ফ্লাইট চলাচল স্বাভাবিক

যাত্রীর চাপের কারণে ভাড়া বেশি নেয়ার অভিযোগ

প্রকাশ : ২৯ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

কোটা আন্দোলন, সংঘর্ষ ও দেশজুড়ে কারফিউ জারির প্রভাবে বিমান চলাচল ব্যাহত হয় গত এক সপ্তাহ। গত শনিবার থেকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের সব বিমানবন্দর হতে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। তবে আকাশ পথে যাত্রীদের চাপের কারণে ভাড়া বেশি নেয়ার অভিযোগও উঠেছে।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) গত শুক্রবার জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ১৪৭টি ফ্লাইট চলাচল করেছে ও ১১৩টি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চলাচল করেছে। ফ্লাইট ছাড়ার ক্ষেত্রেও নেই সিডিউল বিপর্যয়।

এয়ারলাইন্স কর্মকর্তারা জানান, কয়েকদিন আন্দোলন আর কারফিউর কারণে গণপরিবহন সংকট ছিল। এ কারণে যথাসময়ে বিমানবন্দরে পৌঁছাতে সমস্যা হচ্ছিল বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীদের। এতে ফ্লাইট শিডিউলও বিঘ্নিত হয়। বাতিল হয়েছে সৌদিয়াসহ বেশ কয়েকটি বিদেশি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট। বিমানবন্দরে চরম ভোগান্তির শিকার হন অনেক যাত্রী। গণপরিবহন চালু হওয়ায় সেই সংকট কেটে গেছে। তবে যাত্রী কিছুটা কম রয়েছে। এ কারণে কমিয়ে দেয়া হয়েছে ফ্লাইট।

ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম জানিয়েছেন, বিমানবন্দর থেকে নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যাচ্ছে ইউএস বাংলাসহ বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) বোসরা ইসলাম জানান, সঠিক সময়ে বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যাচ্ছে বিমানের সব ফ্লাইট। এয়ার অ্যাস্ট্রার ডেপুটি ম্যানেজার সাকিব হাসান শুভ বলেন, ইন্টারনেটের গতি কম থাকায় অনলাইনে টিকিট বিক্রিতে তারা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। সাকিব জানিয়েছেন, তারা ফ্লাইটের সংখ্যা কমিয়েছেন কারণ অবসরে ভ্রমণকারীরা কারফিউয়ের মধ্যে আপাতত ভ্রমণ করছেন না। কক্সবাজার ভ্রমণকারী পর্যটকের সংখ্যা কমে গেছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম জানান, বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সঠিক সময় যাত্রীরা বিমানবন্দরে পৌঁছাতে পারায় শিডিউল অনুযায়ী ছেড়ে যাচ্ছে সব ফ্লাইট।

ট্রাভেল এজেন্সিগুলো দাবি করেছে, কোটা সংস্কার অন্দোলন ঘিরে সংহিংসতার মধ্যে গেল বৃহস্পতিবার থেকে সারা দেশে ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে ছয় দিনে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা ব্যবসা করতে পারেনি তারা। এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ) বিধি অনুসারে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর পাওনা অর্থও পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। প্রায় ৪ হাজার ট্রাভেল এজেন্টের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ-আটাব বলছে, ট্রাভেল এজেন্টদের প্রতিদিন অন্তত ১০০ কোটি টাকার বাজার রয়েছে। গত ১৮ জুলাই থেকে সব ধরনের ফ্লাইটের টিকিট বিক্রি, তারিখ পরিবর্তন ও হোটেল বুকিং বন্ধ থাকায় এই বিপুল পরিমাণ ব্যবসা করতে পারেনি।

এদিকে কোটা আন্দোলনে গত এক সপ্তাহ ধরে দেশের বিভিন্ন জেলায় যেতে বিমানে যাতায়াতকে বেছে নিয়েছে অনেকেই। এতে দেশের অভ্যন্তরীণ সাতটি রুটে চলাচল করা চারটি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে যাত্রীর চাপ বেড়ে যায়। গত কয়েকদিন ধরে অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচল করা যাত্রীদের স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে টিকিট কিনতে পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা বেশি গুনতে হয়েছে। তবে গত তিন দিন ধরে চাহিদা কমায় টিকিটের দামও কমেছে বলে জানিয়েছে এয়ারলাইন্সগুলো।

যাত্রীদের অভিযোগ, বিকল্প ব্যবস্থা না থাকার সুযোগে উড়োজাহাজ সংস্থাগুলো টিকিটের বাড়তি দাম নিয়েছে। যাত্রীরা বলেছেন, দেশের ভেতরে বিভিন্ন গন্তব্যে তাদের কাছ থেকে টিকিটের দাম ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা পর্যন্ত রাখা হয়েছে।

অবশ্য উড়োজাহাজ সংস্থাগুলো বলছে, নির্ধারিত ফ্লাইটের অধিকাংশ টিকিট সাধারণত আগাম বিক্রি হয়ে যায়। শেষের দিকে যেসব টিকিট থাকে, তার দাম বেশি হয়। গত সোমবার থেকে যাত্রীর চাপ কমে এসেছে। এখন উল্টো যাত্রীসংকট দেখা দিয়েছে। সোমবার এবং এরপর থেকে প্রায় অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে ফ্লাইট পরিচালনা করতে হয়েছে।

বর্তমানে দেশে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং বেসরকারিভাবে ইউএস বাংলা, নভো এয়ার ও এয়ার অ্যাস্ট্রা অভ্যন্তরীণ রুটে প্রতিদিন অর্ধশতাধিকের বেশি ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তারা জানান, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় সড়ক পথ অবরুদ্ধ থাকায় আকাশ পথকে বেছে নিয়েছিলেন যাত্রীরা। এতে শুরুতে ফ্লাইটের তুলনায় যাত্রীসংখ্যা বেশি ছিল। পরবর্তীতে ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় ম্যানুয়ালি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়েছিল তাদের। ফলে অপারেশনাল খরচ বেড়ে গিয়েছিল। তবে সব চেয়ে বেশি সমস্যা হয়েছিল ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ফ্লাইট ভর্তি যাত্রী পরিবহন করলেও ফিরতি ফ্লাইট প্রায় অল্প যাত্রী নিয়ে ফিরতে হয়েছিল তাদের। ফলে বিমান পরিচালনায় খরচ বেশি হয়েছিল। এছাড়া আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী ফ্লাইটের ভাড়া ছয়টি ধাপে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। এসব স্তরভেদে টিকিটের দাম ৫ হাজার ২০০ থেকে ১১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। তাই শেষ সময়ে টিকিট নিশ্চিত করলে সর্বোচ্চ দামে কিনতে হয়।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বোসরা বলেন, গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ রুটে আমাদের ফ্লাইট কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিল। সপ্তাহে সর্বনিম্ন ১১টি ও সর্বোচ্চ ১২টি ফ্লাইট চলাচল করছে অভ্যন্তরীণ সাতটি রুটে। কোনো ফ্লাইটই খালি ছিল না।