জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২

দেশে বিবাহিতের হার সবচেয়ে বেশি রাজশাহীতে, কম সিলেটে

প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে ১০ বছরের উপরে বয়সিদের ৬৫ দশমিক ২৬ শতাংশই বর্তমানে বিবাহিত এবং ২৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ মানুষ অবিবাহিত। আর বাকিরা বিধবা বা বিপত্নীক কিংবা তালাকপ্রাপ্ত। বিবাহিতদের মধ্যে নারীরা এগিয়ে। দশোর্ধ্ব নারীদের ৬৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ বিবাহিত এবং পুরুষদের ৬৩ দশমিক ০২ শতাংশ বিবাহিত। অঞ্চলভিত্তিক পরিসংখ্যানে বিবাহিতের হার সর্বোচ্চ রাজশাহী বিভাগে (৬৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ) এবং সর্বনিম্ন সিলেট বিভাগে (৫৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ)। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এর বৈবাহিক অবস্থার বিশ্লেষণে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের চট্টগ্রাম বিভাগে বিবাহিতের হার ৬১ দশমিক ৬৭ শতাংশ, বরিশালে ৬৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ, ঢাকায় ৬৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ খুলনায় ৬৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৬৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং সিলেট বিভাগে ৬৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ। অবিবাহিতদের হার সবচেয়ে বেশি সিলেট বিভাগে ৩৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এছাড়াও দেশে ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ মানুষ বিধবা বা বিপত্নীক। এরমধ্যে ০ দশমিক ৯৬ শতাংশ পুরুষ এবং ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ নারী। বিধবা বা বিপত্নীক হার সবচেয়ে বেশি রংপুর বিভাগে ৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ। সবচেয়ে কম ঢাকা বিভাগে ৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ। বরিশাল বিভাগ সেই হার ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫ দশমিক ১৪ শতাংশ, খুলনা বিভাগে ৫ দশমিক ৬২ শতাংশ, ময়মনসিংহ বিভাগে ৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে ৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ, এবং সিলেট বিভাগে ৫ দশমিক ৮১ শতাংশ। প্রতিবেদনে আরো দেখা যায়, দেশে তালাকপ্রাপ্তের হার ০ দশমিক ৪২ শতাংশ। তালাকপ্রাপ্তিতে সর্বোচ্চ হার নারীদের ০ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং ০ দশমিক ২১ শতাংশ পুরুষ। বিভাগ অনুযায়ী সবচেয়ে কম তালাক হয়, বরিশাল বিভাগে ০ দশমিক ২৯ শতাংশ। অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি তালাক হয় রাজশাহী বিভাগে ০ দশমিক ৬১ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিভাগে তালাকপ্রাপ্তের হার ০ দশমিক ৩০ শতাংশ, ঢাকা বিভাগে ০ দশমিক ৪০ শতাংশ, খুলনায় ০ দশমিক ৫৫ শতাংশ, ময়মনসিংহে ০ দশমিক ৪০ শতাংশ রংপুরে ০ দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং সিলেট বিভাগে ০ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এদিকে দেশে দাম্পত্য বিচ্ছিন্নের হার ০ দশমিক ৩৭ শতাংশ। দাম্পত্য বিচ্ছিন্নে নারীদের হার বেশি ০ দশমিক ৫১ শতাংশ। পুরুষের ০ দশমিক ২২ শতাংশ। দাম্পত্য বিচ্ছিন্নের হার সবচেয়ে বেশি খুলনা বিভাগে ০ দশমিক ৪৬ শতাংশ এবং সবচেয়ে কম বরিশাল বিভাগে। ঢাকায় ও রাজশাহী বিভাগে সেই হার ০ দশমিক ৩৭ শতাংশ, চট্টগ্রামে ০ দশমিক ৩২ শতাংশ, রংপুর ও ময়মনসিংহে ০ দশমিক ৩৫ শতাংশ এবং সিলেট বিভাগে দাম্পত্য বিচ্ছিন্নের হার ০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। তবে বিবিএসের এই প্রতিবেদনে বৈবাহিক সম্পর্কের যে তথ্য উঠে এসেছে, তা পুরোপুরি চিত্র নয় বলে মনে করেন জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন। তিনি বলেন, গ্রামাঞ্চলে এখনো মুখে মুখে তালাক দেওয়ার প্রবণতা আছে। তাছাড়া রাজধানীতে বা বিভিন্ন শহরে অনেকে বিয়ে করে রেজিস্ট্রি করেন না। এই দুটো বিষয় কিন্তু পুরোপুরি রেজিস্ট্রেশনের উপর নির্ভর করে। সেক্ষেত্রে প্রতিবেদনে বৈবাহিক অবস্থার প্রকৃত যে চিত্র, তা পুরোপুরি উঠে আসেনি। মুখে মুখে তালাক বা রেজিস্ট্রেশন না করে বিয়ে করার সংখ্যা নেহায়েত কম নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’-এ সম্পর্কে জানতে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ডেমোগ্রাফি অ্যান্ড হেলথ উইংয়ের উপ-পরিচালক মো. আলমগীর হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি প্রকল্প পরিচালক দিলদার হোসেনের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। পরবর্তী সময়ে দিলদার হোসেনকে একাধিকবার ফোন ও মেসেজ করেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

উল্লেখ্য, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায় ১৯৭৪ সালে প্রথম আদমশুমারি ও গৃহগণনা হয়। তখন দেশের জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি ১৫ লাখ। এরই ধারাবাহিকতায় ১০ বছর পরপর ১৯৮১, ১৯৯১, ২০০১ এবং ২০১১ সালে যথাক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম আদমশুমারি ও গৃহগণনা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৮১ সালের আদমশুমারিতে মোট জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৮ কোটি ৭১ লাখ ১৯ হাজার ৯৬৫ জনে।

১৯৯১ সালে দেশে মোট জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ কোটি ৬৩ লাখে। ২০০১ সালে চতুর্থ আদমশুমারি ও গৃহগণনা করা হয়। সে সময় জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১২ কোটি ২৪ লাখ। ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম জনশুমারিতে দেখা যায়, দেশের জনসংখ্যা বেড়ে হয় ১৪ কোটি ৪০ লাখ। ষষ্ঠ এবং সর্বশেষ ডিজিটাল জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ এ মোট জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ কোটি ৯৭ লাখ ৪৭৭ জনে।