দায় স্বীকার করে আদালতে শাহেদের জবানবন্দি
প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
এএইচ সেলিম উল্লাহ, কক্সবাজার
‘বন্ধুর ছকে ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ আল মামুন হত্যার ঘটনায় দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন শাহেদ হোসেন। গতকাল বৃহস্পতিবার কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শ্রীজ্ঞান তঞ্চঙ্গ্যা তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। সন্ধ্যা ৭টা ৩১ মিনিটে আলোকিত বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ তৌহিদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এর আগে তাকে কড়া নিরাপত্তায় রামু থানা থেকে কক্সবাজার আদালতে আনা হয়।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, র্যাবের হেফাজত থেকে রামু থানায় হস্তান্তরের পর ‘বন্ধু আব্দুল্লাহ আল মামুনকে ভাড়াটে চক্র দিয়ে খুন করার ঘটনায় অনুতপ্ত ছিল শাহেদ হোসেন। ওই সূত্রটি বলছে, শাহেদ থানায় আসার পর থেকে পুলিশের সামনে বারবার কান্না করতে দেখা গেছে। গতকাল আদালতে আনার পর অনেকটা নিরব ছিল শাহেদ।
ভাড়াটে খুনি শাহীনের সাথে ওরা পাঁচজন কারা?
দায়িত্বশীল সূত্র মতে, মামুনকে হত্যার ছক আঁকেন ঘটনার এক সপ্তাহ আগে। এর পর রামু উপজেলার একটি ইউনিয়নের শাহীন নামের এক ডাকাতকে দুই লাখ টাকায় ভাড়া করেন শাহেদ। ঘটনার আগে এক লাখ টাকা লেনদেন করেন। হত্যার মিশন শেষ করে ঘটনাস্থলে বাকি ১ লাখ দেন। ঘটনার দিন লাশ রেখে মামুনের মোটরসাইকেল নিয়ে শাহেদ ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। চাকমারকুল এলাকায় এসে বাইকের তেল শেষ হলে সে বাইকটি রেখে আত্মগোপন করেন। পরদিন জানাজায় অংশ নেন। হত্যার মিশনে ডাকাত শাহীনসহ আরো পাঁচজন ছিল। তবে অন্যদের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি শাহেদ।
খুনের নেপথ্যে ব্যবসায়িক লেনদেন?
হত্যার ঘটনার পর থেকে ‘খুনের নেপথ্যে’ ব্যবসায়িক লেনদেন নিয়ে মাঠেঘাটে আলোচনা চলছিল। প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে তা উঠে এসেছে। কক্সবাজার শহরের ঝাউতলা এলাকায় মুফিজ, শাহেদ ও মামুন মিলে ভিশন শোরুমের ব্যবসা করতেন। জায়গার মালিক ছিল মুফিজ। মামুন লোন, ধারদেনা করে অর্থ জোগান দিয়েছিল। মামুনের আলাদা প্রাণ কোম্পানির একটি ডিলারও ছিল। ভিশন শোরুমের ব্যবসা নিয়ে শাহেদণ্ডমামুনের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। মামুনের বিশাল পুঁজি ফেরত চাইলে মাস খানেক ধরে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। ওই ফাঁকে হত্যার ছক আঁকেন শাহেদ। তার জের ধরে মামুনকে হত্যা করা হয়।
সংবাদে উপস্থাপিত প্রসঙ্গে মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ তৌহিদুর রহমানকে প্রশ্ন করা হলে তিনি কিছু প্রশ্ন এড়িয়ে যান। কিছু অংশ অকপটে স্বীকার করেন।
তিনি বলেন, আদালতে জবানবন্দির পাশাপাশি শাহেদ অনেক তথ্য দিয়েছেন। ওই তথ্যের অনুসন্ধান চলছে। যা তদন্তের স্বার্থে বলা যাচ্ছে না।
রাত সাড়ে সাড়ে ৮টার দিকে যোগাযোগ করা হলে কক্সবাজার জেলা কারাগারের ডেপুটি জেলার মো. আব্দুস সোবহান খুনি শাহেদ হোসেন কারাগারে পৌঁছার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
প্রসঙ্গত, গত রোববার কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রেলপথের রামু এলাকায় হাত-পা বাঁধা এক যুবকের (৩০) মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত যুবকের নাম আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি কক্সবাজার সদরের খরুলিয়া ঘাটপাড়া এলাকার মৃত নবী হোসেনের ছেলে।
পুলিশ ও নিহতের স্বজনরা জানান, গত শনিবার (৬ জুলাই) সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বের হয়ে কক্সবাজারের দিকে যান মামুন। এর কয়েকঘণ্টা পর থেকে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। রাত ১১টা বাজলেও মামুন বাড়ি না ফেরায় পরিবারের লোকজন বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নেন। তবে তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। গত রোববার সকালে রামুর রশিদ নগরের কাদমরপাড়া-ধলির ছড়ার মাঝামাঝি রেললাইনের পাশে হাত-পা বাঁধা একটি মরদেহ দেখতে পান স্থানীয়রা। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। পরে লাশটি আবদুল্লাহ আল মামুনের লাশ বলে শনাক্ত হয়। এ ঘটনায় র্যাব তাকে গত মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করেন।