স্থবিরতা কাটিয়ে বেনাপোল বন্দরে ফিরেছে কর্মচাঞ্চল্য
প্রকাশ : ৩০ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশজুড়ে প্রথমে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ এবং পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারফিউ জারি করা হলে যশোরের বেনাপোল বন্দরে আমদানি রপ্তানি কার্যক্রমে নেমে আসে স্থবিরতা। চার দিন পর ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা চালু হলে বন্দরে কর্মচাঞ্চল্য ফিরতে শুরু করেছে। তবে এ সময়ের মধ্যে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে কিছু পচনশীল পণ্য আনা নেয়া করা হলেও তা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় খুবি কম। ইন্টারনেট সেবা চালুর পর গত পাঁচ দিনে ভারতের পেট্রাপোল বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে বেনাপোল বন্দরে ঢুকেছে এক হাজার চারশ ১৪টি ট্রাক; আর পণ্য নিয়ে চারশ ৯৩টি ট্রাক ভারত গেছে বলে জানিয়েছেন বেনাপোল বন্দর পরিচালক রেজাউল করিম।
এছাড়া আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে যাত্রী পারাপারসহ বন্দর ও কাস্টমসের সব কাজকর্মে গতি ফিরেছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ ও শুল্ক কর্মকর্তারা বলছেন, স্বাভাবিক সময়ের মতো অফিস খোলা হচ্ছে। দ্রুত পণ্যচালান খালাসের জন্য তারা সব সময় প্রস্তুত। এ জন্য শুল্কায়নসহ সব কাজকর্ম করতে কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বন্দর পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ২৩ জুলাই ভারত থেকে এসেছে ৩৭ ট্রাক পণ্য আর রপ্তানি হয়েছে ৩৬ ট্রাক পণ্য। ২৪ জুলাই আমদানি হয়েছে ৩৩৮ ট্রাক পণ্য আর রপ্তানি হয়েছে ৪২ ট্রাক পণ্য। ২৫ জুলাই আমদানি হয়েছে ৩৬৬ ট্রাক পণ্য আর রপ্তানি হয়েছে ৯৭ ট্রাক পণ্য। ২৭ জুলাই আমদানি হয়েছে ৩৪৮ ট্রাক পণ্য আর রপ্তানি হয়েছে ১৮৩ ট্রাক পণ্য। ২৮ জুলাই আমদানি হয়েছে ৩২৫ ট্রাক পণ্য আর রপ্তানি হয়েছে ১৩৫ ট্রাক পণ্য। ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক মতিয়ার রহমান জানান, প্রতিদিন বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৬০০ ট্রাক বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি এবং ২০০ ট্রাক পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়ে থাকে। আমদানি পণ্য থেকে প্রতিদিন সরকারের রাজস্ব আসে ৩০ কোটি টাকার মতো। ভারতের সঙ্গে কিছুদিন ধরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর থেকে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে পণ্য আমদানি কমার পাশাপাশি পেট্রাপোল বন্দরে পণ্যজট তৈরি হয়েছে। ফলে প্রতিদিন ১০ চাকার ট্রাকে দেড় হাজার ও ছয় চাকার ট্রাকে এক হাজার রুপি করে মাশুল গুণতে হচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশি আমদানিকারকেরা। বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন পুলিশের ওসি আজহারুল ইসলাম বলেন, বেনাপোল পেট্রাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে দুদেশের মধ্যে যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক রয়েছে। তবে স্বাভাবিক সময়ের চাইতে যাত্রী পারাপার কিছুটা কম। বেনাপোল বন্দর হ্যান্ডেলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি কলিম উল্যা কলি বলেন, এক সপ্তাহ ধরে থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় পণ্য উঠানামার কাজ করতে শ্রমিকদের বেগ পেতে হচ্ছে। অন্য সংগঠন বেনাপোল বন্দর হ্যান্ডেলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রাজু উদ্দিন বলেন, আমদানি পণ্য বন্দরের গুদামে নামানোর কাজ চলছে; তবে পণ্য খালাস কম হচ্ছে। বন্দরে পণ্যজট কমাতে দ্রুত পণ্য খালাসের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকাকালীন আমদানি-রপ্তানি একেবারে বন্ধ ছিল না। ২০ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম ম্যানুয়ালি চালু ছিল। এ সময় আমদানি করা পচনশীল পণ্য বন্দর থেকে দ্রুত খালাসের কার্যক্রম সচল ছিল। ২৪ জুলাই থেকে ইন্টারনেট সচল হওয়ায় বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়। সেই সঙ্গে অপারেশনাল কার্যক্রম পুনরায় অটোমেশন সফটওয়্যারের মাধ্যমে চালু করা হয়। বর্তমানে বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সচল ও স্বাভাবিক আছে।