ঢাকা ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বন্দরনগরীর ভূগর্ভস্থ বর্জ্য সংরক্ষণের স্থান চূড়ান্ত

বন্দরনগরীর ভূগর্ভস্থ বর্জ্য সংরক্ষণের স্থান চূড়ান্ত

নগরীতে ভূগর্ভস্থ বর্জ্য সংরক্ষণাগার নির্মাণে ছয়টি স্থান চূড়ান্ত করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। ‘সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন’ (এসটিএস) হিসেবে ব্যবহার হবে এসব বর্জ্য সংরক্ষণাগার। এসটিএসগুলো নির্মাণে আগামী এক মাসের মধ্যে দরপত্র আহ্বান করার কথা রয়েছে। প্রতিটি এসটিএস নির্মাণে আড়াই থেকে ৩ কোটি টাকা খরচ হতে পারে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনও ১৫টি ভূগর্ভস্থ এসটিএস নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু করেছে। বর্তমানে নগরে ৭টি এসটিএস আছে। তবে এর একটিও ভূগর্ভস্থ নয়। নগরীর ভূগর্ভস্থ এসটিএস নির্মাণে চূড়ান্ত করা স্থানগুলো হচ্ছে- মহাজন ঘাটা, জিএম গেট, নয়া বাজার মোড়, আলমাস মোড় এবং ২ নম্বর গেট। এছাড়া জিইসি কনভেনশন হলের পেছনে অথবা নূর আহমদ সড়কে বিএনপির অফিসের সামনে বর্তমানে যেখানে ময়লা সংরক্ষণ করা হয় তার কোনো একটিতে এই এসটিএস নির্মাণ করা হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ভূগর্ভস্থ এসটিএস যখন ৮০ শতাংশ পূর্ণ হবে তখন অটো নোটিফিকেশন (স্বয়ংক্রিয় বার্তা) আসবে। তাছাড়া হাইড্রোলিক প্রেসারের মাধ্যমে ময়লাকে সংকোচন করে অর্ধেক হয়ে যাবে। অর্থাৎ ১০ টন ময়লা ফেললে সংরক্ষণ করলে তা ৫ টন হয়ে যাবে। এতে একই স্থানে আগের তুলনায় দ্বিগুণ বর্জ্য সংগ্রহ করা যাবে। একইসঙ্গে এসটিএস থেকে ল্যান্ডফিলে নেয়ার ক্ষেত্রে চসিকের ময়লা পরিবহন খরচও কমে আসবে। সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, ভূগর্ভস্থ এসটিএসগুলোতে সংরক্ষিত বর্জ্য চোখে দেখা যাবে না এবং আশপাশে দুর্গন্ধও ছড়াবে না। ৬টি স্থান চূড়ান্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করে সিটি মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেম জানান, আগামী এক মাসের মধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হবে। চসিক সূত্রে জানা গেছে, ফিনল্যান্ডের হাবা গ্রুপ গত বছরের আগস্ট মাসে চসিককে ভূগর্ভস্থ এসটিএস সরবরাহের প্রস্তাব দেয়। এরপর নভেম্বর মাসে ‘হাবা আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়েস্ট স্টোরেজ সিস্টেম’ এর আমন্ত্রণে ফিনল্যান্ড সফর করেন মেয়র। সেখানে তিনি ভূগর্ভস্থ এসটিএস পরিদর্শন করে এর নানা দিক খতিয়ে দেখেন। এ বিষয়ে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, ভূগর্ভস্থ এসটিএসগুলোতে সংরক্ষিত বর্জ্য চোখে দেখা যাবে না এবং আশপাশে দুর্গন্ধও ছড়াবে না। ছয়টি স্থান চূড়ান্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করে সিটি মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেম জানান, আগামী এক মাসের মধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হবে।

