির নিজস্ব তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৪ সালে চাকরিচ্যুত হন তিনি। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) পরীক্ষাসহ গত ১২ বছরে ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
বিএফআইইউর সূত্র জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার সৈয়দ আবেদ আলী ও তার মালিকানাধীন ইউএসএ রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্সের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। বিএফআইইউ থেকে ব্যাংকগুলোয় পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, সৈয়দ আবেদ আলী ওরফে জীবন ও ইউএসএ রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্সের হিসাব আগামী ৩০ দিনের জন্য অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করার নির্দেশনা দেওয়া হলো। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ফলে আগামী ৩০ দিন তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন বন্ধ থাকবে। এছাড়া এসব হিসাবের লেনদেনসহ যাবতীয় তথ্য পাঁচদিনের মধ্যে বিএফআইইউর কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে। চিঠিতে আবেদ আলীর গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর এবং ঢাকার ঠিকানা হিসেবে আগারগাঁও তালতলা সরকারি কলোনি ও মিরপুর উল্লেখ রয়েছে।
সৈয়দ আবেদ আলীকে ইউএসএ এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্সের চেয়ারম্যান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছি চিঠিতে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আবেদ আলী অন্তত ৫০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক। ঢাকায় তার একটি ছয়তলা বাড়ি, তিনটি ফ্ল্যাট ও একটি গাড়ি রয়েছে। গ্রামের বাড়িতে রয়েছে ডুপ্লেক্স ভবন। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আবেদ আলী এসব তথ্য জানিয়েছেন। সিআইডির কর্মকর্তাদের ধারণা, তার আরও সম্পদ রয়েছে। তথ্য বলছে, আবেদ আলী নামে-বেনামে নানা সম্পদ করেছেন। তার গ্রামে বহুতল বাড়ি রয়েছে। করেছেন বাগান বাড়িও। এছাড়াও তিনি ঢাকায় অনেক সম্পদ করেছেন। রাজধানীর পাইকপাড়ায় তার ছয় তলা একটি বাড়ি রয়েছে। এছাড়াও শেওড়াপাড়ার ওয়াসা রোডে একটি ৯ তলা ভবনে রয়েছে তিনটি ফ্ল্যাট। তিনি যাতায়াত করতেন দামি একটি গাড়িতে। আবেদ আলীর জমি বাড়ি ফ্ল্যাট গাড়ি ছাড়াও রয়েছে রিয়েল এস্টেট ও হোটেল ব্যবসা। কুয়াকাটায় তার হোটেল ব্যবসা রয়েছে। যদিও তিনি বিভিন্নজনের শেয়ারে তা চালু করতে চেয়েছিলেন বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিআইডির এক কর্মকর্তা জানান, শেওড়াপাড়ার ৯ তলা একটি ভবনে আবেদ আলীর মোট পাঁচটি ফ্ল্যাট ছিল। সম্প্রতি তিনি দুটি ফ্ল্যাট বিক্রি করে দেন। ভবনের পঞ্চম তলায় নিজের ফ্ল্যাটে পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। ভবনের পঞ্চম তলায় তার দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে এবং চতুর্থ তলায় একটি। সিআইডি সূত্র বলছে, ধানমন্ডির ১৬ নম্বর রোডে আবেদ আলীর ৬ কোটি টাকা মূল্যের তিন হাজার বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট, ঢাকার চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটে ২ কোটি টাকা মূল্যের ৩০০ বর্গফুটের দোকান, পূর্বাচলে ২০ কোটি টাকা মূল্যের স্থাপনাসহ ১০ কাঠা জমি ও বাগেরহাটের গোপালকাঠি গ্রামে ২০ কোটি টাকা মূল্যের স্থাপনাসহ ১০ কাঠা জমি রয়েছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, আবেদ আলীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মোটা অংকের টাকা রয়েছে। এছাড়া তার একটি গাড়ি রয়েছে। বিভিন্ন সময় সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে এসব অর্থ উপার্জন করেছেন তিনি। এসব অর্থ দিয়ে তিনি যেমন একদিকে বিলাসী জীবনযাপন করতেন, তেমনি সামাজিক কাজেও এসব অর্থ ব্যয় করতেন। জনপ্রতিনিধি হওয়ার চেষ্টাও করেছেন। তবে আবেদ আলী বেশ ধুরন্ধর প্রকৃতির মানুষ। তিনি নিজের চাইতে স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার শিল্পীর নামে বেশি সম্পদ গড়েছেন। সিআইডির তথ্য বলছে- তার নামে ধানমন্ডির ১১ নম্বর রোডে ৪ কোটি টাকা মূল্যের ২ হাজার ৪০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, ঢাকার মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডে ৫ কোটি টাকা মূল্যের ৪ হাজার ৮২০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিং সোসাইটির বি ব্লকে ১০ কোটি টাকা মূল্যের বহুতল বাড়ি, মানিকগঞ্জের রাখোরা মৌজায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের ২০ বিঘা জমি, ঢাকার বাড্ডার সাঁতারকুল মৌজায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের ৮ বিঘা জমি, রাজধানীর পান্থপথে ৪ কোটি টাকা মূল্যের ৪০০ বর্গফুটের দোকান, রাজধানীর ৫৩, বায়তুল মোকাররমে ১০ কোটি টাকার ৩০০ বর্গফুটের দোকান, কক্সবাজারের টেকনাফে ৫ কোটি টাকা মূল্যের স্থাপনাসহ ৩ বিঘা জমি, কক্সবাজার ইনানী সমুদ্রসৈকতে ১০ কোটি টাকা মূল্যের স্থাপনাসহ ১ বিঘা জমি ও চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে ১০ কোটি টাকা মূল্যের ৬ কাঠা জমি রয়েছে।