জেলার চান্দিনার সাইফুল কেঁচো সার উৎপাদনে সাফল্য পেয়েছেন। প্রথমে সাইফুল ১৬টি রিং দিয়ে কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করলেও এখন রিংয়ের সংখ্যা ২০০টি। প্রতি মাসে তার সার উৎপাদন হয় ৭ টনের মতো। কেজিপ্রতি ১৫ টাকা দরে বিক্রি করেন। জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও বাইরের জেলা থেকেও ক্রেতারা সার নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ক্রেতার চাহিদা পূরণ করতে হিমশিম খান।
সাইফুল ইসলাম বলেন, তিনি বেসরকারি সংগঠনের একটি আইটি সেকশনে কাজ করতেন। ওদের কেঁচো সারের উদ্যোগ তার নজরে পড়ে। তিনি জানতে পারেন, মাটির জৈব পদার্থের পরিমাণ পাঁচ ভাগ থাকতে হয়। দেশের অনেক জায়গায় তা দুই ভাগেরও কম। এ জন্য প্রয়োজন মাটিতে জৈবসার প্রয়োগ। এছাড়া এ সারের চাহিদা রয়েছে। মনোযোগ দিয়ে করলে ভালো আয়ও সম্ভব। সে ভাবনা থেকে তার বাড়ি কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার পিহর গ্রামে ফিরে আসেন।
তার ভাবনার কথা স্ত্রীকে জানান। স্ত্রী কৃষি ডিপ্লোমা করা। তিনি তার উদ্যোগে সমর্থন দেন। স্ত্রীর অনুমতি পেলেও প্রতিবেশী এবং গ্রামের লোকজন সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখতে থাকেন। ছেলেটা যেন বদলে গেছে। টয়লেটে ব্যবহার করার মতো রিং সংগ্রহ করছে। গোবর মাটি সংগ্রহ করছে। তার মধ্যে ছাড়ছে কেঁচো। মেধাবী ছেলেটার মাথা মনে হয় গেছে। এভাবেই শুরু করেন তরুণ সাইফুল ইসলাম।
সরেজমিনে পিহর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের পাশে একটি লম্বা টিনের চালার ঘর। ঘরের গায়ে ব্যানারে লেখা- প্ল্যান পাওয়ার কেঁচো সার। ঘরের ভিতরে রিংয়ের সারি। রিংয়ে মাটি ও কেঁচো দেয়া। সার সংগ্রহ, চালুনি, ওজনের পর বস্তায় নেয়ার কাজ চলছে। সহকারীদের সঙ্গে ব্যস্ত উদ্যোক্তা সাইফুল ইসলামও। নতুন অনেকে সেখানে প্রবেশ করে কেঁচো দেখলে হয়তো গা ঘিন ঘিন করে উঠবে। কিন্তু তারা হাসিমুখে কাজ করে যাচ্ছেন।
সাইফুল ইসলাম বলেন, ২০২১ সালে কাজ শুরু করি। স্ত্রী কৃষি নিয়ে লেখাপড়া করায় সহযোগিতা পেয়েছি। এ কাজ তাকে আনন্দ দেয়। কারণ তিনি মাটির প্রাণ ফিরিয়ে দিতে জৈব সার তৈরি করছেন। এছাড়া এটা তার পরিবারের আয়েরও উৎস। মানুষ নিরাপদ ফসল চায়। যখন শুরু করেন তখন এলাকার অনেকে বলেন- এটা পাগলামি। কিন্তু তার বিশ্বাস ছিল, তাই সফলতা পেয়েছেন। ধৈর্য নিয়ে লেগে থাকলে সফলতা আসবেই। কৃষি অফিসের সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন বলেও তিনি জানান।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আইউব মাহমুদ বলেন, কৃষক এখন রাসায়নিক সার ত্যাগ করে জৈব প্রযুক্তির কেঁচো সার ব্যবহার করছেন। এর মধ্যে সুয়ালক, গোয়ালিখোলা, ডলুপাড়া ও ক্যামলংয়ের চাষিদের মধ্যে এটি জনপ্রিয় হয়েছে। ছড়িয়ে পড়ছে অন্য উপজেলায়ও।