চসিক সূত্রে জানা গেছে, ফিনল্যান্ডের হাবা গ্রুপ গত বছরের আগস্ট মাসে চসিককে ভূগর্ভস্থ এসটিএস সরবরাহের প্রস্তাব দেয়। এরপর নভেম্বর মাসে ‘হাবা আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়েস্ট স্টোরেজ সিস্টেম’ এর আমন্ত্রণে ফিনল্যান্ড সফর করেন মেয়র। সেখানে তিনি ভূগর্ভস্থ এসটিএস পরিদর্শন করে এর নানা দিক খতিয়ে দেখেন। জাইকার তথ্য অনুযায়ী, নগরের ৪১ ওয়ার্ডে দৈনিক ৩ হাজার টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে ১ হাজার ৮৩০ টন গৃহস্থালি, ৫১০ টন সড়ক ও অবকাঠামোগত এবং ৬৬০ টন মেডিকেল বর্জ্য। উৎপাদিত বর্জ্যের মধ্যে কর্পোরেশন সংগ্রহ করে ২ হাজার টন। বাকি বর্জ্য নালা-নর্দমা, খাল-বিল, নদী ও উন্মুক্ত স্থানে পড়ে থাকে। এছাড়া ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বর্জ্য নিয়ে সমীক্ষায় চালায় ‘জেএফই ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন’ এবং ‘ইয়চিও ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন’। এতে বলা হয় নগরে প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার ১০০ টন বর্জ্য উৎপাদন হয়। যার ৬৮ শতাংশই খাদ্য সংশ্লিষ্ট। চসিক সূত্রে জানা গেছে, বাসাবাড়ি বা উৎস থেকে সংগৃহীত বর্জ্য এসটিএস এ নিয়ে আসে চসিক। এরপর এসটিএস থেকে ডাম্প ট্রাকে করে হালিশহরের আনন্দবাজার ও আরেফিন নগরে অবস্থিত ল্যান্ডফিলে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে চান্দগাঁও ওয়ার্ডের এফআইডিসি রোড, লালখান বাজার ওয়ার্ডের টাইগারপাস, পশ্চিম মাদারবাড়ি ওয়ার্ডের বরিশাল কলোনি, উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডের সাগরিকা, হালিশহর মুনিরনগর ওয়ার্ডের পোর্ট কানেকটিং রোডের পোর্ট মার্কেট, দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ডের বিমানবন্দর সড়কের বিজয় নগর বা ১৫ নম্বর এলাকায় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ৬টি এবং চান্দগাঁও ১ কিলোমিটার ফ্লাইওভারের নিচে চসিকের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত একটি এসটিএস আছে। অবশ্য বর্তমানে এসটিএস এর বাইরে নগরে শতাধিক উন্মুক্ত স্থান রয়েছে যেখানে বাসা–বাড়ি থেকে সংগৃহীত বর্জ্য এনে সাময়িকভাবে রাখে চসিক। চট্টগ্রামে ময়লা ফেলার প্রচলিত পদ্ধতিতে বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহের পর রাস্তার ওপরে থাকা বর্জ্য সংগ্রহাগারে (এসটিএস) সে ময়লা ফেলা হয়। পরবর্তীতে সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মীরা সে বর্জ্য সংগ্রহ করে ল্যান্ডফিল্ডে নিয়ে যান। এ পদ্ধতিতে রাস্তার উপর থাকা এসটিএসের বর্জ্যরে দুর্গন্ধে নাগরিকরা কষ্ট পান এবং রাস্তার ওপর থাকা বর্জ্য দৃষ্টিকটু পরিস্থিতি তৈরি করে। এ সমস্যা সমাধানে হাবাগ্রুপ ভূগর্ভস্থ বর্জ্য সংগ্রহাগার গড়ে তুলবে, ফলে ময়লা চোখেও পড়বে না এবং দুর্গন্ধও ছড়াবে না। এই আধুনিক বর্জ্য সংগ্রাহাকারে থাকবে হাইড্রোলিক প্রেসারের মাধ্যমে ময়লাকে সংকোচনের প্রযুক্তি। ফলে একই স্থানে আগের তুলনায় দ্বিগুণ বর্জ্য সংগ্রহ করা যাবে। আধুনিক প্রযুক্তির এই বর্জ্য সংগ্রহাগার পূর্ণ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বার্তা পাবেন সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মীরা। তখন সে বর্জ্য সংগ্রহ করে ল্যান্ডফিল্ডে নিয়ে যাবেন চসিকের কর্মীরা। পুরা প্রক্রিয়াটি একদিকে পরিবেশবান্ধব, অন্যদিকে কমাবে নাগরিক দুর্ভোগ, সাশ্রয় করবে চসিকের জ্বালানি খরচ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত