শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার রামভদ্রপুর ইউনিয়নের মহিষকান্দি গ্রামের কৃষক মো. গোলাম হোসেন বাবুল সমন্বিত কৃষি খামার করে কৃষি উদ্যোক্ত হিসেবে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ দেখাচ্ছেন। ২০১৫ সালে তিনি তিন একর জমির উপর থাই পেয়ারা দিয়ে কৃষি খামারের যাত্রা শুরু করেন। পরবর্তীতে কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতায় মাটির উপযোগিতা অনুযায়ী ফল ফসলের সাথে মৌসুমভিত্তিক সাথী ফসল হিসেবে বিভিন্ন সবজি আবাদ করেন। তার খামারের পরিধি এখন ৮ একরে বিস্তৃত। বছরে সব খরচ বাদ দিয়ে তার আয় হয় ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা। খামার করে শুধু তিনি নিজেই স্বাবলম্বী হননি কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। নিরাপদ ফল ও সবজি কিনতে পাইকার ছাড়াও সাধারণ ক্রেতারা এখন খামারে ভিড় জমাচ্ছেন। বাবুলের খামারের সাফল্যের দ্যোতি এখন উপজেলার গণ্ডি পেরিয়ে জেলাব্যাপী বিস্তৃত হচ্ছে।
খামারি মো. গোলাম হোসেন বাবুল বলেন, ২০১৫ সালে জমিতে প্রচলিত এক ফসলের পরিবর্তে তিন একর জমিতে সমন্বিত ফল ফসল আবাদ শুরু করি। প্রথমে থাই পেয়ারার সাথে রঙিন তরমুজ দিয়ে আমার যাত্রা শুরু। প্রথম বছরে উল্লেখযোগ্য সাফল্য না পেলেও দমে না গিয়ে ভেদরগঞ্জ উপজেলা কৃষি বিভাগের সাথে যোগাযোগ করে পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তায় মাটির উপযোগিতা অনুযায়ী উন্নত জাতের উচ্চ ফলনশীন ফল ফসল ও সাথী ফসল হিসেবে বিভিন্ন সবজি আবাদে মনোযোগ দেই। খামারের পরিধি এখন ৮ একরে বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে প্রয়োজনে আমার এখানে এখন ৬ জন নিয়মিত শ্রমিক কাজ করেন। আমার খামারে এখন উন্নত জাতের উচ্চ ফলনশীল বারোমাসি আম, মাল্টা, কমলা, লেবু, পেয়ারাসহ অতিরিক্ত ফসল বস্তায় আদা, টমেটো, ব্রোকলি, রঙিন ফুলকপি, বাঁধাকপি, লেটুসপাতা, লালশাক, মরিচ, ছাড়াও মৌসুমি নানা জাতের সবজি চাষ করছি। নিরাপদ ফলমূল ও সবজি কিনতে খামারে শুধু স্থানীয় পাইকাররাই আসছেন না, সাধারণ ক্রেতারাও আসছেন প্রতিদিন। বর্তমানে সব খরচ বাদ দিয়ে খামার থেকে বছরে আমার ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা আয় হচ্ছে। পরিবার নিয়ে এখন আলহামদুলিল্লাহ বেশ সুখে আছি। আমার সাফল্য দেখে এখন অনেকেই পরামর্শ নিতে আসছেন।
ভেদরগঞ্জ উপজেলার আদর্শনগর ইউনিয়নের রূপনগর গ্রামের উদ্যোক্তা কৃষক সোহেল সরকার বলেন, বাবুল ভাইয়ের সমন্বিত খামার দেখে ২০১৭ সালে উপজেলা কৃষি বিভাগের সার্বিক সহায়তায় আমি দুই একর জমির উপর একটি সমন্বিত খামার গড়ে তুলি। বর্তমানে আমার সমন্বিত খামার এখন ৬ একরজুড়ে। খামারে ফল ফসল ও শাকসবজির সাথে রয়েছে পুকুর ভরা মাছ। বছরে সব খরচ বাদে আমার ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা আয় হয়। বাবুল ভাইয়ের কৃষি খামার দেখে উপজেলায় ছোট-বড় অন্তত ২০টি কৃষি খামার গড়ে উঠেছে।
স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ বলেন, বাবুলের সমন্বিত কৃষি খামার গড়ে তোলার পর থেকে নিয়মিত পরিদর্শন, পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করে আসছি। এ সমন্বিত কৃষি খামারটি এখন শুধু উপজেলার অনুপ্রেরণা নয়, পুরো জেলার। এখান থেকে ফল ফসল ও সবজি কিনে স্থানীয় পাইকাররা যেমন লাভবান হচ্ছেন তেমনি সচেতন ক্রেতারাও নিরাপদ ফল এবং সবজি কিনতে প্রতিদিন আসছেন। জমি লিজ নিয়ে বেকার যুবকদেরও সমন্বিত কৃষি খামার করে উদ্যোক্তা হিসেবে লাভবান হওয়া সম্ভব।
শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোস্তফা কামাল হোসেন বলেন, আগের প্রচলিত কৃষিকে বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরিত করে উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে আরো লাভজনক করতে কৃষি বিভাগ আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা কৃষকের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন। তারই উৎকৃষ্ট উদাহরণ ভেদরগঞ্জের সমন্বিত কৃষি খামারি মো. গোলাম হোসেন বাবুল। সে এখন জেলার সমন্বিত কৃষি খামারের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সমন্বিত কৃষি খামার কেবল উদ্যোক্তাকেই লাভবান করে না সৃষ্টি করে কর্মসংস্থানেরও। আমরা আশা করছি জেলায় সমন্বিত কৃষি খামার সম্প্রসারণের মাধ্যমে দেশের নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি অর্থনীতিকেও এগিয়ে নিয়ে যাবে।