দল ও সরকার থেকে কাদেরের অব্যাহতি দাবি রওশনের জাপার

প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে জটিলতা তৈরির জন্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে দায়ী করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে দল ও সরকার থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি। গতকাল শনিবার বিকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানায় তারা। দলের নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, শুরুতে একটা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ছিল। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ করলেই এই সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। কিন্তু তা না করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বললেন, শক্তি প্রয়োগ করে তাদের দমন করা হবে। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে এক পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও হেলমেট বাহিনী মাঠে নেমে পড়ে। তার বক্তব্যের জন্যই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ভিন্নদিকে গিয়েছে। সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলনের মধ্যে গত ১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নে বলেন, মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কোটা পাবে না তো কি রাজাকারের নাতিপুতিরা পাবে?

পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেমে মিছিল বের হয় ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার, রাজাকার’। কিছুক্ষণ পর এই স্লোগান চলার পর অবশ্য স্লোগান পাল্টে বলা হয়, ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে স্বৈরাচার, স্বৈরাচার’। সেই রাতেই ছাত্রলীগ মিছিল বের করে, ‘তুমি কে আমি কে, বাঙালি বাঙালি। তবে পরদিন সকালে ওবায়দুল কাদের এক বক্তব্যে বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঔদ্ধত্বের জবাব দেবে ছাত্রলীগ।” সেদিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়। এর প্রতিবাদে পরদিন ১৬ জুলাই সারা দেশের শিক্ষাঙ্গনে বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়। সেদিন রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গুলিতে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়। ১৭ জুলাই জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তার বিশ্বাস শিক্ষার্থীরা আদালতে ন্যায়বিচার পাবে। তবে পরের দিন কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির ডাক আসে শিক্ষার্থীদের তরফে। সেদিন ঢাকার বাড্ডা ও উত্তরায় সংঘাতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। দুপুরের পর রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা হতে থাকে। পরের চার তিন দিন ধরে চলে সংঘর্ষ, সরকারি হিসেবে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫০ জনে, কারফিউ জারি করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয়। পরে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে কখনো ৮ দফা, কখনো ৯ দফা দাবি জানানো হয়। হত্যার তদন্ত, বিচার দাবি, গ্রেপ্তার অভিযান বন্ধ, শিক্ষার্থীদের মুক্তি-ইত্যাদি দাবি জানানো হতে থাকে।

আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এখন অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। সরকার পতনের দাবিও সামনে এনেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলোচনার জন্য ডাকলেও শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, আজ শত শত জীবনহানি ঘটল। অজস্র মানুষ হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। চিকিৎসা করতে গিয়ে কারো পা কেটে ফেলতে হয়েছে, কারো হাত কেটে ফেলতে হয়েছে। এই বিচার কার কাছে দেব? এটা তো এমন হওয়ার কথা ছিল না। ওবায়দুল কাদেরের সেই বক্তব্যের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, তার আর দায়িত্বে থাকার কোনো অধিকার নেই। ২৪ ঘণ্টার ভেতরে তাকে পদত্যাগ করতে হবে। দলের পদ থেকে, মন্ত্রীর পদ থেকে সব জায়গা থেকে সরিয়ে দিতে হবে। তাকে বিচারের কাঠগড়ায় আসতে হবে। শিক্ষার্থীদের ‘হাই কোর্ট’ না দেখাতে সরকারকে বারবার সতর্ক করা হয়েছে জানিয়ে জাতীয় পার্টির নেতা বলেন, “৫২ ভাষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানসহ সকল আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা নেতৃত্ব দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা যখন রাস্তায় নামে, তখন খালি হাতে ফেরে না। সমস্ত দাবি-দাওয়া পূরণ হওয়ার পর তারা ফেরে। তাই সরকারকে বলেছিলাম গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করে সমাধান করুন। কিন্তু কে শুনে কার কথা? ২০১৮ সালে কোটা বাতিল করে সরকারের নির্বাহী আদেশ হাই কোর্টে বাতিলের বিষয়ে ফিরোজ রশীদ বলেন, “হাই কোর্ট বলেন আর যাই বলেন, সবকিছু প্রধানমন্ত্রীর ইশারায় ঘটে। হাই কোর্ট, বিচার বিভাগ ছাত্রদের উসকে দিল, শিক্ষার্থীরা আর ঘরে ফিরল না।” হাই কোর্টের দেয়ালে ‘রক্তের দাগ’ দেখতে পান জানিয়ে তিনি বলেন, “হাএকার্টের দেয়ালে রক্তের দাগ থাকবে কেন? এখানে তো মানুষের আশ্রয় পাওয়ার কথা। আজ যাকে তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। জাতীয় পার্টির অনেক নেতাকর্মীকেও পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। দেশের এই হত্যাযজ্ঞের জন্য যারা দায়ী তাদের বিচার করতে হবে। হাই কোর্টের দুইজন সিনিয়র বিচারপতি দিয়ে কমিটি গঠন করতে হবে। তদন্ত করতে হবে সব হত্যাকাণ্ডের। জাতীয় পার্টির নেতা বলেন, হারুন-অর-রশীদ ও বিপ্লব কুমার সরকারের মত যেসব ‘অতি উৎসাহী’ পুলিশ অফিসার ছাত্রদের আন্দোলন দমনে নৃশংসতা চালিয়েছে, তাদের এখনই বরখাস্ত করতে হবে। দেশের নির্বাহী বিভাগের এখতিয়ারভুক্ত কোটা প্রশ্নে হাইকোর্টের যেসব বিচারপতি ‘বিতর্কিত’ রায় প্রদান করে ছাত্র আন্দোলনকে উসকে দিয়েছেন, তারাও কোনোভাবে দায় এড়াতে পারেন না। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের দাবি জানাচ্ছি। জাতীয় পার্টির এই অংশের মহাসচিব কাজী মামুনুর রশীদ, কো-চেয়ারম্যান সাহিদুর রহমান টেপা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, গোলাম সারোয়ার মিলন, সুনীল শুভ রায়, রুস্তম আলী ফরাজীও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত রাখেন।