চট্টগ্রামে চুরি ডাকাতির আতঙ্কে নগরবাসী

প্রকাশ : ১০ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  চট্টগ্রাম ব্যুরো

রাত হলেই চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাত আতঙ্কে কাটছে নগরবাসীর নির্ঘুম রাত। থানা ও ফাঁড়িতে পুলিশ না থাকার সুযোগে পেশাদার অপরাধীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। চুরি-ডাকাতি ঠেকাতে গত চারদিন ধরে অনেকে রাত জেগে বাড়িঘর-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয় পাহারা দিচ্ছেন। হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও অস্ত্র লুটের পর চট্টগ্রামের ১৬ থানা ভবন ও ফাঁড়ি এখন কার্যত পুলিশ শূন্য। যদিওবা গত বুধবার পুলিশদের স্ব স্ব কাজে ফেরার নির্দেশ দেয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এখনো পুরোপুরি থানা কার্যক্রম সচল হয়নি। এ সুযোগে নগরের আগ্রাবাদ, হালিশহর, খুলশী, ষোলশহর, চকবাজার, টেরিবাজার, নন্দনকানন, পাথরঘাটাসহ বিভিন্ন স্থানে চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই ও লুটপাটের অভিযোগ আসছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। গত সোমবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর ও একটি গাড়ি থেকে ছিনতাই করা হয় ল্যাপটপ। গত মঙ্গলবার রাতে নগরের হালিশহর ও খুলশি এলাকায় কয়েকটি সুপারশপ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চুরি এবং লুটপাটের খবর পাওয়া যায়। উত্তর পাহাড়তলীর লেকসিটি আবাসিক সংলগ্ন এলাকায় ডেইরি ফার্ম থেকে লুট করা হয় গরু। গত বুধবার ভোর ৬টার দিকে প্রবর্তক মোড় মিনা বাজারের পাশের একটি বাড়ি দখলের চেষ্টা করা হয়, গত বৃহস্পতিবার ছুরি দেখিয়ে ছিনতাই হয় সিএনজি অটোরিকশা। এদিন রাতে আন্দরকিল্লা রাজাপুকুর লেইন, চেরাগী পাহাড় শরীফ কলোনি, হেমসেন লেইন, দেওয়ানজি পুকুরপাড় এলাকায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের ছুটাছুটি করতে দেখে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাতে নগরের কাজির দেউড়ি ও নন্দনকানন এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ৫ ডাকাতকে আটক করে গণপিটুনি দিয়ে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করেন স্থানীয়রা। জামালখান এলাকার বাসিন্দা সোবহান সিকদার জানান, রাত আড়াইটার দিকে ডাকাতদলের কয়েকজন সদস্য এলাকায় জড়ো হওয়ার বিষয়টি টের পেয়ে স্থানীয়রা সেনাবাহিনীর টহল টিমকে খবর দেয়। এ সময় একজনকে আটক করে সেনা সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। কাজির দেউড়ি এলাকার বাসিন্দা জিল্লুর রহমান জানান, রাত ২টার দিকে ডাকাত দলের কয়েকজন সদস্য এলাকায় ডাকাতি করতে এলে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়। এলাকাবাসী তাদের ধাওয়া দেয়। এসময় ৪ জনকে আটক করে সেনাবাহিনীর টহল টিমের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এদিকে সড়কে সন্ধ্যার পর বেড়েছে ছিনতাই। থানায় পুলিশ না থাকায় ভুক্তভোগীরা অভিযোগও দিতে পারছেন না। আতঙ্কে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ কেউ নিজ নিজ এলাকার ভিডিও ও ছবি পোস্ট করছেন। শুধু নগর নয়, উপজেলাগুলোতেও দুর্বৃত্তরা লুটপাট, চুরি-ডাকাতি ও হামলা চালিয়ে জায়গা দখল করছে।

বোয়ালখালী, রাউজান, পটিয়া, সাতকানিয়া-লোহাগাড়া, সীতাকুণ্ড, চন্দনাইশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুপস্থিতির সুযোগে দুর্বৃত্তরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কিছু এলাকায় মসজিদের মাইক থেকে দেওয়া হচ্ছে সতর্ক থাকার ঘোষণা। এলাকাবাসী লাঠিসোঁটা নিয়ে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন। তবে কোনো বিপদ হলে নিকটস্থ সেনা ক্যাম্পে যোগাযোগের অনুরোধ জানিয়েছে সেনাবাহিনী। এরইমধ্যে সেনাবাহিনীর সহায়তায় থানার কার্যক্রম শুরু করার কার্যক্রম চলছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে জনসাধারণের জানমাল ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহের সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন রয়েছে।

সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, লুটতরাজ প্রতিহত করতে কাজ করছে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। যেকোনো নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড, হানাহানি এবং প্রাণনাশের হুমকির সম্মুখীন হলে নিকটস্থ সেনাবাহিনী ক্যাম্পে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে মিথ্যা তথ্য প্রদান ও গুজবে আতঙ্কিত হয়ে সেনাবাহিনীকে বিভ্রান্ত করা থেকে বিরত থাকতেও আহ্বান জানানো হয়।