দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারতের হস্তক্ষেপ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিক। গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে এ দাবি জানিয়েছেন তারা। এ পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিক হলেন বাংলাদেশের নারীবাদী সংগঠন নারীপক্ষের সদস্য এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ফিরদৌস আজিম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিসের নির্বাহী পরিচালক মঞ্জুর হাসান, নেপালের লেখক এবং ‘হিমাল সাউথ এশিয়ান’ সাময়িকীর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক কনক মানি দীক্ষিত, নেপালের ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশনের সাবেক কমিশনার সুশীল পিয়াকুরেল এবং শ্রীলঙ্কার সাংবাদিক ও সমাজকর্মী লক্ষ্মণ গুনাসেকারা। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক পরিবর্তিত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বিবৃতিটি দেওয়া হয়েছে। বিবৃতিতে বলা, কয়েক দশক ধরে ভারতের রাজনৈতিক, আমলাতান্ত্রিক ও গোয়েন্দা বিভাগের হস্তক্ষেপ বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও নেপালে সীমাহীন রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় ভূমিকা রেখেছে এবং তা কর্তৃত্ববাদী শাসনকে ক্ষমতাবান করেছে। ভারতের হস্তক্ষেপ প্রতিবেশী দেশগুলোর গণতন্ত্র দুর্বল করে দিচ্ছে। এতে দেশগুলোর আর্থসামাজিক অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকতে ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ওই পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিক। এই পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিক বিবৃতিতে বলেন, ভারতের এ ধরনের হস্তক্ষেপ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ‘পঞ্চশীল নীতির’ সঙ্গে সাংঘর্ষিক। একসময় ভারতই এ নীতির পক্ষে প্রচার চালিয়েছিল। এ ছাড়া এ ধরনের আচরণ ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকারের বহুল প্রচারিত ‘নেইবারহুড ফার্স্ট’ নীতিকেও অস্বীকার করে। অথচ গোটা দক্ষিণ এশিয়াকে রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ অবস্থায় দেখাটা ভারতের নিজস্ব স্বার্থের পক্ষেই সহায়ক। এটি ভারতের নিজস্ব অর্থনীতির জন্য লাভজনক এবং তা দেশটির আন্তর্জাতিক অবস্থানকে উন্নত করবে। বিবৃতিতে বলা হয়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত যে সহযোগিতা করেছে, তার জন্য দেশটির প্রতি বাংলাদেশের নাগরিকেরা কৃতজ্ঞ। তবে এর পরের কয়েক দশকে নিজেদের উদ্দেশ্য পূরণের স্বার্থে ঢাকার রাজনীতিকে পরিচালিত করতে চেয়েছে নয়াদিল্লি। এর মধ্যে আছে উজানে নদীর পানি সরিয়ে নেওয়া, বাংলাদেশের ভূখণ্ড দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বে প্রবেশাধিকার এবং বাংলাদেশকে ভারতীয় পণ্যের একটি বড় বাজার হিসেবে ব্যবহার করা। দেড় দশক ধরে নয়াদিল্লি বাংলাদেশে শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন জুগিয়ে গেছে এবং বিনিময়ে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা পেয়েছে। বিবৃতিতে শ্রীলঙ্কার প্রসঙ্গে বলা হয়, ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে ভারতীয় শান্তিরক্ষী বাহিনী (আইপিকেএফ) মোতায়েনের মধ্য দিয়ে শ্রীলঙ্কায় ব্যাপকভাবে হস্তক্ষেপ শুরু করে ভারত। তখন থেকে শ্রীলঙ্কাকে বারবারই নিজেদের রাজনীতিতে ভারতের হস্তক্ষেপ মোকাবিলা করতে হয়েছে।