প্রায় এক বছরের কাছাকছি সময় ধরে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুতে। সেতুতে যান চলাচল বন্ধ থাকায় মানুষ ফেরীযোগে সেতু পারাপার করে আসছিল। বিগত জুন মাসের শেষের দিকে সেতুতে ওয়াকওয়ে চালু হলে বহু মানুষ এর সুফল পাচ্ছে। ওয়াকওয়ে দিয়ে সেতু পারাপার করে আসছে নির্বিঘ্নে। এতে ঝুঁকি কমলেও ভোগান্তি কমেনি বিন্দুমাত্রও। দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের এ কষ্ট লাঘব হতে চলেছে শিগগিরই। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগস্ট মাসেই যানচলাচলের জন্য কালুরঘাট সেতু উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। এরইমধ্যে কালুরঘাট সেতুতে কার্পেটিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। যান চলাচলের জন্য উপযোগী করা হয়েছে সেতুটি। সংস্কার কাজও প্রায় শেষের দিকে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে, কালুরঘাট সেতুর কাজ প্রায় শেষ। চলতি মাসেই যানচলাচল চলাচলের জন্য এ সেতু উন্মুক্ত করে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি। সূত্র জানায়, গত বছরের ১ আগস্ট থেকে কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজ শুরু হয়। এর আগে ১৮ জুন বুয়েটের পরামর্শ অনুযায়ী সেতুটি মেরামতের জন্য রেলওয়ের সঙ্গে ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের চুক্তি স্বাক্ষর হয়। প্রথম দফায় গত বছরের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে সেতুর সংস্কার কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তুনির্দিষ্ট সময়ে সংস্কার কাজ শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ পর্যন্ত বেশ কয়েক দফায় সেতুরটির সংস্কার কাজ শেষের মেয়াদ বাড়ানো হয়। এ সেতুটি সংস্কার করে কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচলের পাশাপাশি বোয়ালখালীসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামে যানবাহন চলাচল উপযোগী করে তোলার লক্ষ্যে ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের সঙ্গে ৪৩ কোটি টাকায় সংস্কারের চুক্তি হয় রেলওয়ের। বুয়েটের বিশেষজ্ঞ টিমের তত্ত্বাবধানেই সেতুটির সংস্কার কাজ করছে ম্যাক্স। এদিকে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও পারেনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে অবশেষে এ সেতুর সংস্কার কাজ শেষ করেছে তারা। এরআগে সেতুতে যুক্ত হওয়া ওয়াকওয়ে গত ঈদুল আজহার সময় পথচারীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এতে কিছুটা স্বস্তি মিলে জনমনে। ফেরি পারাপারের দুর্ভোগ এড়াতে মানুষজন পায়ে হেঁটে সেতু পারাপার করছেন। কিন্তু বন্ধ ছিল যানচলাচল। যার কারণে ফেরিতে করে এসব যানবাহন পারাপার হতো। এতে দুর্ভোগ বাড়ে এ অঞ্চলের মানুষের। ফেরিযোগে পারাপারে ঘটে যায় বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সেতু প্রকৌশলী জিসান দত্ত জানান, কালুরঘাট সেতুর কার্পেটিংয়ের কাজ শেষ। আন্দোলন-সহিংসতার কারণে সংস্কার কাজে বিলম্ব হয়েছে। এই মাসেই সংস্কার কাজ শেষ হবে। তবে যান চলাচলের জন্য সেতু উন্মুক্তের বিষয়ে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-কক্সবাজার ট্রেন চলাচলের জন্য জরাজীর্ণ কালুরঘাট সেতুটি সংস্কার অপরিহার্য হয়ে পড়ে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীদের পরামর্শে ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটি সংস্কার কাজে হাত দেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সংস্কার কাজ করছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনর্ফ্যাস্ট্রাকচার লিমিটেড।
প্রসঙ্গত, ১৯৩০ সালে নির্মিত কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট সেতুটি এর আগে ১৯৮৬-৮৭ এবং ২০০৪-০৫ সালে দুই দফায় সেতুর সংস্কার হয়। তখন সেতুর ওপরের পাটাতন পরিবর্তন করে নতুন করে রেললাইন বসানো হয়েছিল। ডিসেম্বরে প্রথম ধাপের সংস্কারের পর সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ১৯৬২ সালে যান চলাচল শুরু হয়। এর আগে দুবার সংস্কার করা হয়েছিল।