প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বেশ কিছু ভাস্কর্য গুঁড়িয়ে দেয়ার পর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে হামলা চালিয়ে লুটপাট ও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগুনে পুড়ে গেছে জাতির পিতার বসবাসের এই তিনতলা বাড়ির প্রতিটি কক্ষ। জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে ভবনের সামনের দিকে শ্রদ্ধা নিবেদনের অংশে রাখা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিও। গতকাল সোমবার বিকাল ৪টার দিকে এই বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এর পর থেকে বাড়িটিতে আগুন জ্বলতে থাকে। আন্দোলনকারীরা ঐতিহাসিক এই বাড়িতে যখন আগুন ধরিয়ে দিচ্ছিল, তখন তারা বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিল।
ঘটনাস্থল থেকে সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের নিজস্ব প্রতিবেদক পাভেল রহমান জানিয়েছেন, শুক্রাবাদের দিক দিয়ে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে গিয়ে চারদিকে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখেন তিনি। তিনি বলেন, ‘যেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় সেই প্রতিকৃতি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। বই বিক্রয়কেন্দ্র ও বাড়ির সবগুলো রুমও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট আর কিছু নাই, দেওয়াল; জানলা সব পুড়ে যাচ্ছে।” ১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর থেকে শেখ মুজিব এই বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। এই বাড়িতে থেকেই পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ৬২ সালের আইয়ুববিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ৬৬ সালের দফা, ১৯৭০ সালের নির্বাচন, একাত্তরের শুরুতে অসহযোগ আন্দোলন, নানা চড়াই-উতরাইয়ের সাক্ষী এই বাড়ি। এই বাড়ি থেকেই একাত্তরের ২৫ মার্চের রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী গ্রেপ্তার করেছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে এই বাড়িতেই সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে তাকে হত্যা করা হয়। ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরলে বাড়িটি তার কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে এই বাড়িটিকে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর হিসেবে রক্ষণাবেক্ষণ করছিল আওয়ামী লীগ সরকার। প্রবল গণআন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতের উদ্দেশে যাওয়ার খবরের কয়েক ঘণ্টা পর গণভবন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ঢুকে পড়ে হাজারো মানুষ। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবনে সামনে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ বেদীও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন কক্ষ ভাঙচুরের পাশাপাশি বিভিন্ন জিনিসপত্রও নিয়ে যেতে দেখা গেছে মানুষকে। আগুন দেওয়া হয়েছে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয় ও জেলা কার্যালয়েও। গণভবনের অদূতে বিজয় সরণিতে বঙ্গবন্ধুর থাকা বিশাল ভাস্কর্য ভেঙে ফেলে কিছু মানুষ। এ সময় তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতিকে নিয়ে অবমাননাকর নানা স্লোগান দিচ্ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এস এম হলের পাশে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্বোপার্জিত স্বাধীনতাও ভেঙে ফেলা হয়েছে। জাতীয় প্রেসক্লাবে থাকা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যও ভেঙে ফেলা হয়েছে।
রাতে ধানমন্ডিতে শেখ হাসিনার স্বামী প্রয়াত ওয়াজেদ মিয়ার বাড়ি সুধা সদনে হামলা করেও লুটপাট করা হয়।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ৩৬ দিন আগে শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তা সরকারপতনের আন্দোলনে রূপান্তরিত হওয়ার পর দেশজুড়ে সংঘাত আর তিন শতাধিক মানুষের মৃত্যুর মধ্যে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা ছাড়তে হল। এরপর নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে দুপুরে ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে দেশ ছাড়েন তিনি।