সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় পুলিশের উপর নির্মম হামলার ঘটনার দিন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেও সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। অবশেষে তারা হামলাকারীদের কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়েও রক্ষা পাননি। তাদের অমানবিক নির্যাতন ও পিটিয়ে ওসিসহ ১৩ পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয়। রক্তমাখা সেই এনায়েতপুর থানা এখনো অরক্ষিত রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত রোববার ওই থানায় সংঘটিত রোমহর্ষক এ ঘটনার তথ্য স্থানীয়রা জানান। ওইদিন দুপুরে থানা এলাকায় হামলা ও গুলির শব্দে ছয়জন পুলিশ সদস্য থানার পেছন দিয়ে দৌড়ে এক বৃদ্ধের বাড়িতে আশ্রয় নেয় এবং তারা প্রাণ রক্ষার্থে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেও সহযোগিতা পাওয়া সম্ভব হয়নি। এ সময় তারা দৌড়ে ওই বৃদ্ধের বাড়ির পেছনে পাকা বাথরুমের মধ্যে ঢুকে পড়ে এবং হামলাকারীরা তাদের খুঁজে বের করে পিটিয়ে হত্যা করে। এর আগেই ওই থানার ওসিসহ সাতজনকে থানা চত্বরে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তবে হামলাকারীরা সম্ভবত স্থানীয় নয় ও তারা অপরিচিত। এর আগে ওইদিন সকালে আন্দোলনকারীরা এনায়েতপুর কেজির মোড় এলাকায় একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এ মিছিলটি থানার দিকে আসে এবং থানার সামনে এসে তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশ সদস্যরা অনুরোধ করার পরেও দুপুরের দিকে আবারো তারা মিছিল নিয়ে এসে থানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং থানায় হামলা চালাতে শুরু করে। সে সময়ও পুলিশ অনুরোধ ও আকুতি মিনতি করে। একপর্যায়ে পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করলে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। আবারো দুপুরে একটি মিছিল এসে ইটপাটকেল নিক্ষেপ হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে থানার ভেতরে প্রবেশ করে। এ সময়ও টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেও প্রাণে রক্ষা পাওয়া যায়নি। এমনকি পুলিশ সদস্যরা তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে চাইলেও তারা থানা এলাকা ঘিরে এ হত্যাকাণ্ড চালায়। এ সময় থানার ৮-৯ পুলিশ সদস্য বিশেষ কৌশলে ভবনের ছাদের ওপরে পানির ট্যাংকের নিচে লুকিয়ে পড়ে। হামলাকারীরা থানার মূল ফটকে গ্নিসংযোগ করায় আর ওপরে ওঠেনি। দিনভর ট্যাংকের নিচে অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকি। এ সময় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেও সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। তবে ওইদিন সন্ধ্যায় সেনা সদস্যরা থানা এলাকায় আসে এবং তাদের সহযোগিতায় তারা পুলিশ ইন্সপেক্টর শাহিনসহ আমাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসাধীন পুলিশ ইন্সপেক্টর শাহিন সাংবাদিকদের বলেন, ওইদিনের নির্মম ঘটনা বর্ণনা করা সম্ভব নয়। তাদের অমানবিক নির্যাতনে জ্ঞান হারিয়ে পড়েছিলাম। তার আগে হামলাকারীরা থানা কার্যালয়ে ঢুকে পড়ে মারধর শুরু করে এবং তারা আবাসিক ভবন, গাড়ি, মোটরসাইকেলসহ আসবাবপত্রে আগুন ধরিয়ে দেয়। তাদের হামলার কিছুক্ষণ আগেই আমাদের স্ত্রী ও শিশু সন্তানরা থানার পেছনের কয়েকটি বাড়িতে আশ্রয় নেয়। যে কারণে আমাদের স্ত্রী সন্তানরা প্রাণে বেঁচে গেছে এবং ওসিসহ ১৩ পুলিশ সদস্যকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে তারা অনায়াসে থানা ত্যাগ করে চলে যায়। অবশ্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলছেন, ভয়াবহ পরিস্থিতির কারণে ওইদিন তাদের সহযোগিতা করা সম্ভব হয়নি। এদিকে থানা চত্বরে এখনো নির্যাতনের রক্তের দাগ কাটেনি এবং নিহতদের বাড়িতে এখনো আহাজারি চলছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানানো হয়েছে।