সুসংবাদ প্রতিদিন
মোরেলগঞ্জে কলার বাম্পার ফলন
কৃষকের মুখে হাসি
প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, মোরেলগঞ্জ
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে কলার বাম্পার ফলন হয়েছে। জমিতে বসেই কলার দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকের মুখে ফুটেছে সোনালী হাসি। কলা চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। অল্প খরচে লাভ বেশি হওয়ায় খুশি চাষিরা। অনেক কৃষকের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পেছনে রয়েছে কলা চাষ। শুধু জৈবসার ব্যবহার করে কলা চাষ করা যায়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ১ হাজার ২৯শ’ হেক্টর জমিতে কলার চাষ করা হয়েছে। এখানে অনুপম, সাগর, সবরি, চিনিচাম্পা, উন্নত জাতের কাঁচকলা, আনাজিসহ বিভিন্ন প্রজাতির কলা চাষ হচ্ছে। গত মৌসুমে মোড়েলগঞ্জ উপজেলায় কলা চাষ হয়েছিল ১ হাজার ২৯শ’ হেক্টর জমিতে। উপজেলার চারটি ইউনিয়ন চিংড়াখালী, রামচন্দ্রপুর, বনগ্রাম ও হোগলাপাশায় কলা সুস্বাধু হওয়ায় মোড়েলগঞ্জের কলা এখন ব্র্যান্ডে রূপ নিয়েছে। সে কারণে চলতি মৌসুমে কলা আবাদে জমির পরিমাণ আরো ৭ শত ৫০ হেক্টর বেড়েছে। আগামী মৌসুমে এ চাষ আরো বৃদ্ধি পাবে। কৃষি বিভাগ বলছে, অনুকূল আবহাওয়ায় গাছে ব্যাপক কলা ধরেছে। কলার ভালো ফলন পেতে কলা চাষিরা দিনরাত পরিচর্যা করে যাচ্ছে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে প্রচুর কলা রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হবে বলে আশা করছেন চাষির সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার বিস্তীর্ণ জমিতে এবার কলার বাম্পার ফলন হয়েছে। বর্তমানে প্রচলিত ফসল চাষে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান না হওয়ায় তারা এই সব ফসলের বিকল্প হিসেবে বেছে নিয়েছেন অধিক লাভজনক ফসল কলা চাষ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবার বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে জমিতে বিভিন্ন জাতের কলার চাষ হয়েছে। বিভিন্ন জাতের কলার মধ্যে রয়েছে কুলপাত, সাগর ও সবরি কলা। তরে সিংহভাগ জমিতে চাষ করা হয়েছে সর্বি কলা। ধান, পাট ও আখসহ প্রচলিত অন্যান্য ফসলের তুলনাই কলাচাষে শ্রম ব্যয় হয় কম, বিক্রি করতেও ঝামেলা নেই বাগান থেকেই বিক্রি হয়। অন্যদিকে কলার বাজারে সহজে ধস নামে না। চরাঞ্চলের এসব জমিতে অন্যকোনো ফসল ভালো না হওয়ায় পুষ্টিকর ফল কলার চাষ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কলাচাষের পাশাপশি এখানকার কৃষকরা সাথী ফসল হিসেবে ওল এবং পটোল চাষ করে বাড়তি আয় করছে। একই সময়ে একাধিক ফসল চাষের ফলে কৃষকরা বেশি লাভবান হচ্ছেন। ফলে এখানকার কৃষকরা জমির জন্য তিকর তামাক ও ভুট্টা চাষের প্রতি দিন দিন আগ্রহ হারাচ্ছে।
সফল কলাচাষি আব্দুল আজিজ বলেন, অন্যান্য ফসলের চেয়ে কলা চাষে লাভ বেশি এবং খরচ কম। জৈবসার ব্যবহার করার কারণে এখানে ফলন ভালো হয়। এ বছর ১০ বিঘা জমিতে সাগর কলা, অমৃত সাগর, মেহর সাগরসহ বিভিন জাতের চারা রোপণ করেছিলাম। প্রতি বিঘা জমিতে ৩০০-৪০০ চারা রোপণ করা যায়। বছর খানেকের মধ্যেই রোপণকৃত গাছ থেকে কলা পাওয়া যায়। আমার কলাচাষে সফলতা দেখে এলাকার কৃষকরা কলা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। স্বল্প বিনিয়োগে ও কম পরিশ্রমে কলা চাষে অধিক মুনাফা হওয়ায় তিনি এ ফসলকেই বেছে নিয়েছেন। তার কলা চাষের এ সাফল্য দেখে এলাকার অন্যান্য কৃষকরা এখন কলা চাষের দিকে ঝুঁকছেন। কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, কলাচাষের জন্য স্বল্পপুঁজি বিনিয়োগ করে অধিক লাভ হয় এবং একবার কলা গাছ লাগালে সেই খরচেই দুই বছর ফল পাওয়া যায়। এক বিঘা জমিতে আড়াইশ’ থেকে তিন শত কলার গাছ লাগাতে ব্যয় হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। যা থেকে বছর শেষে আয় হবে প্রায় লাখ টাকা। কলার চাষ করলে কলা বিক্রির পাশাপাশি কলা গাছের চারাও বিক্রি করা যায়। কৃষক হেমায়েত হোসেন বলেন, কলা বিক্রি করতে তাদের কোনো সমস্যা হয় না। কারণ হিসাবে তিনি জানান, পাইকারি ব্যবসায়ীরা কলার বাগান থেকেই ন্যায্য মূল্যে কলা ক্রয় করে নিয়ে যায়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে তাদের কলা চাষের উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে আরো অধিক বই লাভজনক। এই মাটিতে বাংলা কলা, চাম্পা কলাসহ সাগড় কলা বেশি চাষ হয়। আরো জানান, আমার গ্রামের ৫০-এরও বেশি রয়েছে একেক পরিবারে ১ থেকে ৩ একর জমিতে কলা চাষ রয়েছে। তবে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলায় কলাসহ উৎপাদিত ফল-ক্রিয়াজাতকরণ ও রক্ষণাবেক্ষণের হিমাগারের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে তুলনামূলক কম দামে কলা বিক্রি করতে বাধ্য হয়। কলা চাষ করে আনেকে ভাগ্য বদলেছে।
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে জমিতে কলা বাগানের পাশাপাশি মিশ্র ফলের গাছ রয়েছে প্রতিটি বাগানে। কলা ব্যবসায়ী বলেন, কলা ফরমালন ও রাসায়নিক মুক্ত হওয়ায় দেশের বিভিন্ন হাটে এর জনপ্রিয়তা ও চাহিদে বাড়ছে। ছড়াপ্রতি ১ থেকে ৩৫ টাকা লাভ হয়। তবে গাড়িতে করে কলা নেওয়ার পথে অনেক কলার ছড়া নষ্ট হয়ে যায়, এজন্য অনেক সময় বড় অঙ্কের ক্ষতিও গুনতে হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ অঞ্চলের মাটি ও আবাহাওয়া কলা চাষের উপযোগী। অনেক জাতের হলেও বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে মূলত কাঁঠালিকলা, শোবড়ি কলাও চাপা কলার উৎপাদন বেশি। দুটি জাতের মধ্যে কাঁঠালিকলা পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। এছাড়া এ জাতের কলাটি বেশি দিন টেকসই থাকে। দ্রুত নষ্ট হয় না। মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: সাইফুল ইসলাম জানান আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার কলার বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে কলার দাম বেশি থাকায় এবার কলাচাষিরা লাভের মুখ বেশি দেখছেন। কলা অত্যন্ত পুষ্টিকর হওয়ায় এর ফলন বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ফলে কলার চাষ বাড়াতে প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। কলা চাষিদের সকল পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন কৃষি বিভাগ। কৃষি বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে কৃষকদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করে যাচ্ছে।