সুসংবাদ প্রতিদিন
নওগাঁয় জিরা চাষে সফল জহুরুল
প্রকাশ : ০২ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
জিরা দামি মসলাজাতীয় অর্থকরী ফসলগুলোর একটি। যদিও আমাদের দেশে জিরার চাহিদা মেটাতে নির্ভর করতে হয় আমদানিতে। তবে, এবার পরীক্ষামূলক চাষ করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার শিয়ালা গ্রামের কৃষক জহুরুল ইসলাম বাদল। বাম্পার ফলন পেয়ে তিনি বেশ খুশি। তাকে দেখে অন্যান্য কৃষকদের মাঝে বাড়ছে আগ্রহ। তার চাষ করা জিরা দেখতে ভিড় করছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত দর্শনার্থীরা। কৃষক জহুরুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন থেকে বিভিন্ন দামি উচ্চ ফলনশীল সবজি চাষ করে আসছেন তিনি। বাজারে দাম বেশি হওয়ায় জিরা চাষে উদ্বুদ্ধ হন। এরপর অনলাইনে এর চাষাবাদ পদ্ধতি দেখে ভারত থেকে প্রায় ১ হাজার টাকা খরচ করে বেগুনি ফুলের জাতের ৫০০ গ্রাম জিরার বীজ সংগ্রহ করেন। স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শে সরিষা যেমনভাবে চাষ করা হয় একই উপায়ে ৫ শতক জমিতে এই জিরার বীজ বোপণ করেন তিনি। তিনি আরো বলেন, গাছে যতগুলো ফুল ছিল ততগুলোই জিরা ধরেছে। বর্তমানে জিরা পরিপক্ক হয়েছে। ৫ শতক জমি থেকে ১০ থেকে ১২ কেজি জিরা পাওয়ার আশা করছেন তিনি। তার জমিতে উৎপাদিত জিরার গন্ধ ও স্বাদ অতুলনীয় এবং বাজারে পাওয়া জিরার চেয়ে অনেক ভালো বলে জানান তিনি। রোগবালাই একেবারেই নেই এবং পানি সেচও দিতে হয় না। তাই কম খরচ ও পরিশ্রমে দেশের মাটিতে এমন দামি মসলা চাষ করে আর্থিকভাবে অধিক লাভবানও হওয়া সম্ভব বলে মনে করছেন কৃষক জহুরুল। শীতকালীন এই ফসলের বীজ বোপণের ৩ থেকে সাড়ে ৩ মাস সময় লাগে জিরা ঘরে তুলতে। দেশের মাটিতে বিশেষ করে উত্তরের খাদ্যভা-ার হিসেবে পরিচিত নওগাঁর মাটিতে জিরাসহ আরো অন্যান্য দামি মসলা জাতীয় ফসল চাষ করা সম্ভব সেটাই প্রমাণ হয়েছে। আগামীতে তিনি আরো বেশি পরিমাণ জমিতে জিরার আবাদ করবেন বলে জানিয়েছেন।
বগুড়ার গাবতলী এলাকা থেকে আসা দর্শনার্থী মোতালেব হোসেন বলেন, ‘দেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো জিরার গাছ দেখতে এসেছি। জহুরুল ভাইয়ের জমিতে হওয়া জিরার গন্ধ অতুলনীয়। আরো কৃষকরা যদি জিরার চাষ করে তাহলে আমদানি নির্ভর এই ফসলটি আগামীতে বাজারে সহজেই কম দামে পাওয়া সম্ভব। তাই আমিও আগামীতে কিছু জমিতে জহুরুল ভাইয়ের মতো জিরার আবাদ করব।’
একডালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. শাহজাহান আলী বলেন, ‘এটা ভালোলাগার একটি বিষয় যে আমার এলাকার একজন সৌখিন কৃষক জহুরুল দামি মসলা ফসল জিরা চাষে সফল হয়েছেন। জহুরুল জিরা চাষে বাম্পার ফলন পেয়ে দৃষ্টান্তর স্থাপন করেছেন। জহুরুলের মতো আরো আগ্রহী কৃষকদের মাধ্যমে যদি উপজেলায় জিরার মতো অন্যান্য দামি ফসল চাষের রেওয়াজ চালু করা সম্ভব হয় তাহলে আমদানি নির্ভরতা যেমন কমবে তেমনি দেশের মানুষরা সহজেই কম দামে এই পণ্যগুলো হাতের নাগালে পাবেন।’ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফারজানা হক বলেন, আমরা পরীক্ষামূলক জিরা চাষে সফল হয়েছি। কৃষক জহুরুলের মাধ্যমে পুরো দেশের কৃষকদের কাছে একটি বার্তা পৌঁছে দেয়া সম্ভব হলো যে খুব সহজেই আমাদের মাটিতে জিরার মতো দামি মসলা জাতীয় ফসল চাষ করা সম্ভব। এই জিরা চাষের মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম যে সরিষার মতো করে জিরা চাষ করে ফলন পাওয়া সম্ভব। তিনি আরো বলেন, জিরা চাষে রোগবালাইয়ের আক্রমণ কম ও সেচের প্রয়োজন হয় না বলে খরচও অনেক কম। নওগাঁয় জিরা চাষের এক সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ রয়েছে বলে আমি মনে করি। তাই জিরাসহ অন্যান্য নতুন দামি ফসল চাষে আগ্রহীদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে।