সহিংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের
প্রকাশ : ০৭ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
সাম্প্রদায়িক হামলাসহ সব ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় শাহবাগ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা চত্বরে একটি প্রতিবাদী মিছিল করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। মিছিল শেষে এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানায়।
বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক জানায়, একটি চরম নিপীড়নমূলক ও ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের দাবি নিয়ে জুলাই মাসের প্রথম থেকে বাংলাদেশের আপামর শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে। বৈষম্যের পরিবর্তে সাম্যের দাবি তোলায় তাদের শিকার হতে হয় নির্মম জুলাই হত্যাকাণ্ডের। সরকারি হিসাবে ৩০০ জনের বেশি এবং বেসরকারি হিসেবে এক হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী, শিশু থেকে বৃদ্ধ, পুরুষ ও নারী এবং সব শ্রেণি-পেশার নাগরিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনগুলোর গুণ্ডাদের হাতে নৃশংস ও নারকীয় হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। ক্রমবর্ধমান নিপীড়ন-নির্যাতন-খুনের মুখে আর স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা ও অনুসারীদের হিংস্র গোয়ার্তুমি, প্রতিশোধপরায়ণতা এবং অব্যাহত হামলার প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থী আন্দোলন একটি গণঅভ্যুত্থানে রূপান্তরিত হয়। পরিণামে শিক্ষার্থী-নাগরিকদের অবিস্মরণীয় বিদ্রোহের মুখে গতকাল জুলাই-হত্যাকাণ্ডের মূল নির্দেশদাতা, ফ্যাসিস্ট এবং স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন। দীর্ঘ ও ভয়াবহ নিপীড়নমূলক স্বৈরশাসন থেকে এই মুক্তি অর্জনের জন্য তাই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক (ইউটিএন) বাংলাদেশের শিক্ষার্থীবৃন্দসহ আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সব মুক্তিকামী জনতাকে উষ্ণ অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। এতে আরো বলা হয়, তবে আমরা মনে করি, নিপীড়নমূলক ফ্যাসিস্ট শাসন থেকে এই মুক্তি অর্জন রাষ্ট্রকে মেরামত করে একটি গণতান্ত্রিক, বহুত্ববাদী, অসাম্প্রদায়িক, সাম্য ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতকারী রাষ্ট্রে রূপান্তরের কঠিন পথ আমাদের সামনে। মুক্তি এখনো অর্জিত হয়নি। ১৯ জুলাইয়ের হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার সন্ধ্যা থেকে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার শর্তে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীকে মাঠে মোতায়েন করে। তারপরও পরিস্থিতির ক্রমাবনতি হতে থাকে এবং গত রবিবার (৪ আগস্ট) সারা দেশে সর্বোচ্চ সংখ্যক (অফিসিয়াল হিসাবে ১০২ জনের বেশি) মানুষ নিহত হয়। অনির্দিষ্টকালের কারফিউ জারি এবং তিন দিনের জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। যদিও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সরকারের এই ঘোষণা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে (৫ আগস্ট) ‘ঢাকা মার্চ’ এর ডাক দেয়। লাখ লাখ শিক্ষার্থী ও নাগরিকের সমাবেশ ও বিদ্রোহের মুখে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগপত্র জমা দেন এবং বিদেশে পালিয়ে যান। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের বিবৃতিতে বলা হয়, এই সংকটময় মুহূর্তে আমরা বিস্মিত হয়ে ঢাকা শহরসহ সারা দেশে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুপস্থিতি আর চেইন অব কমান্ডের পুরোপুরি অনুপস্থিতি লক্ষ্য করি। এই সুযোগে দুষ্কৃতকারীরা ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, লুটতরাজ চালানো শুরু করে। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর, লুটপাট, থানা জ্বালিয়ে দেয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা চত্বরের এবং বিখ্যাত ঐতিহ্য ময়মনসিংহের শশীলজসহ নির্বিচার ভাঙচুর, ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর হামলা, তাদের সম্পত্তি লুটপাট ও পোড়ানো শুরু হয়।