সুসংবাদ প্রতিদিন
ফুলবাড়ীতে মরুর খেজুর চাষে সফলতা
প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌর এলাকার স্বজনপুকুর গ্রামের বাসিন্দা জাকির হোসেন। জীবিকার তাগিদে সৌদি ও কুয়েতে পাড়ি দিয়ে প্রায় ২০ বছর প্রবাসজীবন কাটিয়ে দেশে ফিরে আসেন। মধ্যপ্রাচ্যে থাকাকালীন মরুর ফল চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে সম্যকজ্ঞান ও কারিগরি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। দেশে ফেরার সময় ১২ কেজি পাকা খেজুর নিয়ে আসেন। সেই খেজুরগুলো থেকে চারা তৈরি করেন নিজেই। প্রথম পর্যায়ে ২০ শতক জমিতে আজওয়া, মরিয়ম, খলিজি, মেডজুল, বারহি ও আম্বার জাতের খেজুর বাগান গড়ে তোলেন। এখন খেজুর গাছগুলোর বয়স চার থেকে ছয় বছর। ২০২২ সালে তার বাগানে প্রথম তিনটি গাছে ফল এসেছিল। সেই চারা গাছগুলো এখন পরিপূর্ণ গাছে পরিণত হয়েছে। প্রত্যেকটি গাছেই থরে থরে ঝুলে পড়েছে খেজুর ফল। সেই খেজুর ফলের মিষ্টি স্বাদ এখন দিনাজপুরসহ সারা দেশে ছড়িয়েছে। মরুর এ খেজুর গাছ ও ফল দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন উৎসুক নারী ও পুরুষ। তার সফলতার প্রশংসা এখন দেশজুড়ে। উদ্যোক্তা জাকির হোসেন বলেন, জীবিকার তাগিদে মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি দিয়েছিলাম। সেখানে চাষ হওয়া খেজুর দেখে নিজ দেশের মাটিতে খেজুর চাষের স্বপ্ন জাগে। সেই স্বপ্নকে ধারণ করে পাকা খেজুর এনে পরীক্ষামূলক চারা তৈরি এবং ইউটিউবের সহায়তায় ২০ শতক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ১৯টি খেজুর গাছের চারা রোপণ করি। বর্তমানে দুই একর জমিতে গড়ে তুলেছি খেজুর বাগান। অনেকে চারা গাছ কিনতে অগ্রীম অর্থ দিয়ে রাখছেন। গাছে ফল আসলেই প্রতিবছর ভিড় জমছে দর্শনার্থীদের। তিনি বলেন, প্রথম পর্যায়ে তিনটি গাছে প্রচুর পরিমাণে খেজুর আসে। তারপর সে ফলগুলো স্থানীয়দের খাওয়ানোসহ কিছু চারা তৈরি করি। এ বছর ৯টি গাছে ফল এসেছে। প্রতিটি গাছের ৮ থেকে ৯টি কাঁদিতে (গোছায়) খেজুর ধরেছে। ৫০ থেকে ৫৫টি খেজুরের ওজন এক কেজি হবে। খেজুরের বীজ থেকে চারা গাছ হতে প্রায় দেড় থেকে দুই বছর সময় লাগে। এ খেজুর বাগান করতে প্রয়োজন উঁচু জমি। এ উদ্যোক্তা আরো বলেন, চারাগাছ রোপণের কয়েক বছরেই ফল আসতে শুরু করে। বর্তমানে প্রতিটি চারা বিক্রি করছি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়। শুধু উত্তরবঙ্গই নয়, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থান থেকে চারাগাছ সংগ্রহ করছেন লোকজন। একটি খেজুর গাছ ৭০ থেকে ৮০ বছর ধরে ফল দেয়। বর্তমানে বাগানে উৎপাদিত খেজুর ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। এরইমধ্যে দেড় হাজার চারা প্রায় ১৫ লাখ টাকায় বিক্রি করেছি। স্থানীয় বাসিন্দা আলমগীর হোসেন বলেন, বাড়ির কাছেই এখন সৌদির খেজুর বাগান। ছোট্ট এ গাছগুলোতে এতো খেজুর হতে পারে, সেটি না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। স্থানীয়রা সকলেই জাকির হোসেনের বাগানের উৎপাদিত খেজুরের স্বাদ নিয়েছেন, স্বাদে অত্যন্ত সুস্বাদু। মরুর খেজুর ফুলবাড়ীতে চাষ হচ্ছে এমন সংবাদ গণমাধ্যমে প্রচারের পর থেকে এ বাগান দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ বাগানে ভিড় করছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুম্মান আক্তার বলেন, দিনাজপুর জেলা চাল ও লিচুর জন্য দেশব্যাপী খ্যাতি রয়েছে। জাকির হোসেন মধ্যপ্রাচ্য থেকে খেজুর এনে সেটি চারা করে গাছ রোপণের মাধ্যমে খেজুর উৎপাদন করে সাফল্য দেখিয়েছেন। মরুর খেজুর ফুলবাড়ীতে উৎপাদিত হচ্ছে এটি একটি গর্বের বিষয়। কৃষি বিভাগ থেকে ওই খেজুর বাগান পরিদর্শন করা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মরুর এ খেজুর দেশের চাহিদা মিটাতে ভূমিকা রাখবে। দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নূরুজ্জামান বলেন, প্রবাসী জাকির হোসেন মরুর খেজুর ফুলবাড়ীর মাটিতে ফলিয়ে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। তার উৎপাদিত খেজুর ও খেজুর চারা বাজারজাতকরণের বিষয়ে কৃষি বিভাগ থেকে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হবে।