ছাত্র রাজনীতি
নিষিদ্ধ হলো যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
ছাত্র-জনতার তোপের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র রাজনীতি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। এরইমধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক), চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক), স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট), বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি), বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ এবং দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি)। প্রতিষ্ঠানগুলোর একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডা. শফিকুল আলম চৌধুরীর সই করা এক অফিস আদেশে বলা হয়েছে, কলেজ ক্যাম্পাস, শহীদ ডা. ফজলে রাব্বি ছাত্রাবাস এবং ডা. আলীম চৌধুরী ছাত্রীবাসে সব ধরনের ছাত্র রাজনীতি (ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্রশিবির ও অন্যান্য) স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ থাকবে। ভবিষ্যতে কোনো শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাস ও হোস্টেলে প্রকাশ্যে বা গোপনে পুনরায় ছাত্র রাজনীতি আনয়ন, চর্চা, রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন ও তাতে অন্যদের আহ্বান এবং তাদের সমর্থনমূলক কর্মকাণ্ডে প্রচার-প্রচারণায় সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ক্যাম্পাস ও হোস্টেল থেকে তাৎক্ষণিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়। এছাড়া আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ নিয়ে অন্য পাঁচ ক্যাম্পাসেও অফিস আদেশ দেয়া হয়েছে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সব রকমের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গতকাল রোববার সাধারণ শিক্ষার্থীদের লিখিত দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ৮৫তম (বিশেষ) সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে আজ থেকে সব শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী কোনো রকমের রাজনৈতিক সংগঠন, পেশাজীবী সংগঠন কিংবা কোনো প্রকার অঙ্গ বা ছায়া সংগঠন, লেজুরবৃত্তিক প্যানেল, পরিষদ বা সমিতির সাথে জড়িত থাকতে পারবেন না। অর্থাৎ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সব রকমের রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হলো। খুব শিগগিরই এ আদেশ কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে।
রাঙামাটিতে মেডিকেল কলেজে সব ধরনের ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। গতকাল রোববার দুপুরে মেডিকেল কলেজের একামেডিক কউন্সিলের এক জরুরি সভায় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. প্রীতি প্রসূন বড়ুয়ার স্বাক্ষরিত এক নোটিশে এই তথ্য জানানো হয়।
নোটিশে বলা হয়, সভায় উপস্থিত সব ছাত্র-ছাত্রীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শুধু ছাত্র রাজনীতিই নয়, কলেজ শিক্ষক-কর্মচারীদেরও সব ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া, রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত সব শিক্ষার্থীর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা, কলেজ ক্যাম্পাসে বৈধ শিক্ষার্থী ব্যতীত বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়।
রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. প্রীতি প্রসূন বড়ুয়া জানান, ছাত্রদের আবেদেনর পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি কাউন্সিল সভার আহ্বান করা হয়। সেখানে শিক্ষার্থীদের ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এবং কলেজে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আশা করছি দ্রুতই পরিবেশ স্বাভাকিত হবে, শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে ফিরবে।
দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) সব ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ। গতকাল রোববার হাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধসহ আট দফা দাবি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেন শিক্ষার্থীরা। রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. সাইফুর রহমান বৈঠক শেষে রাজনীতি নিষিদ্ধ করার কথা ঘোষণা করেন। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকেও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে পারবেন না।
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট রাতে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন হাবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম কামরুজ্জামান। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে ক্যাম্পাস থেকে উদ্ধার করে দিনাজপুর শহরে নিয়ে আসে।