রাজধানীর বনানীর সেতু ভবনে হামলার ঘটনায় করা মামলায় বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির সভাপতি (বিজেপি) ও সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থর ফের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল মঙ্গলবার পাঁচদিনের রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে ফের ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। অন্যদিকে, তার আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সুলতান সোহাগ উদ্দিন তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে গত বুধবার রাতে রাজধানীর বারিধারা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ১৮ জুলাই প্রতিদিনের মতো সেতু ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যথারীতি অফিসের কার্যক্রম করতে থাকেন। চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী অজ্ঞাতনামা ২৫০/৩০০ জন আসামি কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও নাশকতা করার লক্ষ্যে বেআইনি জনতাবদ্ধে আবদ্ধ হয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র, লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেল নিয়ে আমাদের অফিসের সামনে এসে সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। সেতু ভবনের সিনিয়র সচিবসহ কর্মকর্তাদের পদণ্ডপদবি উল্লেখ করে খোঁজাখুঁজি করে হুমকি প্রদর্শন ও ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে অন্তর্ঘাতমূলক ভীতি সৃষ্টি করে সেতু ভবন লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। একপর্যায়ে আসামিরা আমাদের অফিসের মূল ফটক ভেঙে অনধিকার প্রবেশ করে সেতু ভবনের নিচ তলায় ভবনের সামনে রক্ষিত জিপ, কার, বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, পিকআপ, মোটরসাইকেল, নিরাপত্তা ভবন, সিসি ক্যামেরা, পার্কিং শেড, ক্যানটিন, গাড়িচালকদের কক্ষ, আনসার শেড, মুজিব কর্নার, জেনারেটরস কক্ষসহ মূল ভবন ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ ঘটায়। এ সময়ে সেতু ভবনের সিনিয়র সচিব ও অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীরাসহ সেতু ভবনের ভেতরে থাকা অফিস স্টাফ ও নিরাপত্তাকর্মী আসামিদের ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম থেকে সরে যেতে অনুরোধ করলে আসামিরা তাদের হাতে থাকা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র, লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেল দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে সেতু ভবনের সিনিয়র সচিব, অন্য অফিস স্টাফ ও নিরাপত্তাকর্মীদের এলোপাথাড়ি মারধর করে সাধারণ ও গুরুতর জখম করে। মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, পরবর্তীতে আসামিরা নিচ তলার আনসার শেড, ড্রাইভার শেড হতে চেয়ার টেবিলসহ অন্যান্য আসবাবপত্র এবং সেতু ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে নিচতলা হতে ১১ তলা পর্যন্ত অফিসে ভাঙচুর করে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে অফিসে রক্ষিত কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ফাইল কেবিনেট, এসি, ফ্যান, পানির ফিল্টার, চেয়ার, টেবিল, আসবাবপত্রসহ অন্যান্য সরকারি ও ব্যক্তিগত মালামাল সামগ্রী চুরি করে এবং প্রত্যেক ফ্লোরে অগ্নিসংযোগ ঘটায়। আসামিদের এরূপ ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড ও অগ্নিসংযোগে সেতু ভবনের নিচতলা হতে ১২ তলা পর্যন্ত ফ্লোরে রক্ষিত সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ, পদ্মা সেতু প্রকল্প, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বহুলেন সড়ক টানেল- প্রকল্প, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প সেতু বিভাগের আওতাধীন সব প্রকল্পের প্রধান কার্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দলিলাদি, এফডিআর ইনস্ট্রুমেন্ট, টেন্ডার সিকিউরিটি ডকুমেন্টস, ইন্টারনেট সার্ভার, শতাধিক কম্পিউটার ও কম্পিউটার সামগ্রী, আসবাবপত্র, কম্পিউটার, জেনারেটর, অগ্নিনির্বাপকসহ যাবতীয় নথিপত্র এবং সেতু ভবনের পার্কিংয়ে তা থাকা ৩২টি জিপ গাড়ি, ৯টি পিকআপ, ৭টি মাইক্রোবাস, ১টি মিনিবাস, ৫টি মোটরসাইকেল, ১টি অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দিলে ভস্মীভূত হয় আনুমানিক ৩০০ কোটি টাকার মালামাল। তাৎক্ষণিক বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ মারফত ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ইউনিটকে জানানো হয়। এ ঘটনায় সেতু ভবনের কেয়ারটেকার রবিউল ইসলাম বাদী হয়ে বনানী থানায় একটি মামলা করেন।