ঢাকা ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পদ্মায় সাড়ে ৫ কিমি. জুড়ে ভাঙন

* আতঙ্কে প্রায় ৪০ হাজার তীরবর্তী মানুষ * হুমকিতে সরকারি স্থাপনাসহ আবাদি জমি
পদ্মায় সাড়ে ৫ কিমি. জুড়ে ভাঙন

চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটারজুড়ে হচ্ছে পদ্মার নদী ভাঙন। এতে আবাদি জমিসহ ভিটামাটি বিলীন হচ্ছে নদীগর্ভে। ভাঙন আতঙ্কে ভিটেমাটি ছেড়ে নিরাপদ দূরত্বে সরে যাচ্ছে পদ্মার তীরবর্তী মানুষ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে- সাধারণত বর্ষাকালে পদ্মার পানি বাড়লে স্রোতের গতি বেড়ে যায়। ফলে নদীর তীরবর্তী মাটিতে আঘাত হেনে ভাঙন সৃষ্টি হয়। এছাড়া নদীর তলে পলি জমা, নতুন চর তৈরি ও নদীর প্রশস্থতা বেশি হলে নদী ভাঙনের শঙ্কা বাড়ে।

স্থানীয়রা জানান- গত সপ্তাহ খানেক ধরেই পদ্মা নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে সদর উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের খলিফাচর থেকে শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের দশরশিয়া পর্যন্ত ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। যার দূরত্ব প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার। এসব এলাকায় প্রায় ৪০ হাজার মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। সবচেয়ে এখন বেশি ভাঙন হচ্ছে নারায়ণপুরের দেবীপুর ও পাঁকা ইউনিয়নের ছাব্বিশরশিয়ায়। সরকারি-বেসরকারি স্থাপনাগুলো রয়েছে হুমকিতে।

পদ্মা পাড়ের বাসিন্দা শামিম রেজা মিলন বলেন, উজানের ঢল আর বর্ষায় পদ্মার পানি বাড়ায় নদীভাঙন শুরু হয়েছে। ফলে আশপাশের জেগে ওঠা চরগুলোয় আশ্রয় নিচ্ছে মানুষ। গত ১ বছরের মধ্যে পদ্মার তীরবর্তী প্রায় ৬০০ পরিবারের ভিটেমাটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, গত কয়েক বছরের নদীভাঙনে আমাদেরই প্রায় ৪০ বিঘা আবাদি জমিসহ ভিটামাটি বিলীন হয়েছে। ছোটবেলার সব স্মৃতি এখন নদীতেই।

নারায়ণপুরের বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন বলেন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন পরিষদ, আশ্রয়ণকেন্দ্রসহ আরো কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পদ্মার দূরত্ব মাত্র একশ’-দেড়শ’ মিটার। হুমকিতে আছে এসব প্রতিষ্ঠানগুলো।

চরেও কষ্টে ভাঙনকবলিতরা

পদ্মার ভাঙন থেকে বাঁচতে বেশি পাকা ইউনিয়নের নিশিপাড়া ও নারায়ণপুর ইউনিয়নের কালুপুরের চর এলাকায় স্থান্তরিত হচ্ছে মানুষ। ভিটেমাটি হারিয়ে প্রায় ২০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। তবে চরে এসেও অনেক উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন তারা।

স্থানীয়রা বলছে- পদ্মার নদীর মাঝে জেগে ওঠা চরগুলোয় মানুষ বসবাসের অযোগ্য। পদ্মার তীরবর্তীর নিম্ন আয়ের মানুষরা বছরের পর বছর নদীর একূল-ওকূলে স্থানান্তরিত হচ্ছে। বাধ্য হয়েই তারা সেখানে বসবাস করেন। কিন্তু সেখানে খাবার পানি, সরকারি স্বাস্থ্যসেবাসহ অনেক কিছু থেকে তারা বঞ্চিত। তাছাড়া নতুন করে ‘সাপ আতঙ্কও’ বেড়েছে। গত বুধবার (১০ জুলাই) সকালে বাড়ির কাজ করার সময় বিষাক্ত সাপের কামড়ে মারা যান নিশিপাড়া চরের সায়েম আলীর স্ত্রী জিয়াসমিন। বসতবাড়িতে ইঁদুরের গর্ত থেকে একটি সাপ বের হয়ে জিয়াসমিনের হাতে ছোবল দেয়। এরপর পরিবারের লোকজন তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পথে নৌকাতেই মারা যান তিনি।

ওই গৃহবধূর স্বজন আব্দুল অহেদ বলেন, সকালে বিষাক্ত সাপে কামড় দিলে দেড় ঘণ্টা পর মারা যান জিয়াসমিন। এই সময়ের মধ্যে অ্যান্টিভেনম দেয়া গেলে বাঁচানো সম্ভব হতো।

নাজমুল ইসলাম নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, চরাঞ্চলে সাপের আতঙ্ক অনেক বেশি। নিশিপাড়া চরে অনেক ভাঙনকবলিতদের বসবাস। কিন্তু এখানে কোন অস্থায়ী স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র না থাকায় মানুষ আতঙ্কে আছেন। সেবার ভরসা কেবলমাত্র গ্রাম্য ডাক্তার।

সংশ্লিষ্টরা যা বলছে

নারয়ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. নাজির হোসেন বলেন, দুটি ইউনিয়নজুড়ে পদ্মায় ভাঙন বৃদ্ধি পেয়েছে। জিওব্যাগ দিয়ে ভাঙন রোধের চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। প্রতি বছরই স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের আলোচনা করা হলেও বাস্তবায়ন হয় না। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ হলে পদ্মার তীরবর্তীর মানুষ উপকৃত হবেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, নারায়নপুর ও পাঁকায় নদী ভাঙন তীব্র হয়েছে। এলাকাগুলোতে অস্থায়ী বাঁধ কোনো কাজে আসে না। তাই ২৩ কিলোমিটারজুড়ে পদ্মায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ হয়েছে। প্রকল্পটির আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা। একনেকে পাস হলে দরপত্র আহ্বান করে কাজ শুরু করা হবে।

জানতে চাইলে জেলার সিভিল সার্জন ডা. এসএম মাহমুদুর রশিদ বলেন, মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর একটি চিকিৎসা। নিশিপাড়া চরে অস্থায়ী স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র নির্মাণের জন্য খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আদেশে কাজ শুরু হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত