ঢাকা ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

স্বাভাবিক হচ্ছে সিলেটের জনজীবন

* দোকানপাট খুলেছে * রাজনৈতিক নেতাদের সাথে প্রশাসনের বৈঠক * বিভিন্ন থানায় নেই পুলিশ
স্বাভাবিক হচ্ছে সিলেটের জনজীবন

স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে সিলেটের জনজীবন। উদ্ভূত পরিস্থিতে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক করেছে স্থানীয় প্রশাসন। গতকাল বুধবার থেকে নগরীর দোকানপাটও খুলেছে। তবে, বিভাগের বিভিন্ন থানায়ই নেই পুলিশ। নগরীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী এবং আনসার সদস্যদের ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

এসএমপির পাঁচ থানার কার্যক্রম শুরু : আতঙ্ক কাটিয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) আওতাধীন পাঁচটি থানার কার্যক্রম গতকাল বুধবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে। এসএমপি কমিশনার মো. জাকির হোসেন এ তথ্য জানিয়ে বলেন, কেবলমাত্র কোতোয়ালি মডেল থানার কার্যক্রমও এদিন বিকাল থেকে শুরু হবে বলে তিনি আশাবাদী। কমিশনার বলেন, পুলিশ ফোর্সের মধ্যে কিছু উত্তেজনা থাকলেও আমরা লাইনে এনে তাদের কাজে যোগদান করানোর চেষ্টা চালাচ্ছি। তিনি বলেন, রাষ্ট্র আমাদের, সরকার আমাদের এবং সম্পত্তিও আমাদের। কাজেই দেশের সম্পদ রক্ষায় আমাদের সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে।

কার্যক্রম শুরু হওয়া থানাগুলো হচ্ছে- দক্ষিণ সুরমা, শাহপরাণ, জালালাবাদ, বিমানবন্দর ও মোগলাবাজার। আগুনে থানার সামনে থাকা যানবাহনসহ অন্যান্য জিনিসপত্র পুড়িয়ে দেয়ায় কোতোয়ালি মডেল থানার কার্যক্রম শুরু করতে একটু বিলম্ব হচ্ছে।

এসএমপির সূত্রমতে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে ঘিরে এসএমপির আওতাধীন বিভিন্ন থানা ও ফাঁড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

রেঞ্জের আওতাধীন ৩৯ থানাই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত : সিলেট রেঞ্জের আওতায় থানা রয়েছে ৩৯টি। সবক’টি থানাই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিআইজি অফিসের একটি সূত্র। সূত্রের দাবি, এই রেঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ বানিয়াচং থানার এএসআই সন্তোষ সাহা বিক্ষোভকারীদের হাতে নিহত হয়েছেন। ডিআইজি অফিসের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি তারা সরকারি নির্দেশনারও অপেক্ষায় রয়েছেন।

পুলিশ নেই অধিকাংশ থানায় : সিলেটের বেশিরভাগ থানায় পুলিশ নেই বলে প্রশাসনের একটি সূত্র জানিয়েছে। সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ সুপার ও থানায় হামলার প্রেক্ষাপটে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে, সিলেটের কয়েকটি থানায় গিয়ে বিএনপিসহ অন্যান্য দলের নেতৃবৃন্দ পুলিশ কর্মকর্তাদের অভয় দেয়ার বিষয়টি সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত হচ্ছে।

রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে বিভাগীয় প্রশাসনের বৈঠক : উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সিলেটের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে গত মঙ্গলবার রাতে সিলেট সার্কিট হাউজে বৈঠকে বসেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমদ ছিদ্দিকী এনডিসি। এতে বিএনপি, জামায়াত, খেলাফত মজলিসসহ বিভিন্ন দলের নেতারা অংশ নেন। বৈঠকে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয় বলে বৈঠকে অংশগ্রহণকারী সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী এ প্রতিবেদককে জানান। স্থানীয় প্রশাসনকে নির্বিঘ্নে দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনার পরামর্শ দিয়েছেন, যোগ করেন কাইয়ুম চৌধুরী। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দলের পক্ষ সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেয়া হয়েছে। সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) আবু আহমদ ছিদ্দিকী এনডিসি বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হচ্ছে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথেও তারা এ নিয়ে মতবিনিময় করেছেন। অফিস-আদালতও খোলা রয়েছে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসানও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে জানিয়ে বলেন, তারা বিভিন্ন উপজেলায় ক্ষয়ক্ষতি-লুটপাটের খবর নিচ্ছেন। বিভিন্ন স্থানে থানা ভাঙচুর হয়েছে।

এমনকি অনেক থানায় পুলিশ নেই। নির্দেশনা পেলে তারা ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করবেন বলে জানান তিনি।

দোকানপাট খুলেছে : কয়েকদিনের অচলাবস্থা কাটিয়ে গতকাল বুধবার সকাল থেকে নগরীর দোকানপাট খুলেছে। গত দুই দিন ধরে নগরীর বিভিন্ন স্তরের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও দোকানপাটের সামনে মাইকিং করে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি সিলেট জেলার পক্ষ থেকে দোকানপাট খোলার আহ্বান জানানো হয়।

সিলেট মহানগর দোকান মালিক সমিতির সেক্রেটারি আব্দুর রহমান রিপন জানান, বুধবার নগরীর দোকানপাট খুলেছে। সংগঠনের নেতাদের নিয়ে তারা বিভিন্ন মার্কেট পরিদর্শন করেছেন এবং ব্যবসায়ীদের অভয় দিয়েছেন।

সিলেট নগরী ও আশপাশ এলাকায় আন্দোলনের বিজয় উল্লাসকে পুঁজি করে নির্বিচারে দোকানপাট ভাঙচুর, লুটপাট ও বাসা-বাড়িতে ভয়াবহ তাণ্ডবের নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে ব্যবসায়ীরা চরম অনিশ্চয়তা ও রুজি রোজগার থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। দোকানপাট খুলতে না পারায় ছোট-বড় ব্যবসায়ীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ অবস্থায় দোকানপাট খোলার সিদ্ধান্ত হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত