ভয় কাটছে না সাধারণ পুলিশের
অফিসে ফিরতে অনীহা পুলিশ সদস্যদের
* পুলিশ সদস্যরা কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করছেন : পুলিশ সদর দপ্তর * ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শুরু হতে পারে পুলিশের কার্যক্রম
প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আরিফুল ইসলাম
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগের পর রাজধানীসহ সারা দেশের সব থানা পুলিশশূন্য হয়ে পড়ে। একে একে পুলিশের সব ইউনিটের কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে যায়। নিরাপত্তাহীনতায় কর্মবিরতি ঘোষণা করে পুলিশ কর্মকর্তাদের একটি সংগঠন। তবে এসবের মধ্যেই সদ্য দায়িত্ব নেওয়া পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম পুলিশের সব ইউনিটের সদস্যকে কাজে যোগদানের নির্দেশ দেন। কিন্তু তাদের মধ্যে ভয় না কাটায় অনেক পুলিশ সদস্যরা অফিসে ফিরতে অনীহা প্রকাশ করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের হেড কোয়ার্টার, ডিবি কার্যালয় ও আশপাশের থানাগুলো ঘুরে দেখা গেছে, সবগুলো কার্যালয় এখনো বলতে গেলে পুলিশশূন্য। দুপুর ১টার দিকে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশের গোয়েন্দা ইউনিটের প্রধান এই কার্যালয়ের মূল ফটকে সেনাবাহিনী ও স্পেশাল সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রোটেকশন ব্যাটালিয়ন (এসপিবিএন) নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে। কার্যালয়ে ডিবি সংশ্লিষ্ট অফিসার, কর্মকর্তা ও কর্মচারী ছাড়া আর কাউকেই প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে যারা সেখানে ঢুকছেন, সবাইকে পরিচয় নিশ্চিত করে প্রবেশ করতে হচ্ছে।
মিন্টু রোডের ডিবি কার্যালয়ের সামনের সড়কে, যেখানে ডিবির সারি সারি গাড়ি পার্ক করে রাখা হতো, গতকাল বৃহস্পতিবার সেখানে একটি গাড়িও দেখা যায়নি। মিন্টু রোডে দুইপাশে শুধুই নিরবতা। সেখানে দায়িত্বে থাকা ডিবির এক কর্মকর্তা জানান, কার্যালয়ে আপাতত ডিবির অফিসার ছাড়া আর কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। সবাইকে পরিচয় নিশ্চিত করে প্রবেশ করতে হচ্ছে। নিরাপত্তার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
একই দৃশ্য দেখা গেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দপ্তরেও। প্রবেশ পথে তেমন কোনো মানুষ নেই। সেখানে সেনাবাহিনী বা এসপিবিএন সদস্যদের কাউকেও দেখা যায়নি। সিভিল পোশাকে পুলিশের সদস্যরাই গেটে নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন। যারা ভেতরে প্রবেশ করছেন, তাদের ইউনিফর্ম ছাড়া সাধারণ পোশাকে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। তাদেরও গেটে পরিচয় নিশ্চিত করে ভেতরে যেতে হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই পুলিশ সদস্য জানান, তাদের এখনো ভয় কাটছে না। সদর দপ্তরে আসার পথে কেউ ধরে কি না, সে ভয় তাড়া করেছে। এ জন্য সিভিল পোশাকে অফিসে আসতে হলো। নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে এখনো ভাবতে হচ্ছে পুলিশ সদস্যদের। দপ্তরের প্রধান ফটকে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ সদস্য জানান, কিছু কিছু কর্মকর্তা বর্তমানে অফিসে অবস্থান করছেন। বেশিরভাগই এখনো আসেননি। এদিকে রাজধানীর থানাগুলোও অনেকটা জনশূন্য। বেলা দেড়টার দিকে ডিএমপির রমনা মডেল থানায় গিয়ে দেখা যায়, থানার প্রধান ফটক আটকানো। ভেতরে দু-একজনকে সাধারণ পোশাকে দেখা গেলেও গেট দিয়ে কাউকে প্রবেশ করতে দেখা যায়নি। পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে, বিকালের মধ্যে অনেকে অফিসে প্রবেশ করতে পারেন। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক খুদে বার্তায় কর্মস্থলে যোগ দিতে পুলিশ সদস্যদের সহযোগিতা করার আহ্বান জানানো হয়। কর্মস্থলের উদ্দেশে রওনা হওয়া পুলিশ সদস্যদের পথে সহযোগিতা করতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, রাজনৈতিক দলের নেতা, ছাত্রছাত্রী ও আপামর জনসাধারণের কাছে এ আহ্বান জানানো হয়েছে। সরকার পতনের পর ৫ আগস্ট বিকাল থেকে দেশের অনেক থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটতে থাকে। পুড়িয়ে দেওয়া হয় থানা-পুলিশের কাজে ব্যবহৃত গাড়ি। অনেক জায়গায় অস্ত্রসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম ও নথি লুট হয়। এ হামলা চলে গভীর রাত পর্যন্ত। এ হামলা থেকে রক্ষা পায়নি পুলিশ হেড কোয়ার্টারও।
এরপর রাজধানীসহ সারা দেশে পুলিশি ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়ে।
অরাজকতা, অগ্নিসংযোগ ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড বন্ধের মাধ্যমে দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শক্ত অবস্থান গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানরা। গতকাল বৃহস্পতিবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়। আইএসপিআর জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার সেনাসদরে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে নৌ ও বিমান বাহিনী প্রধানের উপস্থিতিতে নবনিযুক্ত পুলিশের আইজিপি, র্যাবের মহাপরিচালক এবং ডিএমপি কমিশনার সাক্ষাৎ করেন। এ সময় আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেনাবাহিনীর সহায়তায় দেশের সব থানার কার্যক্রম শুরু করার বিষয়ে আলোচনা হয়। এ ব্যাপারে সকলের সহযোগিতা কাম্য। জানা যায়, বাংলাদেশ পুলিশের নবনিযুক্ত মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম পুলিশ সদস্যদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগদানের আহ্বান জানিয়েছিলেন। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে পুলিশ সদস্যরা কর্মস্থলে ফিরছেন।
তিনি বলেন, যেসব পুলিশ সদস্য কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন, তাদের আসার পথে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষার্থী এবং আপামর জনসাধারণ যাতে পুলিশ সদস্যরা নিরাপদে কর্মস্থলে আসতে পারেন, সেজন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা করছেন। বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, পুলিশ সদস্যরা কর্মস্থলে আসার পথে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন মর্মে যে সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে, সেগুলোর সত্যতা পাওয়া যায়নি। সুতরাং, গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ করা হলো।